ফেনী হাইওয়েতে পুলিশের গণহারে চাঁদাবাজি ★ বাংলারদর্পন 

 

ফেনী প্রতিনিধি :

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর দুলামিঞা, লালপোল, শুভপুর ব্রিজ, লেমুয়া ও ধমঘাট ব্রিজসহ কয়েকটি স্থানে চলছে  হাইওয়ে পুলিশের গণহারে  চাঁদাবাজি। মালবাহী ট্রাক ও মাইক্রোবাস এবং সিএনজি অটোরিকশা টার্গেট করে চলছে এ বাণিজ্য। তবে প্রকাশ্যে এ বাণিজ্য চললেও মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের ওসি আব্দুল আওয়াল কিছুই জানেন না।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের একাধিক টিম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওই সব স্থানে অবস্থান নিয়ে গাড়ি চেকিংয়ের নামে মালবাহী গাড়ি ও মাইক্রোবাস থামিয়ে টাকা আদায় করছে। টাকা না দিলে দেওয়া হচ্ছে মামলা। প্রতি গাড়িতে ৫শ’ থেকে দুই হাজার পর্যন্ত টাকা নিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ।

মহাসড়কের স্টার লাইন পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন পান দোকানি তাজ উদ্দিনসহ একাধিক দোকানি জানান, ৯ জানুয়ারি বিকালে যশোর থেকে আসা ফেনীমুখী একটি সবজিবাহী ট্রাককে পাম্প সংলগ্ন দুলামিঞা নামক স্থানে চেকিংয়ের নামে আটকিয়ে রাখে হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম। টাকা আদায়ের বিষয়টি স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালে পুলিশ এক ঘণ্টা পর গাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের পোশাকে কোনও নেমপ্লেট ছিল না।

কুমিল্লা নিমসার থেকে সবজি ক্রয় করে ফেনী ও নোয়াখালীত ট্রাকযোগে নিয়ে নিয়মিত ব্যবসা করেন শাহজালাল সবুজ, নিজামুল করিম ও তহিদুল আলম। তারা  বলেন, ‘মহাসড়কের স্টার লাইন পাম্প সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত ফেনী হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ মালামাল ও কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে কাঁচামাল ও বিভিন্ন পণ্য বোঝাই ট্রাক, পিকআপ থেকে ২শ’ থেকে শুরু করে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে।

এ পরিস্থিতির নিয়মিত শিকার হচ্ছেন ওই তিন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি। অভিযোগ করে হয়রানির শিকার হতে হবে এমন আশংকার কথা জানিয়ে তারা  বলেন, ‘সাংবাদিকদের রিপোর্টের কারণে পুলিশের হয়রানি আরও বেড়ে যায়। নীরবে সহ্য করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।’

অবৈধ মোটরসাইকেল, নসিমন, মাইক্রোবাস থেকে ২শ’ থেকে শুরু করে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে পুলিশ। পরিবহন চালকরা চাহিদামাফিক উৎকোচ দিতে অপারগতা জানালে ঠুকে দেওয়া হয় বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা।

এদিকে কুমিল্লা এলাকার বাসিন্দা মাইক্রোবাস চালক সহিদুল হকের অভিযোগ, তার মাইক্রোবাসটিকে ৫ ডিসেম্বর মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশ মামলা দেয়। এসময় গাড়ির ডকুমেন্টগুলো জব্দ রাখে। মামলাটিতে নিষ্পত্তির তারিখ দেওয়া হয় ১৫ ডিসেম্বর।

৯ জানুয়ারি সকালে মুহুরীগঞ্জ থানার এক এসআইয়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম একই মাইক্রোবাসটিকে আটকিয়ে চালক থেকে ২ হাজার টাকা দাবি করেন। চালক দুই হাজার টাকা দিতে না পারায় একপর্যায়ে তা কমে ৫শ’ টাকায় নেমে আসে। তাও দিতে না পারায় আবারও দ্রুতগতির অভিযোগ দিয়ে মামলা দেয় মাইক্রোবাসটিকে। চালক শহীদ বলেন, ‘দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তার গাড়ির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’

চট্টগামে পেপার মিলসে উপকূলীয় এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের গাছ ট্রাকে সরবরাহ করেন নোয়াখালীর রমজান সওদাগারসহ তার দু’পার্টনার। রমজান আলী ও তার ব্যবসায়িক পার্টনাররা  জানান, নোয়াখালী থেকে ট্রাকে গাছ নিয়ে চট্টগাম যাওযার পথে সড়ক-মহাসড়কের ফেনীর অংশের চারটি স্থানে নির্ধারিত অংকে টাকা দিতে হয় পুলিশকে। নোয়াখালী-ফেনী সড়কের দাগনভূঞাতে তিনশ’ টাকা, মহাসড়কের মহিপালে পাঁচশ’ টাকা ও মুহুরীগঞ্জ এলাকায় তিনশ’ টাকা পুলিশকে দিতে হয়। পুলিশ বেসরকারি ব্যক্তির মাধ্যমে এ টাকা আদায় করে।

রমজান আলী আরও বলেন, ‘অভিযোগ বা প্রতিবাদ করার পর পথে পথে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়। ফলে পুলিশের চাঁদাবাজি নীরবে হজম করতে হয়।’

মহিপাল হাইওয়ে থানার পুলিশের ওসি আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘চালকদের কথা মিথ্যাও হতে পারে। তার জানা মতে মহসড়কে পুলিশের মাধ্যমে চাঁদাবাজির কোনও ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

সুত্র -বাংলা ট্রিবিউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *