মৌলভীবাজার: উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাহাড়ি ছড়ার বাকে বাকে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ইজারাভুক্ত ও ইজারা ছাড়া এমনকি টিলা খুঁড়েও বালু উত্তোলনের কার্যক্রম চলছে নির্দ্বিধায়। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, প্রতিবেশ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ধলাই নদীর চৈত্রঘাট, মৃত্তিঙ্গা চা বাগান, ভানুগাছ বাজার, পুরাতন ধলাই ব্রীজ এলাকাসহ নদীর একাধিক স্থানে, লাঘাটা নদী এবং চা বাগান ও বস্তির বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত সুনছড়া, পদ্মছড়া, দেওছড়া, জপলাছড়াসহ বেশ কয়েকটি ছড়া থেকে শ্রমিক দিয়ে এবং ড্রিল, ড্রেজার, বোমা মেশিনসহ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন।
বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোনো আইন। ভেঙে ফেলা হচ্ছে ছড়া ও নদীর বাঁধ। ভানুগাছ বাজার এলাকায় বালি উত্তোলনের ফলে দোকানপাট ও বাসাবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জনবসতি, রাস্তা ও সেতুসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রভাবশালী মহল প্রকাশ্যে এবং কিছু কিছু স্থানে গোপনে বালু উত্তোলন করে ট্রাকযোগে স্থানান্তর করছে।
নদী, ছড়া থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বিষয়ে ২০১৩ সালের ১৮ জুন প্রজ্ঞাপন দ্বারা মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত ৫১টি পাহাড়ি ছড়া সিলিকাবালু সম্পৃক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৯টিকে অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০১৬ সালের ৮ মার্চ জনস্বার্থে রিট পিটিশন (রিট পিটিশন নং ২৯৪৮/ ২০১৬) করলে শুনানি শেষে ২১ মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ১৯টি বালুমহালকে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) ও পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইসিসি) ছাড়া পরবর্তী ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। সেই সঙ্গে ইজারাভুক্ত ছড়াসমূহ থেকে সকল প্রকার ড্রিল, ড্রেজার, বোমা মেশিন এবং বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত যান্ত্রিক মেশিনসমূহ অবিলম্বে জব্দ করার জন্য আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের এই নির্দেশনার পরও বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
আদালত অমান্য করেন বালি উত্তোলনের বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ধলাই নদীর দুইটি স্থানে বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। পদ্মছড়াসহ পাহাড়ি ছড়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে তহশিলদারদের পাঠিয়ে তদন্ত করে দেখবেন। তবে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন ও পাহাড়ি ছড়ায় সিলিকা বালু উত্তোলনে আদালতের নিষেধাজ্ঞাসহ সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।