ওমর ফারুক ঈসান .ফটিকছড়ি :
চারদিকে পাহাড়, জঙ্গল সবুজের সমারোহ। এই পাহাড় জঙ্গল ভেদ করে তৈরী হয়েছে পাহাড়ি আকাঁবাকা পথ। এই পথের ফাঁক গলে দল বেঁধে চলেছে শিশুরা। পরনে আকাশি-সবুজ রঙ্গের বিদ্যালয়ের পোশাক। সবার হাতে বই-খাতা। হই-হুল্লোড় করে ছুটছে তারা বিদ্যালয়ের দিকে। পাহাড় জঙ্গল ঘেরা একটি টিনের ছানির ঘর। একটি পাঠ্যকক্ষ। এই কক্ষেই শিক্ষা নিতে আসা আদিবাসী ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে শিক্ষক, চিকিৎসক হওয়ার বা বড় চাকরি করার। স্বপ্ন পুঁজি করেই প্রতিদিন পাহাড়ি পথ হেঁটে পাহাড়ে বসবাসরত ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিশুরা প্রতিদিন শিক্ষাগ্রহন করতে আসে পেলারখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানাধীন পেলারখিল গ্রাম।এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পেলারখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৩ সালে জুলাইয়ে জাতীয়করণ হয়। বর্তমানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র ৩ জন। আশপাশের পাহাড়ে বসবাসকারী প্রতিটি শিশুরা এ স্কুলে পড়তে আসে। অনেক কষ্ট করে হেঁটে এলেও তাদের মাঝে নেই কষ্টের কোন ছাপ। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার অদম্য ইচ্ছা তাদের। সকাল বেলা অন্যান্য স্কুলের মতো লাইনে দাড়িয়ে ওরাও গায় দেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’।
সম্ভাবনায় স্কুলটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। নেই অবকাঠামোগত কোন ক্লাস রুম, আছে পাহাড় জঙ্গল ঘেরা একটি টিনের ছানির ঘর। একটি পাঠ্যকক্ষ। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, ৫টি পদের বিপরীতে ৪জন তম্মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেন। বাকি তিন জনের কারো সিএনএড বা ডিপিএড প্রশিক্ষণ নেই।গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে উপবৃত্তি থেকে, ফলে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে অনেক সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী। পাহাড়ি অঞ্চলের স্কুল হওয়ায় ডিজিটালের ছোঁয়া লাগেনি এখনো। নেই খেলার মাঠ। স্কুলে আসার রাস্তাটি খুব অনুন্নত, বর্ষাকালে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করাও বিপদজনক।
কথা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আমির হোসেন এর সাথে। তিনি জানান, এই এলাকার একমাত্র স্কুল এটি।
শহরের স্কুলের মতো ওদের আলাদা আলাদাভাবে কক্ষ নেই। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য দুই ভাগে পাঠদান করা হয়। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১ম ও ২য় শ্রেণীর এবং বেলা ১২টা থেকে দুপুর সোয়া ৪টা পর্যন্ত ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হয়। স্কুলের মোট শিক্ষার্থী বর্তমানে ১৫০+জন। এলাকার এই শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে যদি স্কুলটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয় তাহলে শিক্ষার মান আরো বাড়তো।