গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ট্রাফিক সার্জেন্টের চাঁদাবাজি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শুধু মহাসড়ক নয়, গাজীপুর মহানগরের বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কেও প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজি। যানবাহনের চালকের কাছে চাওয়া মাত্রই চাঁদা না দিলে ভেঙ্গে ফেলা হয় যানবাহনের লুকিং গ্লাস আর করা হয় শারীরিক নির্যাতনও। চালকদের প্রকাশ্যে পেটানোর ঘটনাও ঘটেছে প্রতিনিয়ত। গত এক সপ্তাহে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীর ষ্টেশন রোড, চেরাগআলী, গাজীপুরা এলাকা ঘুরে জানাযায়, ট্রাফিক সার্জেন্টের সোর্স মাধ্যমে বেপোরয়া চাঁদাবাজির কথা। ট্রান্সপোর্টের মালিক ও ড্রাইভারদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে কে এই ট্রাফিক সোর্সদের কারনে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, মিনি ট্রাক, টেম্পো, ভটভটি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে ৫০/১০০ টাকা এবং যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক, কার্ভাডভ্যান থেকে ৩০০/৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে টঙ্গী ষ্টেশন রোড় এলাকা থেকে। এ ছাড়া সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে আসা যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক, কার্ভাডভ্যান আটকিয়ে সার্জেন্টরা ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং ট্রাফিক পুলিশের নামে একই কায়দায় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট কর্তৃক নিয়োগকৃত সোর্সরা চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ট্রাফিক পুলিশের সোর্সরা হাতে লাঠি নিয়ে সার্জেন্ট বা রেকার ডেকে যানবাহন চালকদের হয়রানী করছে। ডাইভারদের কাজ থেকে সার্জেন্টরা সোর্স মাধ্যমে প্রতিমাসে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে প্রতিটি গাড়ি মাসোহার নিয়ে থাকে। মসোহারা না দিলে বিভিন্ন আজুহাতে সার্জেন্টের মাধ্যমে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
টঙ্গী ষ্টেশন রোডে মহাসড়ক দখল করে দাঁড়িয়ে থাকা তুরাগ ও সাভার নবীনগরের মিনিবাস থেকে দৈনিক ১৭০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত চাদা উত্তোলন করা হয় সার্জেন্টদের নামে। এছাড়াও গাজীপুরা এলাকায় সু প্রভাত গাড়ী থেকে মান্থলী নেয়া হয় গাড়ীপ্রতি ১৫ শত টাকা ও প্রতিদিন যে সার্জেন্ট ডিউটিরত অবস্থায় থাকে তাদেরকে দিতে হয় গাড়ীপ্রতি ১৫০ টাকা। সার্জেন্ট পুলিশকে দেয়ার পর আবার থাকে লাইনের টাকা। স্থানীয় নেতাদের চাঁদাসহ থানা পুলিশের জন্য বাজেট। এমনটাই জানালো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন মালিক। এমনি ভাবে টঙ্গী ষ্টেশন রোডে ট্রাফিক অফিসের ঠিক উল্টোপাশে অবৈধ ব্যটারী চালিত অটোরিক্সা ষ্ট্যান্ড, সিএনজি ষ্ট্যান্ড, টেম্পু ষ্ট্যান্ড থেকে থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করে মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়ক দখল করে বেপরোয়া চালিয়ে যাচ্ছে অনৈতিক ভাবে। টঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ইমার্জেন্সী রোগী কিংবা থানায় সেবা নিতে আসা ভূক্তভোগীরা এসব যানবাহনের কারনে পড়েন বিপাকে। থানা ও মেডিকেল গেইট দখলকরে যাত্রী উঠানামা করানোর কারনে ঢাকা থেকে নরসিংদী, ভৈরব, ব্রাম্মনবাড়িয়া ও সিলেট গামী যানবাহনকেও থমেকে দাঁডিয়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা।
অপরদিকে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন মহাসড়কে চলাচল করা অবৈধ ব্যটারীচালিত অটো রিক্সা চলছে দেধারছে ট্রাফিক পুলিশের নাকের ডগায়। আই ওয়াশ করার জন্য প্রতিনিয়ত কিছু রিক্সা আটক করলেও অন্তরালে এসব অবৈধ অটোরিক্সা সিন্ডিকেটদের কাছ থেকে সার্জেন্ট পুলিশদের মোটা অংকের চাঁদা আদায় করায় মহাসড়ক বা আঞ্চলিক সড়ক থেকে তা নিñিন্ন করা যাচ্ছে না। এতে যেমন বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা তেমনি প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে চরম যানজট।
ট্রাফিক পুলিশের চাঁদা আদায়ের কোন রশিদ না থাকলেও বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে এসব চাঁদা আদায় করে থাকে ট্রাফিক পুলিশ ও তাদের নিয়োগকৃত সোর্সরাও। ট্রাফিক পুলিশের সাথে সোর্স কাজলদের মত আরোও কয়েকজন পুলিশের লাঠি হাতে নিয়ে প্রকাশ্যে যানবাহন আটকিয়ে চাঁদা আদায় করছে। ফলে প্রতিদিন এসব রোডে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
পুলিশের একটি বিশেষ সুত্রে জানা যায়, টঙ্গী ও গাজীপুরে কর্মরত অধিকাংশ সার্জেন্টরা মাসিক ভিত্তিতে গোপনীয়তার সহিত টোকেনের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে থাকেন। যে সকল যানবাহন চালকরা চাঁদা দেন না বা চাঁদার টাকা দিতে বিলম্ব করেন তারা তাদেরকেই ধরে মামলা বা রেকার লাগিয়ে বিল করে দেন।
এ ব্যপারে টঙ্গী ষ্টেশন রোডে দ্বায়িত্বরত সাজেন্ট ফিরোজ প্রধানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে বৈধ ভাবে কজনইবা চলে। আপনার মত অনেক সাংবাদিকতো আমারও বন্ধুবান্ধব আছে। আসেন চা নাস্তা করেন। এইসব বিষয়ে রিপোর্ট করে খামখা আমাদের পেটে লাথি দিয়েন না। আমাদের অনেক সোর্স মেইনটেন করে চলতে হয়। তাদের দৈনিক বেতন দিতে হয়। আমরাতো আর সরাসরি কিছু করিনা ওদের মাধ্যমেই যা আসে। তাই ওদেরকে আমরা বেতন দিয়া রাখি। মাঝে মধ্যে আইসেন আপনারটাও দেখব। অনেক সাংবাদিকইতো আসে আপনি আসলে আর দোষের কি?
আরো জানা যায়, ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টরা তাদের র্সোসদের মাধ্যমে যে টাকা উঠানো হয় তার কোন প্রমানপত্র না থাকায় ট্রাফিক সার্জন্টরা মামলা দেওয়া বা রেকার বিলের দোহাই দিয়ে থাকেন সর্বদা। এই বিষয়ে সার্জেন্ট সোর্স কাজলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং পরে বিভিন্ন মহল থেকে ঐ সংবাদকর্মীকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা চালায়।
এ বিষয়ে গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সালেহ্ উদ্দিন আহম্মেদের এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যপারে লোকমূখে আমিও শুনেছি। তবে আমি বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব। যদি কেউ এর প্রমাণ হাতে নাতে দিতে পারেন তবে তিনি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন।