পরিবারের অভাব ঘোচাতে গার্মেন্টসে কাজ করি

“জীবনের ব্যাপারে আপনাদের কি বলবো জানিনা। কথা গুছায়ে বলাটা শিখা হয় নাই কখনো। ঢাকা আসি পাবনা থেকে সেই ২০০৪ সালে। তেরোটা বছরে অনেক কিছুর উত্থান-পতন দেখলাম জীবনে। আমার পরিবারের অবস্থা একটুও স্বচ্ছল না, খুবই গরিব বলতে পারেন। আমি ঢাকায় এসে উঠি আমার চাচার বাসায়। উনার হাতে ধরেই এই পোশাক-তৈরির লাইনে আসা। কাজ শুরু করি একজন হেলপার হিসেবে। শুরুতে বেতন ছিলো মাত্র ৭০০ টাকা। সেই কাজ করি প্রায় পাঁচ বছর। তারপর প্রিন্ট সেকশনের অপারেটর পোস্টে কাজ করি তিন বছর। এখন একজন কালার মাস্টার হিসেবে কাজ করছি ৮ বছর হলো। এখন বেতন পাই সব মিলায়ে প্রায় ১৭০০০-১৮০০০ টাকার মতো। হয়তোবা বলবেন যে অনেকটা বড়ো পথ পাড়ি দিয়েছি আমি। আমিও তাই বলি। এই লাইনে কাজ করতে এসে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে আমার জীবনে।

 

ঢাকায় আসার আগে জীবনধারা তেমন উন্নত ছিলোনা আমার। এখানে এসে একটি উন্নত পরিবেশ কি তা জানতে পেরেছি। জানেন, আমার পড়ালেখা করার অনেক শখ ছিলো। কিন্তু কপাল দোষে তা কখনো সম্ভব হয় নাই। পড়ালেখার মর্ম কি আমি বুঝি। তাই তো আমার ছোট ভাইটা কে অনেক কষ্টে পড়ালেখা করাচ্ছি যাতে করে সে জীবনে উন্নতি করতে পারে। আমার জীবনে আর কি আছে বলেন… প্রথম ঢাকায় আসার পর মা-বাবার সাথে রাগ করে আমি প্রায় ৩ বছর বাড়ি যাই নাই। মনে একটাই কষ্ট ছিলো যে কেন আমি পড়ালেখা করার সুযোগ পেলাম না। তাই তো ভাইটা কে নিয়ে এতো চেষ্টা আমার। সে এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। আমি বিশ্বাস করি শিক্ষিত হলে সে অনেক ভালো কিছু করবে। পড়ালেখা করলে তো অনেক বড়ো হওয়া যায়। আমি তো আর সেটা হওয়ার সুযোগ পেলাম না। এই পোশাক-তৈরীর কারখানাটাই তো জীবন এখন। আমরা এখানে অনেক কাজের মাঝে কখনো একটু আনন্দও করি । মাঝে মধ্যে পিকনিকেও যাই। এভাবেই জীবন যাচ্ছে। এখন ভালোই আছি।”

– একটি ছোট পোশাক কারখানা  কর্মচারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *