স্বাগতম হে বৈশাখ | বাংলারদর্পন

সাহিদা সাম্য লীনা >>>

ডিং ডং,অপেন দি ডোর,

কে?

আমি নতুন আলো

কী চাও?

একটা কথা বলব

বল…

আজ ১লা বৈশাখের অনেক শুভেচ্ছা।

“শুভ নববর্ষ”।

আজ বাংলা বছরের প্রথম দিন। স্বাগতম হে, ১৪২৫। বছর যায় বছর আসে। চৈত্র মাসের শেষ দিনটি চলে গেলেই তো বৈশাখের প্রথম দিন। আর বৈশাখের ১লা  তারিখ মানেই নতুন একটি বছরের শুরু।অবশিষ্ট কিছু থাকে বটে,থাকে বৈচিত্র্যও কিছুটা। আমরা পহেলা বৈশাখে নববর্ষের মেলায় যাই। বাঙ্গালীর ঐতিহ্য মতন পোশাক আশাক থেকে শুরু করে খানা পিনা সবই এদিন আমরা উদযাপন করি। একটা প্রচলিত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে স্বাভাবিক আনন্দ অনুভব করি। নববর্ষ উদযাপন আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কর্মকান্ড।মনেপ্রাণে খুশির দোল লাগবেইÑ“বাজেরে বাজে ঢোল আর ঢোল এলোরে পহেলা বৈশাখ ”।

বার মাস আর তের পার্বণের দেশ আমাদের সোনার বাংলাদেশ। প্রতি বাংলা মাসে লেগে আছে কোন না কোন উৎসব। কোন মাসে থাকে আবার একাধিক উৎসব। আধুনিকতায় বৈশাখ এখন নানা ঢং এ বিশেষভাবে বরণ হয়,সমাদৃত হয় সকলের মাঝে। যত দিন যাচ্ছে বৈশাখের আবহ চিত্র ধারণ করছে অন্য রুপে। যত ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছিল তা এখন আবারো ফিরে আসে বৈশাখে। পালনও  হচ্ছে মহাসমারোহে। সে এক অভিনব! সকাল থেকে শুধু সাজ সাজ রব। কেউ ঘরে বসে থাকেনা। জেলায় জেলায় আনন্দ র‌্যালি হয়, হয় উৎসব, অনুষ্ঠান। ফানুষ উড়ানোর এক নতুন রীতিও চালু হয়েছে এখন। বৈশাখের নতুন নতুন গান রচিত হয় । ঢোল ,মিউজিকের তালে তালে নগর বন্দরে মানুষ যেন একঘেঁয়েমী জীবন থেকে বেরিয়ে আসে। নতুন স¦াদ; নতুন পুলক। নারী পুরুষের পোশাকে নানা পরিবর্তন। মনে হাজারও রঙ্গের ঢেউ। আধুনিকায়নে নতুন সংযোজন প্রিন্ট মিডিয়া বিশেষ ক্রোড়পত্র,কবিতা ছড়া,প্রবন্ধ.ফিচার এ ছেয়ে ফেলে যেন গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। সারাদিন অনেকেই এসব মজার তথ্য কথা পড়েও সময় কাটায়। ইলেট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয় নববর্ষের বিশেষ অনুষ্ঠান। এসবের মাঝেই বাঙ্গালী খুঁজে পায় ভিন্ন আস¦াদ,প্রেরণা, আর উদ্দিপনা।

কবি আল মাহমুদের কথায়- সব কিছু কি পাল্টে বদলে গেছে দিন/কোথায় গেল কালবৈশেখী বৃষ্টিতে রঙ্গিন?/ভাঙ্গাগড়ার ঝড়ের পরে নামতো যখন জল/পানির পালা গাইতো চারণ ,জলইতো সম¦ল!

বৈশাখে প্রকৃতিতে রুক্ষতা বেজে উঠে। তীক্ষœ রোদের দাবদাহে প্রানে উত্তাপ দেখা দেয়।গনগনে সূর্য মামা রেগে উঠে অগ্নি মূর্তি হয়ে। মাঠ-ঘাট,খালবিল শুকিয়ে চৌচির। এক ফোঁটাও পানির যেন অভাব। সারা দেশ এক অন্য রুপ ধারণ করে। ফষলের মাঠ নির্বিকার ।     হাহাকার পড়ে যায়  গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। প্রকৃতি দেবতা মনে হয় যেন এক অদৃৃশ্য আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আগুনে সবুজ প্রকৃতি যেন তার রুপ হারিয়ে ফেলে। শিশু-বুড়ো সকলে বৃষ্টির গান ধরে“আয় বৃষ্টি ঝেপে,ধান দেব মেপে/লেবু পাতা করমচা/আয় বৃষ্টি ঝেপে আয়’।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় নববর্ষ উদযাপিত হয়। নানা সংস্কৃতিতে নববর্ষ পালিত হয় নানা ভাবে। ইউরোপে একসময় বসন্তকালে নববর্ষ পালিত হতো। জুলিয়াস সিজার যখন রোমে পহেলা জানুয়ারি পালনের নির্দেশ দেন তখন ইউরোপের অনেক জায়গায় মার্চ মাসে নববর্ষ উদযাপন করতো। চারশো বছরেরও অনেক আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া অন্যান্য দেশে পহেলা জানুয়ারি নববর্ষ হিসেবে পালন করা হতো। সোভিয়েত ইউনিয়ন উনিশ শতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পহেলা জানুয়ারিকে স্বীকৃতি প্রদান করে নববর্ষের দিন বলে। চীনে সরকারীভাবে পহেলা জানুয়ারি থেকে নতুন বছর শুরু হলেও লোক সমাজে চৈনিক চান্দ্র নববর্ষের অনুষ্ঠান পালিত হয়।‘উনান দান’অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম ভোর নববর্ষের আনন্দের ধারাকে বহু রঙে উদ্ভাসিত করে।

বাংলাদেশে প্রথম নববর্ষের সূচনা করেন মুগল স¤্রাট আকবর ১৫৫৬ সালের ১১ এপ্রিল। মুঘল সা¤্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হবার পর এদেশের নাম হয় সূবা বাংলা। স¤্রাট আকবর নবরতœদের বললেন তিনি চান বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকে বছরের হিসেব গণনা যেন শুরু হয়। এর আগে হিজরি চান্দ্র বছরের নিয়মানুযায়ি বছরের হিসেব হতো। হিজরি ৯৬৩ সাল থেকে বাংলা সালের উৎপত্তি। বাংলা সন ছিল ফসলের সন। বাঙ্গালী জীবনের সাথে বৈশাখ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে মিশে আছে। আমাদের সং¯কৃতিতে যতই বিদেশী হাওয়া ভাসুক,তথাপিও আমরা নিজস্ব মা,মাটি,দেশ,সংস্কৃতিকে নাড়ী ছেঁড়া ধনের মত আগলে রাখব এ আমাদের হোক অঙ্গিকার। জয় হোক শতবর্ষী ১৪২৫।     স্বাগতম হে বৈশাখ।

 

 

 

 

লেখক -সম্পাদক আঁচল,ফেনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *