২০১৭ সালের উন্নয়ন সাফল্যের সেরা সাত – বাংলারদর্পন

ডেস্ক রিপোর্ট :

জানুয়ারি ১, ২০১৮ |

ঢাকা: ২০১৭ সালটিকে ভাবতে গেলে একটি দৃশ্য সবার আগে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দিনটি ৩০ সেপ্টেম্বর। রূপালী বর্ণের বিশালাকায় একটি ক্রেন সদ্য শীতের শান্ত নদীর বুক চিরে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। ক্রেনের কপ্পায় লটকে আছে সমধিক বিশালাকায় একটি ধূসর স্প্যান। যার ওজন ৩ হাজার ২০০ টন। ৩ হাজার ৭০০ টনের ক্রেনটি তার ক্ষমতার প্রায় সবটুকু মাথায় তুলে নিয়ে এগুচ্ছে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির মাঝ বরাবর। এরপর ক্রেন থেকে নামল স্প্যান। ঝনঝন, ঠনঠন। লোহালক্কর, নাট-বোল্টের শব্দ। ধীরে ধীরে বসে গেলো ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি স্প্যান। দুটি খুঁটি সংযুক্ত হলো। কিন্তু তা শুধুই দুটি খুঁটির সংযোগ নয়, এ ছিলো এক স্বপ্নের বাস্তব রূপ। এক গৌরবের একটি আস্থার প্রতীকের দৃশ্যমানতা। এই পদ্মাসেতু নির্মিত হচ্ছে আমাদের নিজেদেরই অর্থায়নে। খবর হয়েছে- গণভবন থেকে টেলিভিশনে সে দৃশ্য যখন দেখছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল আনন্দাশ্রু।

মনে পড়ে ‘পরমানু যুগে বাংলাদেশ’ শিরোনামের খবরটির কথাও। শুনতেই একটা উন্নত বাংলাদেশের রূপ ভেসে ওঠে। সারা বিশ্বে এগিয়ে যাওয়ার মূল চালিকাশক্তি হিসেবেই ভাবা হয় পরমানু শক্তিকে। দিনটি ছিলো ২৯ নভেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন গিয়েছিলেন পাবনার ইশ্বরদীর রূপপুরে। সেখানে তিনি বাংলাদেশে প্রথম পরমানু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পারমানবিক চুল্লি নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করলেন। পরমানু শক্তিকে এগিয়ে চলার শক্তির আধার হিসেবে মেনে ১৯৯৬ সালে যে প্রক্রিয়া শেখ হাসিনা নিজে শুরু করেছিলেন তা ২০১৭ সালে এসে নিজের হাতেই বাস্তব রূপ দিতে শুরু করেন। পরমানু একটি শক্তি। আর এই শক্তি উন্নয়নের সিঁড়ি। যে সিঁড়ি বেয়েই ২০৪১ সালে উন্নত দেশের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, সেটাই প্রত্যাশা।

রাজধানীর যানজট নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন, কিন্তু এই যানজটের স্থবিরতায় নিহিত রয়েছে এগিয়ে চলার চিহ্ন। প্রতিটি জটে বসে গাড়ির যে হর্ন বাজে তা আসলে দ্রুত কাজে যাওয়ার তাগীদ। আর এত জট তার কারণই হচ্ছে এত মানুষ সড়কে। আর তারা যাচ্ছে কোনও না কোনও কাজে। এখন এই মানুষগুলোকে দ্রুত কাজে পৌঁছে দিতে পারলে তাদের অর্থনৈতিক দক্ষতা ও অবদান আরও বাড়বে। সে লক্ষ্যেই রাজধানীতে বাড়ছে একের পর এক উড়াল সড়ক।

রাজধানীতে ২০১৭’য় আমরা পেয়েছি আরও একটি উড়াল সড়ক। এ বছরের ২৬ অক্টোবর পুরোপুরি খুলে দেয়া হয় রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চার লেনের এ ফ্লাইওভারে ১৫ স্থানে উঠানামার ব্যবস্থা রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার। তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং শান্তিনগর মোড় কানেক্ট করেছে এই উড়াল সড়ক। এটি রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। প্রতিটি পিলার পাইলের গভীরতা প্রায় ৪০ মিটার।

জাতীয় গ্রিডে সৌরবিদ্যুৎ… এমন একটি খবর যে কেউকে উৎসাহিত করবে। গত ১০ ডিসেম্বর সে ঘটনাটিই ঘটলো। এদিন একযোগে চারটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মধ্যে দুটি কেন্দ্রই ছিলো সৌরশক্তির বিদ্যুৎ উৎপাদনের। একটি সুনামগঞ্জের শাল্লায়, অপরটি জামালপুরের শরিষাবাড়িতে। ওই দিন আরও একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। দেশের ১০টি উপজেলাকে সেদিন শতভাগ বিদ্যুতায়িত বলেও ঘোষণা করা হয়। উপজেলাগুলো ছিল- ফরিদপুর সদর, রাজৌর, নওগাঁ সদর, কামারখন্দ, আখাউড়া, ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর, শালিখা, মেহেরপুর সদর, মদন ও বেলাবো। বিদ্যুতের যেন কোনো অপচয় না হয়, সেদিন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সে আহ্বানই জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

সৌরশক্তির ব্যবহারের আরেকটি খবরও ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। দিনটি ছিলো ১৬ ফেব্রুয়ারি। সেদিন দেশের প্রথম সৌর খাদ্যগুদামটি কাজ শুরু করে। সৌরশক্তির সাহায্যে পরিচালিত এ খাদ্যগুদামে সারা বছর খাদ্যশস্য মজুত করা সম্ভব। আধুনিক শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সাইলোটি খাদ্যশস্য সারা বছর একটি নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে। ফলে খাদ্যগুণ থাকে অটুট। ২০২১ সাল নাগাদ দেশ শতভাগ খাদ্য মজুতের সক্ষমতা অর্জন করবে বলে সেদিন আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তারিখটি ৬ মে। সেদিন মিডিয়ার দৃষ্টি কাড়ে একটি দৃশ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে সমুদ্রের বালুকাবেলায় খালি পায়ে হাঁটছেন। সাগরের মৃদু মৃদু ঢেউ এসে তার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। অনলাইনের হোমপেজ আর টেলিভিশনের স্ক্রিন জুড়ে সেদিন আর খবরের কাগজের পাতা জুড়ে পরের দিন ওই ছবির প্রাধান্য ছিলো।

তবে দিনটিতে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছিলেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সে সড়কটি ইট, সিমেন্ট, আর লোহা দিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি টেট্রাপড ব্যবহার করে নির্মিত। সমুদ্রের রুদ্র রূপও এই সড়কের ক্ষতি করতে পারবে না। এই সড়ক কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করেছে। আর পর্যটন শিল্পকে দিয়েছে নতুন আঙ্গিক। এতে ওই এলাকার জীবন যাত্রার মান বাড়ছে, কর্মসংস্থান, শিক্ষার হার বাড়ছে নিশ্চিতভাবেই।

সাবমেরিন ক্যাবল কথাটি সামনে এলেই একটি কথা স্মরণ পড়ে যায়, যখন প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল নিয়ে কথা উঠলো আর দেশকে তা বিনামূল্যে দেওয়ার প্রস্তাব ছিলো তখন তা প্রত্যাখ্যান করেছিল বিএনপি সরকার। সে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকের কথা। পরে এর গুরুত্ব অনুধাবন করে অনেক অর্থ ব্যয় করে শেখ হাসিনার সরকারকে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সাবমেরিন ক্যাবলের গুরুত্ব ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রত্যয়ী সরকার ভাল করেই বুঝতে পারে। আর সে কারণে দেশের ভেতর দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটিও টানা হলো। যা ঘটলো এ বছরেই। গত ১০ সেপ্টেম্বর বহুল প্রতিক্ষিত এই দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার ল্যান্ডিং স্টেশন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়।

একটি নতুন একটি বছর যখন আসে নতুন সম্ভাবনার দিকগুলোই মনের গভীরে ভীর করতে থাকে। আমরা স্পষ্ট করে দেখতে পাচ্ছি দেশ এগুচ্ছে। প্রবৃদ্ধিতে, অবকাঠামোয়, উৎপাদনে। সবচেয়ে অগ্রগতি মানবসম্পদে। একটি সমাজের মানুষগুলো যখন কোনও না কোনও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততায় থাকে তখন তার অগ্রগতি অনিবার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *