ঝিনাইদহে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল ও ‘ঢ্যাপ’ – বাংলারদর্পন

 

মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, ঝিনাইদহ :

এক সময় এখানকার নদ-নদী, খাল-বিলে অজস্র শাপলা ফুল দেখা যেত। লাল কিংবা সাদা শাপলা ফুল দেখে মুগ্ধ হন না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন।

কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। আর তার সাথে সাথে বিপন্নের পথে জলাভূমির ফল ‘ঢ্যাপ’। শাপলার ফলকেই ‘ঢ্যাপ’ বলা হয়। কিছু কিছু আঞ্চলিক নাম ‘ভেট’ বলা হয়।

এক সময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ শাপলা ফুলের ডাঁটা তরকারি হিসেবে খেতেন। শুধু তাই নয়, এই ‘ঢ্যাপ’ আমাশয়, বদহজম এবং রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য বেশ কার্যকরী বলেও প্রচলিত রয়েছে গ্রামে। কিন্তু ‘শাপলা ফল’ বা ‘ঢ্যাপ’ এখন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ।

মাঝে-মধ্যে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামের বাজারগুলোতে ‘ঢ্যাপ’ বিক্রি করতে এখনও দেখা যায়। মহেশপুর উপজেলার এসবিকে ইউনিয়নের খালিশপুর বাজারে খন্ডকালীন ঢ্যাপ বিক্রেতাদের একজন নজরুল ইসলাম।

তিনি উপজেলার এসবিকে ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি জানান, কপোতাক্ষ নদ সহ এই ইউনিয়নে কিছু খাল ও বিলে এখনও স্বল্প পরিসরে শাপলা হয়। সেখান থেকেই তিনি শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ সংগ্রহ করেন। এক হালি বা ৪টি ঢ্যাপের মূল্য ১০-১৪ টাকা।

জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলায় এক সময় অসংখ্য খাল-বিল ছিল। এসব খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল ফুটত। এতে পাওয়া যেত প্রচুর পরিমাণে ঢ্যাপ। কিন্তু ক্রমাগত এগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।  তার সাথে সাথেও হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ।

শাপলার ফল বা ঢ্যাপ দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খই ভাজা হয়। যেটি গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে ‘ঢ্যাপের খই’ নামে পরিচিত। এই ঢ্যাপের মধ্যে অসংখ্য বীজদানা থাকে। এসব বীজদানা রোদে শুকিয়ে চাল তৈরি করা হয়। ঢ্যাপের পুষ্টিকর চাল থেকে তৈরি করা খই ও নাড়ু অত্যন্ত সুস্বাদু।

নদ-নদী, খাল-বিল ও জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংসই এ সুস্বাদু ঢ্যাপ বিলুপ্তি হচ্ছে বলে মনে করেন এলাকার সচেতন ব্যাক্তিবর্গ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *