নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায় ২০১০ খেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৮ বছরে বজ্রপাতে প্রায় ১৮০০ এর অধিক মানুষ মারা যায়। বজ্রপাতের কারণে চলতি বছর বৈশাখের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আরো শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। তাই বজ্রপাতের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য সরকার পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটেনিং ডিটেক্টিভ সেন্সর বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ঢাকা আবহাওয়া অফিসের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও দেশের সবচাইতে বজ্রপাতপ্রবণ ৭ টি এলাকা- মংমনসিংহ, সিলেট, নওগাঁ, পঞ্চগড়, খুলনা, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামে এই লাইটেনিং ডিটেক্টিভ সেন্সর বসানো হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ প্রদেশ এবং আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল পেয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ। এই ডিটেক্টিভ সেন্সরের মাধ্যমে বজ্রপাতের সুনির্দিষ্ট স্থান ও সময়ের ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে এবং বজ্রপাতের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পর তা তাৎক্ষণিকভাবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের রিয়েল টাইমে পাওয়া যাবে। সেন্সরগুলোতে ধারণ করা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ১০-১৫ মিনিট আগেই বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোর মাত্রা জানানো সম্ভব হবে। ফলে রেডিও টেলিভিশনেও সাথে সাথে তা সম্প্রচার করা সম্ভব হবে। তবে এই সতর্কবার্তা এখন ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে সকলের নিকট পৌঁছানো সম্ভব না হলেও ভবিষ্যতে সরকার তা বিবেচনা করবে।
এছাড়া প্রতিটি সেন্সরের রেঞ্জ ২৫০ কি.মি. এবং প্রতিটি সেন্সর থেকে এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মনিটরিং করা যাবে । ফলে ৮ টি অঞ্চলে স্থাপিত এসব ডিটেক্টিভ সেন্সরের মাধ্যমে দেশের প্রায় সব বজ্রপাত অঞ্চলেই সতর্কবার্তা প্রদান করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞগণ।
বজ্রপাতের ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য এর আগে সরকার দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ তাল গাছের চারা রোপনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। এ লক্ষ্যে তালগাছ উঁচু হওয়ায় তা বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে বলে গবেষণায় জানা যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে সম্প্রতি বজ্রপাত বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে প্রাণহানির আশঙ্কাও বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে। তাই বজ্রপাতকেও একটি দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করে তারই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১০ লাখ তালগাছ রোপনের পর এবার লাইটেনিং ডিটেক্টিভ সেন্সর স্থাপন করায় বজ্রপাতের ক্ষতির হাত থেকে সাধারণ মানুষের রক্ষা পাওয়া সহজ হলেও এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকেও অবশ্যই সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞগণ।