সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক ছোটবেলা থেকে হলেও ভাগ্য বানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা

 

 

এম. রফিকুল ইসলাম>>>       

সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক ছোটবেলা থেকে হলেও ভাগ্য বানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তাসংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক ছোটবেলা থেকেই এস.এম.জাহাঙ্গীর আলম সরকারের তর্বে বর্তমান পেশায় তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা । দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে গান গেয়েছেন সেই ছোট বেলা থেকেই। পরবর্তীতে বাংলাদেশ টেলিভিনের তালিকাভূক্ত শিল্পী হিসেবেও নিজেকে চিহ্নিত করেছেন। দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন নিজের যোগ্যতায়। ফেনী জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন পদে (পুলিশ সুপার) থেকেও নানা ব্যস্ততার মাঝেও সময় পেলেই ডুবে যান গানের রাজ্যে নিজের হারমোনিয়াম নিয়ে। সারগাম গীত, ঠাট সংগীত, নজরুল সংগীত, লোকগান, আধুনিক বাংলা গান এমনকি মর্ডান ফোকেও তিনি তালিম নিয়েছেন ওস্তাদের কাছ থেকে। চাকুরির প্রতি ভালোবাসার ধরন আর সংগীতের প্রতি ভালোবাসার টানে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে দর্শক প্রসংশা পেয়েছেন।

 

প্রশ্ন:   গানের প্রতি প্রথম কিভাবে আগ্রহ ও দূর্বলতা জম্মে আপনার ?

 

উত্তরঃ পারিবারিক চর্চায় একান্নবর্তী পরিবারে আমার ফুপাতো ভাইয়েরা গান করতেন। পারিবারিক রাজনৈতিক চর্চায় শুভাকাঙ্খীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে আগ্রহ জন্মে।

 

প্রশ্ন:- আপনি কত সাল থেকে সংগীত চর্চা করছেন ? তখন বয়স কত ছিলো? কোন ক্লাসে ছিলেন? তখন আপনাকে সংগীত চর্চায় পরিবারের কেও উৎসাহ যুগিয়েছে কি না ?

 

উত্তরঃ-  ক্লাস টু থ্রি’র কথা, যতটুকু মনে পড়ে বয়স ৭-৮ বৎসর হবে। আমি যখন ক্লাস ফোরের ছাত্র বাবা আইয়্যূব খান বিরোধী একটি জারী গান লিখে নিজে সুরারোপ করে আমাকে টিম লিডার করে কন্ঠে গান তুলে উপজেলা পর্যায়ে প্রতিযোগীতার জন্য প্রস্তুত করেন এবং আমরা প্রতিযোগীতায় ১ম হই।

 

প্রশ্ন:- এ পর্যন্ত আপনার টিভি ও রেডিওতে কতগুলি গান প্রচারিত হয়েছে ? কত সালে আপনি টিভি ও রেডিওতে শিল্পী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়েছেন?

 

উত্তরঃ-  এ পর্যন্ত টেলিভিশন ও রেডিওতে ৫০ এর অধিক গান প্রচারিত হয়েছে। ২০০৬-০৭ এ আমি একই সাথে বাংলাদেশ টেলিভিশনে আধুনিক গানের শিল্পি ও গীতিকার হিসেবে তালিকাভূক্ত হই।

 

প্রশ্ন:-  প্রথমে কত সালে আপনার গান টিভি ও রেডিওতে প্রচারিত হয়?

 

উত্তরঃ- একই বছরে

 

প্রশ্ন:-    এ পর্যন্ত কয়টি গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন?

 

উত্তরঃ- লিখা গনের সংখ্যা ১৫০ এর অধিক হবে অধিকাংশ গানেই সুরারোপ করা হয়েছে।

 

প্রশ্ন:-  কয়টি গানের এ্যালবাম বের হয়েছে?

 

উত্তরঃ- ‘প্রেমের বাউল’ নামে একটি এ্যালবাম আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়েছে। তাছাড়াও ২৫-৩০টি অডিও রেকর্ড করা আছে।

 

প্রশ্ন:-  সংগীতের জন্য কারো কাছ থেকে তালিম নিয়েছেন কি না?

 

উত্তরঃ সংগীত গুরুমুখী বিদ্যা। ওস্তাদ নরেশ চন্দ্র হালদারের কাছে আনুষ্ঠানিক হাতে খড়ি নিয়ে সারগাম গীত, ঠাট সংগীত ও কিছু নজরুল সংগীতের উপর তালিম নিই। পরবর্তীতে আর্য্য সংগীত সমিতির শিক্ষক ওস্তাদ জয়ন্তী লালা’র কাছে খুব স্বল্প সময়ের তালিম লাভ করি। অতঃপর সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান (জুনু পাগলা), সুজিত রায়, গীতিকার জি,কে দত্ত, প্রয়াত প্রবাল চৌধুরীসহ অনেকের সাথে সংগীত বিষয়ক জ্ঞান লাভের সুযোগ হয়েছে। লোক গানের ওস্তাদ সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছেও আমার দায়বদ্ধতা অশেষ। চাকুরীর সুবাদে ময়মনসিংহে ওস্তাদ চয়ন সেনের কাছে বাংলা আধুনিক গানের তালিম নিয়েছি প্রায় দেড় বছর। সাথে কৃতজ্ঞতা জানাই শিল্পি প্রদীপ দা’র প্রতিও। এছাড়াও সংগীতের অনেক দিকপাল যাদের সাথে খন্ডকালীন কাজ করার সুযোগ পেয়েছি তাদের মধ্যে অন্যতম জনাব শেখ সাদী খান, শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী, বাসু দা, জহির বাবু, বারি সিদ্দিকী, ইফতেখার সোহেল, সুরকার বদরুল আলীম বকুল, প্লাবন কোরাইশিসহ অনেকেই।

 

প্রশ্ন:-  আপনার গাওয়া, লেখা এবং সুর করা কোন কোন গান বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে?

 

উত্তরঃ- জনপ্রিয়তার বিষয়টি আপেক্ষিক তবে জহির বাবু’র যুদ্ধাপরাধী গানটি হাজার বারের বেশি প্রচারিত হয়েছে এবং অনেক মানুষের খুব পছন্দের গান এটি বলতে পারি। এছাড়াও “আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি/শুনেছি অনেক গান”, “যদি লাল টিপ নীল শাড়ী পড়তে”, “এতো ভালোবাসী যারে আজো বলা হয়নি তারে”, “সৌভাগ্য আমার/আমি পেয়েছি তোমায় ওগো বিশ্ব নেতা তুমি শেখ হাসিনা”, কান্দে বাঙ্গালি কান্দে বঙ্গবন্ধুর লাইগা………..সহ বেশ কিছু গান রয়েছে যা ভালোলাগার মত গান।

 

প্রশ্ন:- সংগীত নিয়ে আপনার কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে কিনা?

 

উত্তরঃ- আধুনিক, লোকগান/মর্ডান ফোক সম্পর্কে কিছু ধারনা জন্মেছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের একজন ওস্তাদ রিটন কুমার ধর এর কাছে নজরুল সংগীত শিখছি। বয়স ৫০ এর কাছাকাছিতে গিয়ে লালন শিখব খানিকটা। ৫০ পরবর্তী সময়ে গিয়ে ভবিষ্যতে কি করতে চাই সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিভ ভাবছি।

 

প্রশ্ন:- আপনার সংগীত চর্চাকে আপনার সহধর্মীনি বা সন্তানরা কিভাবে দেখেন?

 

উত্তরঃ কখনও বিনোদনের আধার কখনও বা বিরক্তিও দেখতে পাই।

 

প্রশ্ন:-  আপনার পেশার (পুলিশের) সহকর্মীরা সংগীত চর্চাকে কিভাবে দেখেন?

 

উত্তরঃ- যাদের চেতনায় সংগীত নাড়া দেয় তাদের অনেকেই উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন এখনও। যাদের নাই তাদের বক্তব্য প্রাসঙ্গিক নয়।

 

প্রশ্ন:- সংগীত শিল্পী ও পুলিশ কর্মকর্তা এ দুইটি থেকে কোনটিকে বেশি ভালোবাসেন ?

 

উত্তরঃ- জীবন, জীবিকা দেশপ্রেম চেতনা ইত্যাদি বিষয়ের সাথে চাকুরীর সম্পর্ক প্রগাঢ়। চাকুরীর প্রতি ভালোবাসার ধরন আর সংগীতের প্রতি ভালোবাসার ধরনেও পার্থক্য আছে।

 

প্রশ্ন:- পুলিশে না আসলে কোন পেশা বেছে নিতেন ?

 

উত্তরঃ- ব্যাংকার ছিলাম এদিকে না আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ ছিল।

 

প্রশ্ন:- ফেনীতে আপনার কেমন লাগছে ?

 

উত্তরঃ- ফেনী’র মাটি ও মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক এখানকার নাগরিকদের সম্পর্ক যেমনটা ঠিক তেমনই।

প্রশ্ন:- সম্প্রতি সময়ে সংগীতের মাধ্যমে আপনার জনসচেতনতামূলক ও বিভিন্ন তৎপরতা সম্পর্কে কিছু বলেন?

 

উত্তরঃ- জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা রোধে গান পরিবেশন করে ডকুমেন্টারী করি এবং নৌপথে ভ্রমনকালে সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারীতেও অভিনয়সহ গান করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *