বাংলারদর্পন : ২৬ নভেম্বর ২০১৭।
বালু দেয়াকে কেন্দ্র করে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় পল্লী বিদ্যুতের নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সরকারি দল সমর্থিত স্থানীয় বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ৮ নভেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে দশ এমভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণকাজ। নির্মাণসামগ্রী ফেলে রেখেই ছাগলনাইয়া ছেড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। অরক্ষিত অবস্থায় মালামাল পড়ে থাকায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সাবস্টেশন চালু করার সরকারের পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে বসেছে।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন শনিবার বলেন, সাবস্টেশনের জন্য কেনা বালুর নির্ধারিত দরের চেয়ে বাড়তি টাকা না দেয়ায় ঘোপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান এফএম আজিজুল হক মানিক লোকজন পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান এফএম আজিজুল হক মানিক এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আমার কাজ বন্ধ করে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। সাবস্টেশন নির্মাণকাজের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বরঞ্চ ঠিকাদারের সঙ্গে পাওনা টাকা নিয়ে আমাদের দলের যারা বালু ব্যবসা করেন তাদের বিরোধ ছিল। আমি সালিশে মীমাংসা করে দেয়ার চেষ্টা করেছি।
বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে এ বছরের ২৬ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সাবস্টেশনের জন্য কেনা জমিতে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। সিমেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড আরইবি থেকে সাবস্টেশন নির্মাণের কার্যাদেশ পেলেও পরে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ শুরু করে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিএম ইঞ্জিনিয়ারিং। তারা ভরাটের পর ২০ সেপ্টেম্বর থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে।
জিএম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাইড ইঞ্জিনিয়ার নাজিম উদ্দিন শনিবার মুঠোফোনে জানান, সাবস্টেশনের জমি ভরাট ও নির্মাণকাজের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান এফএম আজিজুল হক মানিকের কাছ থেকে দর নির্ধারণ করে তারা বালু ক্রয় করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান নির্ধারিত দরের চেয়ে বাড়তি দর দেখিয়ে ভাউচার জমা দেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিদর পরিশোধ করে। কিন্তু কোনোভাবেই চেয়ারম্যান ও তার লোকজন তাদের ধার্য্য দর থেকে কম নিতে নারাজ। তিনি বলেন, মূলত বালু ব্যবসার আড়ালে এটি এক ধরনের চাঁদাবাজি। কৌশলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করার পাঁয়তারা তাদের। দফায় দফায় বৈঠকে বাড়তি দর না দেয়ায় ৮ নভেম্বর চেয়ারম্যান লোকজন পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। তখন ক্যাবেলটেন্জ বেজ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল।
চেয়ারম্যানের লোকজনের হুমকিতে শ্রমিকরা ভয়ে ওইদিনই সাবস্টেশন এলাকা ছেড়ে চলে যান। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সাবস্টেশনের ভবিষ্যৎ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কাজ বুঝে দেয়ার কথা থাকলেও এখন তা আর সম্ভব হবে না। কাজ বন্ধ করে দেয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন।
সিমেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রকৌশলী মামুন জানান, চেয়ারম্যানের সঙ্গে বালু দর নিয়ে বিরোধের বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফেনী পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান বলেন, বালু দর নিয়ে এভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়া চেয়ারম্যানের ঠিক হয়নি। কারণ এটি শেখ হাসিনার উন্নয়ন। এ প্রকল্প জানুয়ারিতে শেষ করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে অবশ্যই সাবস্টেশন চালু করতে হবে।
ঘোপাল ইউপি চেয়ারম্যান এফএম আজিজুল হক মানিক বলেন, সাবস্টেশনের ঠিকাদার আমাদের দলের লোকজন থেকে দর করে বালু কিনেছেন। এখন তাদের ন্যায্য পাওনা না দেয়ার টালবাহনা করছে ঠিকাদার। আমি সালিশ করে কিছু টাকা বাদ দিয়ে ঠিকাদারকে ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা ছেলেপেলেদের পাওনা দিয়ে দিতে বলেছি। তারা মেনেও নিয়েছেন। তারা নিজেরা কাজ বন্ধ করেছেন। আমি কোনোভাবে এ কাজের সঙ্গে জড়িত নই।
সুত্র -যুগান্তর