হরমুজ প্রণালী : অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জলপথ

 

 

অানোয়ারুল হক অানোয়ার : হরমুজ প্রণালী নিয়ে মিডিয়া জগৎ কিংবা বিভিন্ন মহলের গবেষনার অন্ত নেই। সরু অথচ গুরুত্বপূর্ণ  এ নৌ রুটটি একদিনেই বিশ্ব অর্থনীতির চাকা অচল করে দিতে পারে। বিশ্বের নামজাদা শেয়ার মার্কেটগুলো মুহুর্তে স্থবির হবার জন্য যথেষ্ট। যদি কোনক্রমে হুরমুজ প্রণালী একমাস বন্ধ থাকে তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় নেমে অাসবে। তাই অান্তর্জাতিক ভাবে হরমুজ প্রণালীর গুরুত্ব অপরিসীম। মাত্র দুই দশক পূর্বেও হরমুজ প্রনালী নিয়ে তেমন একটা অালোচনা মিডিয়ায় স্থান পায়নি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় হরমুজ প্রণালী এখন অালোচানার বিষয়বস্তু।

 

এ সরু জলপথটি পশ্চিমের পারস্য উপসাগরকে পূর্বে ওমান উপসাগর ও অারব সাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে অাবার অারব উপদ্বীপকে ইরান থেকে পৃথক করেছে। ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌ চ্যানেলটি পারস্য উপসাগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ওমান ও ইরানকে পৃৃথক করেছে। হরমুজ প্রণালীর সরু অংশের দৈর্ঘ্য ২১ মাইল এবং প্রস্থ মাত্র দুই মাইল। বিশ্বের পেট্রোলিয়াম পণ্যের ৬০% এপথে পারাপার হয়। এশিয়া, যুক্তরাস্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এপথেই তেল পরিবহন হয়। চীনে অামদানীর ৫৫% এবং জাপানের ৪০% ভাগ হরমুজ প্রনালীর মাধ্যমে সরবরাহ হয়।

 

ইরাক- ইরান যুদ্ব, ইরাক – কুয়েত সংঘাত, ইরাকে সামরিক অভিযান, সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্বসহ বিভিন্ন কারনে সামরিক দিক দিয়ে হরমুজ প্রণালীর গুরুত্ব বৃদ্বি পায়। মধ্যপ্রচ্যে ওয়াশিংটনের ১৮ টি সামরিক ঘাঁটির প্রেক্ষিতে হরমুজ প্রণালী অারো গুরুত্ব লাভ করে। শেষতক পরমানু ইস্যুতে ইরানের সাথে পশ্চিমাদের টানাপোড়নের সময় হরমুজ প্রনালীতে ওয়াশিংটন ও তেহরানের সামরিক উপস্থিতি পরিবেশ ভারী করে তোলে। ২০১৬ সালে ওয়াশিংটন তেহরান অাক্রমনের হুমকি প্রদান করে।  একই সাথে তেলঅাবাবিব ইরানে ঝটিকা বিমান হামলার পরিকল্পনা গ্রহন করে।

 

ইরানে হামলা হলে মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে তেহরান হরমুজ প্রনালী বন্ধের হুমকি প্রদান করে। এসময় বিদেশী অাগ্রাসন মোকাবেলায় ইরান হরমুজ প্রনালীতে নৌশক্তি বৃদ্বি করে। বিশেষ করে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্রবাহী ক্ষুদ্রাকারের দ্রুতগামী পেট্রোল বোট শত্রু বাহিনীর জন্য মারাত্নক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ব ছাড়াও সাম্প্রতিক সময় উপসাগরীয় সৌদী অারবের সাথে ইরানের তিক্ত সম্পর্ক চলছে। এ সূযোগে ইরানের উপর সামরিক অভিযানের জন্য দুলিয়াতি করছে সৌদী অারব। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা সিরিজ অাকারে চলছে।

 

সৌদী অারবের ফাঁদে পড়ে ওয়াশিংটন তেহরানে হামলা করলে তাৎক্ষনিকভাবে হরমুজ প্রনালী অচল করবে তেহরান। তখন বিশ্বব্যাপী জ্বালানী সংকট বৃদ্বির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হবে। যুদ্বের সময় হরমুজ প্রনালী বন্ধ করে তেহরান বাড়তি সুবিধা লাভ করবে। মার্কিন নৌবহর উপসাগরে অবস্থান করছে। অপরদিকে ইরানও তার নৌশক্তি বৃদ্বি করছে। অাধুনিক নৌবহরের বিপরীতে তেহরান তার সাধ্যমত যুদ্ব জাহাজসহ নৌশক্তি প্রন্তুত রেখেছে। ফলে কোন ক্রমে যুদ্ব বাঁধলে ওয়াশিংটন হরমুজ প্রনালীর নিয়ন্ত্রন নিতে চাইবে। অপরদিকে ইরান সর্বশক্তি দিয়ে হরমুজ প্রনালী তার নিয়ন্ত্রনে রাখতে চাইবে।

 

লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার এবং অান্তর্জাতিক বিশ্লেষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *