বনানীর ধর্ষন এবং নস্ট সমাজের ইতিবৃত্ত ! গোলাম মাওলা রনি

বনানীর ধর্ষন এবং নস্ট সমাজের ইতিবৃত্ত !  গোলাম মাওলা রনি

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

রাজধানী ঢাকার তথাকথিত ধনাঢ্যদের  এলাকা বলে পরিচিত বনানীতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া  বহুল আলোচিত ধর্ষন মামলা দেশের প্রগতিশীল চিন্তাবীদদেরকে অস্থির করে তুলেছে। সারা বাংলাদেশে সংঘঠিত নিত্যকার বহু নির্মম ও বিয়োগান্ত ধর্ষনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, বিদ্রোহ-বিপ্লব না করে কেনো সবাই বনানীর বিতর্কিত এবং চটুল কাহিনী নিয়ে মেতে ওঠেছেন তা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন।

 

গুজুবের পেছনে হুজুগে চলার আদি ও অকৃত্রিম তকমা এজাতির ললাটের বহদিনের পুরোনো ঐতিহ্য বলে সর্বজন স্বীকৃত। মানুষের বিপদে সাহায্য না করে বরং বিপদ দেখে দাঁত বের করে হাসার ঐতিহ্য  ও কম নয়। বিপদগ্রস্থ মানুষকে নতুনভাবে আক্রমন করে তার অসহায়ত্বের  সুযোগ নিয়ে লীলা খেলার বহশত উদাহরন বাঙালী সমাজকে অক্টোপাশের মতো আঁকড়ে ধরে আছে। কোন ঘটনার গভীরে প্রবেশ না করে কেবলমাত্র বাহ্যিক বিচারে  রায় প্রদান করে আমাদের সমাজ প্রতি নিয়ত কতো মানুষের যে সর্বনাশ ঘটিয়ে যাচ্ছে তার হিসেব কে কখন রেখেছে ?

 

বনানীর রেইনট্রি নামক হোটেলে গভীর রাতের একটি অসামাজিক অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছায় যোগদান করে দুইজন তরুনী ঘটনার প্রায় দেড়মাস পরে  ধর্ষনের অভিযোগ এনেছেন। তাদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন পূর্বাপর ঘটনার সত্যতা, বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করেই পুরো দেশ একযোগে ধর্ষনকারী বলে অভিযুক্ত তরুনত্রয় এবং তাদের চৌদ্দ গোষ্ঠীর ওপর  হামালে পড়েছে।

 

অভিযুক্ত ধর্ষনকারীদের কথাবার্তা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং অতীত ইতিহাস প্রমান করে যে বাংলাদেশে  ডার্টি ম্যানির ডার্টি মানুষজনের ডার্টি মন মানসিকতা নষ্টামীর প্রান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। জনৈক ধর্ষনকারী বলে অভিযুক্ত তরুনের পিতা তার ছেলের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে যা বলেছেন তা আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগেও ঘটতোনা। অন্যদিকে ধর্ষিতার জবানবন্দী, কথাবার্তার পাকামী এবং মন মানসিকতা আমাদেরকে যারপর নাই বিক্ষুব্দ এবং হতাশ করেছে। একথা নিশ্চিত যে, তারা স্বেচ্ছায় এবং লোভের বশবর্তী হয়ে সেরাতে হোটেলে গিয়েছিলো। বখে যাওয়া তরুনদের নষ্টামী, মাদক গ্রহন এবং উশৃঙ্খলতা সম্পর্কে তারা বেশ ভালো ভাবেই জানতেন। ফলে কথিত ধর্ষিতাদের  ব্যাপারে আবেগ প্রবন হবার পূর্বে তাদেরকে নিয়েও চিন্তা ভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে।

 

ধর্ষন ঘটনার জের ধরে আপন জুয়েলার্সে দেশের শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের  হঠাৎ তল্লাসী এবং কয়েকটি শোরুম সিলগালা করে দেওয়া সমর্থন যোগ্য নয়। উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে ফায়দা নিয়ে রাতা রাতি নায়ক হবার বাসনায় কিছু সরকারী কর্মকর্তার এহেন আচরন সরকার ও রাষ্ট্রের দূর্বলতা ও হুজুগে স্বভাব প্রমান করে। তাদের  উচিত ছিলো বড় বড় সোনার দোকান গুলোতে একসঙ্গে অভিযান চালানো । অন্যদিকে সরকারের উচিত শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগকে কারন দর্শানো যে, কেনো তারা বিগত দিনে দেশের জুয়েলারী শিল্পের খোঁজ খবর নেয়নি ?

 

একটি অবোধ শিশু কন্যার নির্মম ধর্ষনের বিচার না পেয়ে  দরিদ্র পিতা এবং তার শিশু কন্যার রেল লাইনে আত্মহননের ঘটনা জাতির বিবেককে বিক্ষুব্দ না করে কেনো অবৈধ অর্থের মালিক-শ্রমিক এবং বখাটে তরুন-তরুনীদের  নষ্টামীর খবর আমাদেরকে বেশী মাত্রায় উত্তেজিত এবং উৎসাহী করে তুললো তার মনোজাগতিক কারন খুঁজে বের করা জরুরী হয়ে পড়েছে। আমরা কি উল্লেখিত দূর্ঘটনায় সত্যিই বিক্ষুব্দ নাকি কোন কারনে নিজেরা ডিপ্রেসড হয়ে এমনটা করছি ? অথবা অবৈধ অর্থবিত্ত এবং নষ্ট মানুষদের  নস্টামী কি আমাদের নিজেদের অজান্তে আমাদের মনে প্রভাব ফেলে নাকি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা নিয়ে ভাবনার সময় চলে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *