অটোরিকশা চালকের সততা : নগদ টাকা সহ ব্যাগ ফিরিয়ে দিলেন 

 

বাংলারদর্পন  | ০৫ নভেম্বর ২০১৭।

এটিএম বুথের মাধ্যমে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার জন্য গতকাল শনিবার বিকেলে বের হন মারলিন। সিলেট শহরে খুব সহজেই পেয়ে গেলেন অটোরিকশা। তাড়া থাকায় গন্তব্যে পৌঁছে ঝটপট নেমে গেলেন তিনি। ভাড়া বুঝে পেয়ে অটোরিকশাচালক ছুটলেন তাঁর পরের গন্তব্যে। টাকা জমা দেওয়ার সময় মারলিন বুঝলেন কি ভুল করেছেন তিনি। সঙ্গে থাকা ব্যাগ অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন তিনি। তাঁর মাথা যেন আর কাজ করছিল না!

মারলিন বলেন, ‘প্যান্টের পকেট হাতড়ালাম মোবাইলটা আছে আর কিছু নেই। ব্যাগে ৩৫ হাজার টাকা, যা ব্যাংকে রাখতে এসেছিলাম। ভীষণ জরুরি কিছু কাগজপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, দুই ব্যাংকের দুটি ডেবিট কার্ড, চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক আরও যে কত কি! ব্যাগ তো না, ওটা যেন আমার সংসার।’

মারলিন এখানে-সেখানে ফোন করলেন, ব্যাগ হারানোর খবর এখানে-সেখানে দিলেন। কিছুই কূলকিনারা করতে পারলেন না। মারলিন বলেন, ‘আমার সিলেটের বন্ধুরা সিএনজি মালিক সমিতিকে জানাল, সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোতেও জানানো হলো, কিছু হলো না। রাতে মন খারাপ করে হোটেল ফিরলাম। ঘুম আসছিল না।

শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপ ঘাঁটছি, এমন সময় একটি ফোন এল রাত প্রায় ১১টা ৪০ মিনিটে। আমার এক বন্ধু ফোন করেছেন। বন্ধু জিজ্ঞেস করলেন, মারলিন, আপনার কি ব্যাগ হারিয়েছে? মারলিন অবাক হলেন। তাঁর ব্যাগ হারানোর কথা ওই বন্ধুর জানার কথা নয়। মারলিন বললেন, আপনি জানলেন কীভাবে? বন্ধুটি বললেন, চালক তাঁকে ফোন করেছে। ওই ব্যাগে মারলিনের ওই বন্ধুর কার্ড ছিল। কার্ডে নম্বর পেয়েই অটোরিকশাচালক বাদশা সেলিম ফোন করেছেন।

মারলিন বলেন, বন্ধুর কাছে চালকের নম্বরটি নিয়ে আমি ফোন করলাম নম্বরটিতে। অপর প্রান্ত থেকে চালক বললেন, ‘আফা আফনের ব্যাগ আমার কাছ, আসিয়া নিবা তুমি? আমি সেলিম।’ কিছুটা বিস্মিত আমি নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললাম, ‘না এখন তো অনেক রাত। আপনি কাল বেলা ১১টার দিকে আসেন। ঠিকানাটা বললাম।’ পরদিন সেলিম এলেন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন তিনিই বিরাট অপরাধী। তাঁকে ডেকে নিয়ে চা-মিষ্টি খাওয়ালেন মারলিন।

ব্যাগ মারলিনের হাতে তুলে দিয়ে বারবার সেলিম জানতে চাইলেন সব ঠিক আছে কি না, ‘আফা, সব ঠিক আছে তো? নাম-ঠিকানা বাইর করন লাগি হামার বউ আমি ব্যাগও হাতাইছি। যেমন যা ছিল সব তেমনই আছে।’ পরে মারলিন জোর করে ৫০০ টাকা দিতে চাইলেন সেলিমকে। কিন্তু তিনি কিছুতেই টাকা নেবেন না। একটু পর বের হয়ে গেলেন সেলিম। মারলিনের মনে হলো, হ্যাঁ, সেলিমের মতো মানুষদের চরিত্র তো এমনই হওয়ার কথা! তাঁকে টাকা দিলে নেবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *