ফেনী গ্যাস ফিল্ডে শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে ৫টি কূপ :২ টি ভার্জিন ৩ টি বন্ধ

 

সৈয়দ মনির অাহমদ>> ফেনী বালুয়া চৌমুহনী গ্যাস ফিল্ডে মোট ৫টি ওয়েল কূপ রয়েছে। দুইটি কূপ চলমান অর্থাৎ গ্যাস উৎপাদন ছিলো। বাকী ৩ টি কূপ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ এসব কূপে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ থাকলেও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। বালুয়া চৌমুহনী থেকে প্রায় দেড় কিঃ মিটার দক্ষিনে ধলিয়া বাজার সংলগ্ন ফেনী – ৬ ফিল্ডটি সম্পূর্ন ভার্জিন। এই কূপটি খনন করতে নাইকো কোম্পানী উদ্যোগী ছিলো।একারণে শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি জড়ো করা হয়। কিন্তু বাপেক্স’র সাথে তিক্ততায় শেষ পর্যন্ত কূপটি আর খনন করা যায়নি।

বালিগাঁও ইউনিয়নের সুন্দরপুর গ্রামে রয়েছে আরো একটি ভার্জিন কূপ। ফেনী-৭ নামে কূপেও প্রচুর গ্যাস রয়েছে বলে সন্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রমানিত হয়। বর্তমানে এসব গ্যাস কূপ অরক্ষিত।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফেনী -৬ ও ফেনী-৭ গ্যাস গ্যাস কূপে প্রচুর পরিমান গ্যাস মজুদ রয়েছে। এ দু,টো গ্যাস কূপ খনন করা শুধুমাত্র সরকারী সিদান্তের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে সারাদেশে প্রচন্ড তাপদাহ বিদ্যমান। এসময় বিদ্যুৎ সংকট মরার উপর খড়ার ঘা’ র মতো। এছাড়াও উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো সচল হওয়া সময়ের দাবী। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বাপেক্স (সরকার) গ্যসের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে ১২ নং গ্যাস ব্লক সম্পূর্ণ বিনা টেন্ডারে কুরিয়ান কোম্পানী “দাইয়ো” কে হস্তান্তর করে। অথচ ফেনীর পরীক্ষাকৃত চালু গ্যাস ফিল্ড টি কেন চালু করা হচ্ছেনা, সেটা বিশাল এক প্রশ্ন। ফেনীবাসী মনে করে সরকার নাইকোর সাথে সমঝোতা করে কিংবা অন্য কোন কোম্পানীকে চুক্তি ভিত্তিক উত্তোলনের সুযোগ দিতে পারে।

 

বন্ধ গ্যাস ফিল্ড চালু করা হোক : ফেনীর বালুয়া চৌমুহনীর বন্ধ গ্যাস ফিল্ডে শত শত কোটি টাকার গ্যাস উত্তোলনের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেহাত হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। বছরের পর বছর অযত্ম অবহেলায় পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতিগুলো বৃষ্টিতে ভিজে রোদে জ্বলে ঝং ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয় দেখার কেউ নেই।

জানা যায়, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বাপেক্স) কানাডিয়ান কোম্পানী নাইকো রিসোর্চসের সাথে ফেনী গ্যাস ফিল্ডে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নাইকো ৬০% বাপেক্স ৪০% নির্ধারিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নাইকো ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালের নভেন্বর পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করে। নাইকোর উত্তোলিত গ্যাস সম্পূর্টাই জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়। এতে নাইকো পাওনা হয় ( ৬০% হিস্যার গ্যাস মূল্য) প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। এসময় সিলেটের লাউয়াছড়া গ্যাস ফিল্ড দূর্ঘটনায় সরকারের সাথে নাইকোর দূরত্ব বাড়ে। ফলে ফেনী গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদিত নাইকোর প্রাপ্য গ্যাসমূল্য আটকে যায়। এব্যাপারে নাইকো বাপেক্স- এর কাছে পাওনা আদায়ে বহু চিঠি চালাচালি করেও কোন সদুত্তর পায়নি। এতে নাইকো ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১০ সালের নভেন্বর মাসে চলমান ফেনী গ্যাস ফিল্ডটি বন্ধ করে দেয়। ঐ সময় উক্ত ফিল্ডে প্রায় ৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছিল। দীর্ঘ সাত বছর উৎপাদন বন্ধ থাকার পর বর্তমানে গ্যাসের পেশার বেড়ে যায় বহুগুণ।নাইকোর সাবেক কর্মকর্তা আহমেদ নাসির জানান,এই বন্ধ ফিল্ডটি চালু করলে বর্তমানে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সন্ভব।

এই বিশাল অংকের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হলে গ্যাস ভিত্তিক প্রকল্পগুলোর কোন সমস্যাই আর থাকতো না। গ্যাসের সমস্যার কারনে গ্যাস ভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর উৎপাদন দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে মিল- কারখানায় উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, একইভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগ। অথচ সরকার কাপকো কে চাহিদা মত গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে শুধুমাত্র ফেনী ও চট্রগ্রামে প্রায় ২০টি পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং শত শত কলকারখানা উৎপাদনে যেতে পারছেনা।

নাইকোর পেলে যাওয়া শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতিগুলো ফেনী- ৬ ও ৭ নং কুপে অযত্ম অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নাইকো চলে যাওয়ার কারণে অন্য কোন কোম্পানী এসব গ্যাস ফিল্ডে কাজ করতে আগ্রহী নয় বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে বাপেক্স চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়েজুল্লাহর সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি সেলফোন রিসিভ করেননি।ফেনীর সচেতন মহলের দাবী, বন্ধ গ্যাস ফিল্ডটি সচল করে চলমান সংকট দূর করতে সরকার আন্তরিক হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *