৪৫ বছরেও সোনাগাজীর মুক্তিযোদ্ধা আফছার হত্যার বিচার হয়নি

সৈয়দ মনির অাহমদ >> ১১ ডিসেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নুরুল অাফছার দিবস। তিনি সদর ইউনিয়নের ফরাজী বাড়ীর মৌলভী অাহম্মদ করিমের বড় ছেলে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় উৎসবের পুর্ব মুহুর্তে ১১ ডিসেম্বর সোনাগাজী থানা কম্পাউন্ডে রাজাকারদের রক্ষা করতে, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শহীদ নুরুল আফছারকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পর খুনিরা তিন দিন সোনাগাজীতে কারফিউ দিয়ে সব কিছু গোপন করেছিল। গুম করেছিল নুরুল অাফছারের লাশ। তৎকালীন সময়ে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে তার পিতা মৌলভী অাহম্মদ করিমের দায়েরকৃত মামলাটিও অালোর মুখ দেখেনি। হত্যাকান্ড অাড়াল করতে কবরের নেম প্লেটে “অাততায়ীর হাতে নিহত ” লিখতে পরিবারকে বাধ্য করা হয়েছিল। অাজও সেই বানোয়াট নেম প্লেট দেখে লজ্জিত শহীদ অাফছারের সহযোদ্ধারা। স্বাধীনতার ৪৫তম বছরের আজকের এ দিনে সোনাগাজীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নুরুল আফছার হত্যার বিচার চায়।

শহীদ নুরুল অাফছারের সহযোদ্ধা ও ঘনিষ্ট বন্ধু দুলাল অাহম্মদ জানান, সোনাগাজীর প্রথম প্রশিক্ষন প্রাপ্ত মুক্তি যোদ্ধা শহীদ নুরুল অাফছার। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তার ভুমিকা ছিল অপরিসীম। অত্যান্ত সাহসি যোদ্ধা ছিলেন তিনি। বিজয় উৎসবের ৫ দিন অাগে থানা কম্পাউন্ডে বন্দি রাজাকার সামছুদ্দিন সহ কয়েকজনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। তাদেরকে রক্ষা করতে কমান্ডার এর নির্দেশে মনির অাহম্মদ খোকা, মোশারফ ও কালাম নুরুল অাফছারকে প্রকাশ্যে গুলি করে। থানার ভেতরেই তিনি নিহত হন। পরে ওই সব খুনিরা সোনাগাজীতে তিনদিনের কারপিউ জারি করে।
মুক্তিযোদ্ধা শেখ সিরাজ জানান, নুরুল অাফছারকে হত্যার খবর শুনে অামরা থানায় ছুটে অাসি। তখন কয়েকজন বিপদগামী, বিশ্বাশঘাতক মুক্তিযোদ্ধারা নুরুল অাফছারের নিথর দেহ নিয়ে টানাটানি করছিলেন। পরবর্তিতে থানা পুকুরের উত্তর পুর্ব কর্নারে পাড়ে দাপন করে। কয়েকদিন পর ডাঃ দানিয়েলদের দেয়া জমিতে তাদের বাড়ীর সামনে কবর স্থানান্তর করা হয়।
নুরুল অাফছারের ছোট ভাই লন্ডন প্রবাসী ফারুক জানান, স্কুল জীবন থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ফেনী কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন ভিপি ছিলেন নুরুল অাফছার। সেখান থেকেই এফএফ ফোর্সের মাধ্যমে ভারত থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।
তার অারেক ছোট ভাই ইতালী প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া জানান, মুক্তিযোদ্ধে বড় ভাই অাফছারের সাহসী ভুমিকা সকলের জানা ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার কাছাকাছি সময়ে বিশ্বাশঘাতক হাতে নিহত হয়েছে। এখন পর্যন্ত নুন্যতম স্বীকৃতি তিনি বা পবিবার পাইনি। আমার পিতা বাদী হয়ে ফেনী অাদালতে মামলা দিয়েছেন, তৎকালিন প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে ওই মামলা অালোর মুখ দেখেনি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল অা’লীগ রাষ্ট্রের ক্ষমতায়। আমরা অন্যায়ভাবে ওই জঘন্যতম হত্যার বিচার চাই।
সাবেক যুবলীগ নেতা শেখ সেলিম জানান, থানা কম্পাউন্ডে হট্টগোল শুনে অামরা থানায় ছুটে এসেছিলাম। সেখানে ওইসব খুনিদের দেখেছি নুরুল অাফছারের লাশ নিয়ে টানাটানি করছিল, এক পর্যায়ে পুকুর পাড়ে তাকে কবর দিয়েছিল। তখন থানায় বন্দি রাজাকার সামছুদ্দিন, শাহজাহান সহ কয়েকজন খিল খিল করে হাসছিল। এর চেয়ে লজ্জা অার কি হতে পারে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর সাহসী জনপদ সোনাগাজীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা ইতিহাসে জাতির কাছে চির স্বরণীয়-বরণীয় হয়ে রয়েছে।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১সালে ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ মুহুর্তে ১১ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল অাফছারকে সোনাগাজী থানার ভেতরে গুলি করে হত্যা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *