‘রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকবে’ – শেখ হাসিনা

 

বাংলারদর্পন  : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকবে। কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তা বিধান করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মাতীরের রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পারমাণবিক চুল্লির জন্য কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাশিয়ার পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে আমি যখন কথা বলি, প্রথমেই বলেছিলাম বর্জ্যটা নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশ ঘনবসতির দেশ, বর্জ্য এখানে রাখা সম্ভব না। তারা বর্জ্য নিয়ে যেতে রাজি হয়। এ বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে ১-২-৩ স্তরগুলোতে যারা থাকবেন, সেসব বাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমালোচনাকারীদের ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাস একটু কম। আর কারো কারো মধ্যে পরশ্রীকাতরতাও রয়েছে। আমরা কিভাবে, কী করে যাচ্ছি, আসলে তারা সেটা গভীরভাবে খতিয়ে দেখেন না। তাদের ধারণা অবাস্তব। আমি বলতে চাই, কারো চেয়ে আমার দেশপ্রেম কম নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে বাংলাদেশকে বলা হতো গরিবের দেশ। কিন্তু আমরা সেই অবস্থার পরিবর্তন এনেছি। জাতির পিতা তার ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। সত্যি আমাদের দাবায়ে রাখা যায়নি, যাবে না। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, আমরাও পারি।

তিনি বলেন, কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমাদের যে সম্পদ আছে তাই ব্যবহার করে আমরা মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চাই। জাতির জনকের স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করে চলেছি। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত একটি দেশ।

ঘরের শত্রু বিভীষণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সজাগ থাকতে হবে। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে আবার এই প্রকল্পের কাজ স্থগিত করে। জনগণের ভোটে আবার আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করি। এই প্রকল্পটির কাজ আজ শুরু হলো। আমি আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষও হবে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদার একটি বড় অংশ এখান থেকে পূরণ হবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ান ফেডারেশনসহ দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র করব। তখন চিন্তায় বিষয় ছিল এই বিশাল অঙ্কের টাকা পাব কোথায়, এটি একটা ব্যাপার ছিল। আমি যখন রাশিয়া যাই তখন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলাপ করি, তিনি রাজি হন। পুতিন বলেছেন, রাশিয়া এটা করে দিবে। এ জন্য আমি রাশিয়া ও প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে রাশিয়া ও সে দেশের জনগণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের অবদান স্মরণ করছি আজ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বক্তব্য রাখেন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মাতীরের রূপপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১১টার দিকে প্রকল্প এলাকায় যে জায়গায় নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর তৈরি হবে, সেখানে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে কর্ণিক দিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করেন তিনি।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পৌর এলাকার প্রধান সড়কসহ ১৭ কিলোমিটার পথজুড়ে তোরণ নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। পাশাপাশি রূপপুর প্রকল্প এলাকায় বৃক্ষ রোপণসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *