বাসস :
বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের ভাষা, নিজেদের শিল্প-সাহিত্যকে যদি মর্যাদা দিতে না পারি, আর তার উৎকর্ষ সাধন করতে না পারি, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব দরবারে আরও উন্নত হতে পারব না।”
এ অনুষ্ঠানে ২০১৭ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। উদ্বোধনী অনষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী বইমেলা ঘুরে দেখেন।
কবিতায় মোহাম্মদ সাদিক ও মারুফুল ইসলাম, কথাসাহিত্যে মামুন হোসাইন, প্রবন্ধে অধ্যাপক মাহবুবুল হক, গবেষণায় অধ্যাপক রফিকউল্লাহ্ খান, অনুবাদে আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে কামরুল ইসলাম ভুঁইয়া ও সুরমা জাহিদ, ভ্রমণকাহিনীতে শাকুর মজিদ, নাটকে মলয় ভৌমিক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে মোশতাক আহমেদ এবং শিশুসাহিত্যে ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্ত এবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “বইমেলা শুধু বই কেনা বেচা না… বই আকর্ষণ করে। আমাদের সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রটা প্রসারিত করে, অজানাকে জানার সুযোগ করে দেয়। কাজেই এই বই মেলা আমাদের প্রাণের মেলা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশে বই মেলায় নবীন লেখকদের বই প্রকাশের সুযোগ হয়। সেই সঙ্গে তৈরি হয় পাঠক।
“এই মেলা জ্ঞানচর্চার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। এই ভাষার চর্চা আরও বৃদ্ধি পাক; সেটাই আমরা চাই।”
দেশের সংস্কৃতিকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে আমরা মর্যাদা পেয়েছি, স্বীকৃতি পেয়েছি। এই ধারাবাহিকতা আমাদের বজায় রাখতে হবে।
“মনে রাখতে হবে, অশুভ পথে, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা না সংস্কৃতির চর্চা করতে জানে, না ভাষার চর্চা করতে জানে। এদের মানসিকতা একটু ভিন্ন।”
বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ও শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের শিল্প সংস্কৃতি কেবল বাংলাদেশের সীমানায় না, বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের লেখক এগনিস মিডোসম, ক্যামেরুনের ড. জয়েস অ্যাসউন টেনটেন, মিশরের ইব্রাহিম এলমাসরি ও সুইডেনের অরনে জনসন।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের ভূমিকার প্রশংসা করে এগনিস মিডোসম বলেন, “বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়েছে। আমি সত্যিই লজ্জিত। আমরা আমাদের দেশে একজন শরণার্থীকে জায়গা দিতে গিয়ে চিন্তা করি…।”
ইরাক যুদ্ধ ও আরব বসন্তের ঘটনাপ্রবাহ স্মরণ করে তার সঙ্গে মিয়ানমারের পরিস্থিতি মিলিয়ে দেখে বর্তমান সঙ্কটে রোহিঙ্গাদের স্থান দেওয়ায় বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান ইব্রাহিম এলমাসরি।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব মো. ইব্রাহিম হোসেন খান এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক শামসুজ্জামান খান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
পরে অতিথি হিসেবে আসা বিদেশি লেখকদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলা ঘুরে দেখন।
তিনি বাংলা একাডেমি এবং যুবলীগের যুব জাগরণের স্টল ঘুরে এটুআই-এর স্টলে যান এবং সেখানে কিশোর বাতায়ন প্ল্যাটফর্ম ও একসেসিবল ডিকশনারির উদ্বোধন করেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের স্টল ঘুরে দেখার সময় চার অতিথিকে ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ উপহার দেন শেখ হাসিনা।
রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ মেলার পরিসর এবার আরও বেড়েছে। বেড়েছে বইয়ের স্টল নিয়ে বসা প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা।
প্রায় পাঁচ লাখ বর্গফুট এলাকায় ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৫ হাজার ৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাংলা একাডেমিসহ মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পুরো ফেব্রুয়ারি মাস বইয়ের এ উৎসবে বই বিক্রি করবে ২৫ শতাংশ ছাড়ে।
এবারও মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রয়েছে শিশুচত্বর। ওই কর্নারকে সাজানো হয়েছে শিশুকিশোরদের জন্য বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায়।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হবে।