পদ্মায় এবার রেকর্ড পানিপ্রবাহ : গঙ্গা চুক্তি কার্যকরের ২১ বছর- বাংলারদর্পন

 

ডেস্ক রিপোর্ট :

ঐতিহাসিক গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি কার্যকরের ২০ বছরের মাথায় এবারই প্রথম বেশি পানি পাচ্ছে বাংলাদেশ। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, টানা দুই দশক বাংলাদেশ পদ্মা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার কিউসেকের বেশি পানি পাচ্ছে।

এ খবর এমন সময় এলো, যখন আজ ১ জানুয়ারি থেকে গঙ্গা চুক্তি কার্যকরের ২১তম বর্ষ শুরু হচ্ছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৬ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে বাংলাদেশ কখনও ন্যায্য হিস্যা পায়নি। পানি না পাওয়ায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ পাম্প বন্ধ রাখতে হয়েছে। পদ্মার পশ্চিমপাড়, ভেড়ামারাসহ আশপাশের এলাকার জলবায়ু ও পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। তবে এবার পানিপ্রবাহ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি বলে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগ জানায়, চুক্তি অনুযায়ী প্রথম মাসের প্রথম সাইকেলে (১-১০ জানুয়ারি) গড়ে প্রতিদিন ৬৭ হাজার ৬৫০ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। গতকাল রোববার সেই পানির প্রবাহ ছিল প্রায় ৭০ হাজার কিউসেকের কাছাকাছি। তবে এটা কতদিন চলবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ পানি বিশেষজ্ঞ দল ভারতের ফারাক্কা ও বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গঙ্গার (বাংলাদেশে নাম পদ্মা) পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। এবারের প্রথম সাইকেলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতীয় জল ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের জলকমিশনের উপপরিচালক মনোহর লাল গৌড় এবং সহকারী পরিচালক কৈলাস কে লক্ষ্মী। বাংলাদেশের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম জহুরুল হক। বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে

চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণের জন্য পৌঁছেছেন বলে হাইড্রোলজি বিভাগ জানায়।

১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়। সেদিন ভারতের হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেব গৌড়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ দেশের পক্ষে ৩০ বছর মেয়াদি পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পানি চুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো বছর বাংলাদেশ তার নায্য হিস্যা পায়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা নদী বেষ্টিত পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, নওঁগা ও মেহেরপুর জেলার অন্তত ২ কোটি মানুষ ফারাক্কার বাঁধের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, পানাসি প্রকল্প, বরেন্দ্র

প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের হাজার হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে পদ্মায় পানি নেই। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে ১২টি পিলারই শুকনো চরে দণ্ডায়মান।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের বাদাম ব্রিক্রেতা আবু সাইদ বলেন, ১২ বছর ধরে তিনি বাদাম বিক্রি করছেন। এতদিন ডিসেম্বর মাস থেকেই নদী শুকাতে শুরু করত। ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে নদীতে পানি থাকতই না। পিলারগুলো থাকত শুকনায়। এবারের পানিপ্রবাহ বেশি বলে তিনি জানান। তার কথার সত্যতা মেলে ভেড়ামারা পাউবোর গ্রেড রিডার আবদুল হামিদের তথ্যে। স্কেল দিয়ে পানি পরিমাপ শেষে সমকালকে তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে তিনি পানি মাপছেন। এবার পানি বেশি আছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম জহুরুল হক বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রথম মাসের প্রথম সাইকেলে গড়ে প্রতিদিন ৬৭ হাজার ৬৫০ পানি পাওয়া কথা। তবে এবার এই সময়ে প্রবাহ একটু বেশি আছে। তিনি আরও জানান, ভারতের বহু এলাকায় এবার শুস্ক মৌসুমে বেশ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে পানিপ্রবাহ বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ পানির প্রবাহ অনেক কমে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *