রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দণ্ডনীয়, অনৈতিক ও গোনাহের কাজ

 

নিউজ ডেস্ক: মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে প্রিয়, রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান অতি নিকটে। এটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির মাস। সারা বছরে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জন হয় এ পবিত্র মাসে। পবিত্র এ মাসে আল্লাহ তাআলা প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ-স্বাধীন মুসলিম নর-নারীর ওপর দিনের বেলায় যাবতীয় পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার বিধান ফরজ করেছেন।

রমজান মাসে শুধুমাত্র রোজা পালন, কুরআন তিলাওয়াত, ফরজ ও নফল নামাজ আদায়, জিকির-আজগার করাই ইবাদত-বন্দেগি নয়; বরং রমজানে মাসজুড়ে রোজাদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকাণ্ডে জড়িত বিষয়গুলো ইবাদত-বন্দেগির অন্তর্ভুক্ত। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চলা-ফেরা, কথাবার্তা, চাকরি-বাকরি বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুতেই পবিত্র রমজান মাসে আত্মশুদ্ধির উৎকৃষ্ট সময়। এ কারণেই রমজান মাস যেমনি ইবাদত-বন্দেগির মাস, তেমনি ভেজালমুক্ত হালাল খাদ্যদ্রব্য গ্রহণেরও মাস।

পবিত্র মাস রমজানকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য সরকারের দায়িত্বশীল মহলসহ সব জনগণ তথা ঈমানদার মুসলমানের দৃষ্টি থাকে পবিত্র রমজানের পরিবেশ, দৈনন্দিন জীবনযাপনের ঘটনাপ্রবাহের দিকে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম-সাধনা সুষ্ঠু, সুন্দর ও পবিত্রতার সঙ্গে পালন করতে প্রতিদিনের খাবার-দাবার ও বাজারের দ্রব্যসামগ্রীর সহজলভ্যতা যেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সে বিষয়টি গুরুত্বের সহিত ভাবা একান্ত আবশ্যক।

যেখানে বিশ্বব্যাপী পবিত্র রমজান মাস আসলে মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বেড়ে যায়; ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে, সেখানে আমাদের দেশে রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যদিনের দ্রব্যমূল্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত এমনকি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। যা সব শ্রেণির রোজাদারদের জন্যই অত্যন্ত কষ্টকর।

পবিত্র রমজান মাসে এক শ্রেণির লোক ব্যবসার নামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ কৃত্রিমভাবে কমিয়ে বেশি মুনাফা লাভে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল মেশায়। এসব কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র নিপীড়নমূলক ও অনৈতিক কাজই নয় বরং তা মানুষের অধিকারের ওপর চরম হস্তক্ষেপ এবং অত্যাচার-নির্যাতনের মতো মারাত্মক অপরাধও বটে।

রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমান যেখানে নিজেদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে রোজা পালন ও ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকবে, সেখানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডসহ ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যাঘাত ঘটায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর এ ধরনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি শুধু অনৈতিক নয় বরং মানবতার প্রশ্নেও তা মারাত্মক শত্রুতা।

রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ফলে রোজাদার ঈমানদারদের কষ্ট ও দুর্ভোগ চরমভাবে বেড়ে যায়। বিশেষ করে পেঁয়াজ, মরিচ, ডাল, গরম মসলা, চিনি, ছোলা, শাক-সবজি ও তরি-তরকারি; যেগুলো রমজানে বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়, সেসব দ্রব্যসামগ্রীর দাম ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় রোজাদারের সাহরি ও ইফতার করতে গিয়ে বিশেষ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

কৃত্রিমভাবে রমজানে প্রয়োজনীয় এসব দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি করে রোজাদারদের কষ্ট দেয়ার মধ্যে এক শ্রেণির লোক সুখ খুঁজে পায়। অথচ তারা অনুধাবন করে না যে, রোজাদারদের কষ্ট দেয়া মারাত্মক গোনাহ। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমনকি এ গোনাহ ও অন্যায়ের বিষয়টি তাদের উপলব্ধিতেও আসে না।

তাই সার্বিকভাবে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার লক্ষ্যে রোজাদারের যথাযথ দায়িত্ব পালন, আত্মশুদ্ধি অর্জন ও ইবাদত-বন্দেগিকে নির্বিঘ্ন করতে সব ব্যবসায়ীদের জন্যই এ মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা উপলব্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।

হাদিসের ভাষা অনুযায়ী, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁর নিজ হাতের প্রতিদান লাভের আশায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না করে বরং কমিয়ে আনা এবং বাজার স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল না মেশানোই হবে সব ব্যবসায়ীর একান্ত নৈতিক দায়িত্ব। ব্যবসায়ীরা যখনই তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন তখন প্রত্যেক রোজাদার স্বস্তিতে দ্রব্যমূল্য কিনতে পারবেন এবং তারা সঠিকভাবে রোজা পালন ও আত্মশুদ্ধি অর্জনে কষ্ট ও হয়রানির শিকার হবেন না।

আর ব্যবসায়ীরা যদি তাদের ব্যবসায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, রোজাদারদের পাশে সহনুভূতির দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়াতে পারেন, তবে নিশ্চয় তাদের জন্য থাকবে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দুনিয়ায় রহমত বরকত এবং পরকালের মাগফিরাত ও নাজাতসহ প্রভূত কল্যাণ।

তাই রমজানের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী-ভোক্তা সবাইকে এ ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করতে হবে। অন্তত রমজান মাসকে যেন মানুষ ইবাদত-বন্দেগির উপলক্ষ্য বানাতে পারে; সে বিষয়ে সরকার, ব্যবসায়ী ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টা নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ টিম গঠনের মাধ্যমে দেশব্যাপী বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করা এখন প্রত্যেক নাগরিকের ঈমানি দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *