র‍্যাবকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে – বেনজির অাহমেদ

র‍্যাব প্রধানের সাথে কালের কন্ঠ প্রতিবেদকের একান্ত সাক্ষাতকার।

গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৬৩ সালে জন্ম নেওয়া বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যয়ন শেষে এমবিএ ও এলএলবি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য অনুষদের অধীন পিএইচডি রিসার্চ ফেলো। ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এএসপি হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। কর্মজীবনে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার এসপি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি, পুলিশ সদর দপ্তরে এআইজি, ডিআইজি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে চিফ ইনস্ট্রাক্টর ও টাঙ্গাইলের পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এলিট ফোর্স র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব চিফস অব পুলিশের (আইএসিপি) সদস্য ছাড়াও যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও র্যাবের কার্যক্রম নিয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সরোয়ার আলম

কালের কণ্ঠ : র্যাব গঠনের সময় অনেক সমালোচনা হলেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাবের প্রয়োজনীয়তা আজ স্বীকৃত। নেতিবাচক ধারণা থেকে আজকের এই ইতিবাচক অবস্থানের বিষয়ে শুনতে চাই।

বেনজীর আহমেদ : দেশের ক্রান্তিকালে, সময়ের প্রয়োজনে র্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যদি ফ্লাশব্যাক করে ২০০৪ সালের দিকে একটু ফিরে তাকাই, তাহলে মনে পড়বে নিশ্চয় তখনকার ঢাকা শহর মানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী, সন্ত্রাস, এলাকার কুখ্যাত মাস্তান, গডফাদার, সেই সঙ্গে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই তথা জেএমবি জঙ্গিদের উত্থান।

জঙ্গি-সন্ত্রাসী বিভিন্ন বাহিনীর কাছে উলুখাগড়ার মতো মানুষের প্রাণ গেছে। এমনকি নিজ মায়ের কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশুও নিরাপদ ছিল না। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হত্যা, ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি, ন্যূনতম নিরাপত্তাহীনতায় যখন মানুষের নাভিশ্বাস, তেমনি একটি প্রেক্ষাপটে র্যাবের আবির্ভাব। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই র্যাব এসব অপরাধ ও অপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষাৎ যম হিসেবে আবির্ভূত হয়। শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই তথা জেএমবির তৎকালীন নেটওয়ার্ক র্যাবের হাতে নিশ্চিহ্ন হয়। ঢাকা শহর ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোও ধ্বংস হয়ে যায়। এ কারণেই র্যাব অতি অল্প সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের হৃদয় ও মনে আস্থা-বিশ্বাস ও সম্মানের আসনে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়।

সেই শুরু থেকে আজ অবধি র্যাব বাংলাদেশের গণমানুষের নিরাপত্তা, সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও আন্তরিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ফলে র্যাব রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।

নেতিবাচক যা কিছু সেসব এক শ্রেণির পরজীবী মানুষের নিরেট অপপ্রচার। এসব গোষ্ঠীর লোক দেশের কোনো কিছুতেই ভালো দেখতে পায় না। আর সেই সঙ্গে যদি দেশি-বিদেশি, দেশবিরোধী শক্তির আশকারা পাওয়া যায়, তাহলে তো ভূতে পাওয়া মানুষের মতো দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে শুধুই চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকে।

এসব গণশত্রুর মুুখে চুন-কালি দিয়ে র্যাব সাফল্যের সঙ্গে সাধারণ মানুষের অকৃপণ ভালোবাসা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং আগামী দিনগুলোতেও সরকারের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সৌহার্দ্যের ইস্পাত কঠিন আবহ বয়ে যাবে।

কালের কণ্ঠ : দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি আশানুরূপ নয়। মানুষ হতাশ। এ অবস্থায় র্যাব কিভাবে মানুষের আস্থাভাজন একটি বাহিনী হতে পারে?

বেনজীর আহমেদ : আসলে কি তাই, বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তা মনে করে না। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মতামত জরিপে বরং ভিন্ন চিত্রই উঠে এসেছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন খুবই ভালো।

আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সন্তুষ্টির মানদণ্ড কী? মূলত দুটি, পরিসংখ্যান ও পারসেপশন, উভয় মানদণ্ডেই পরিস্থিতি অনুকূল। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা এমন কোনো সমাজে বসবাস করি না, যেখানে ZERO বা শূন্য ক্রাইম আশা করা যায়। আসলে এ ধরনের কোনো রাষ্ট্র বা সমাজ বিশ্বের কোথাও নেই।

সমাজ থাকলে অপরাধ থাকবে কম কিংবা বেশি, আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থিতি উন্নততর দেখেই দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুতগতিতে বাড়ছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, বৃহদায়তন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। ঢাকায় প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক সভা, সেমিনার, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এগুলো সবই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ সরকারের ঈর্ষণীয় সাফল্য, যা অনুকূল ও সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য সম্ভব হচ্ছে।

তবে জঙ্গিবাদ ইস্যুটি আলাদা। এটিকে সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে গুলিয়ে দেখা ঠিক হবে না। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। দেশের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে এ সমস্যাকে আমাদের মোকাবেলা করে যেতে হবে। তবে আশার কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি ও কৌশলের আলোকে এ সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের অতীত ও সাম্প্রতিককালে অনেক সাফল্য রয়েছে।

কালের কণ্ঠ : নারায়ণগঞ্জে সাত খুনই শুধু নয়, আরো অনেক ঘটনায় র্যাব বিতর্কিত হয়েছে। দু-একজন সদস্যের জন্য পুরো বাহিনীর ওপর নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয়। তার পরও প্রশ্ন তোলা যায়, র্যাবের মতো অভিজাত একটি বাহিনী এ রকম ঘটনা কিভাবে এড়াতে পারে?

বেনজীর আহমেদ : আপনার প্রশ্নের সঙ্গেই এর যথোপযুক্ত উত্তর সন্নিবেশিত। আমরা যথাসম্ভব দক্ষ ও ভালো লোকজনকে র্যাবের জন্য বাছাই করে থাকি, সেটাই সরকারের নীতি। সার্ভিস সদর দপ্তরগুলো নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে বাছাই করে তাদের নিজ নিজ সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে প্রেষণে র্যাব ফোর্সেসে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রেরণ করে। তবে ব্যক্তি মনস্তত্ত্বকে কখনো পুরোপুরি শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যায় না, ব্যক্তি মনস্তত্ত্বকে অনেক কিছু যেকোনো সময় প্রভাবিত করতে পারে এবং সেটি যদি অপরাধমূলক বা অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে সে দায় সম্পূর্ণ ব্যক্তির।

এ কারণে র্যাবের নীতি অত্যন্ত পরিষ্কার ও স্পষ্ট। র্যাব কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায়ভার নেবে না।

নারায়ণগঞ্জের ঘটনা প্রথম র্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেই উঠে আসে। এ কারণে অপরাধীদের তাত্ক্ষণিকভাবে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে মাতৃ বাহিনীতে প্রেরণ করা হয়। সেই সঙ্গে পরবর্তীকালে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হলে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য মনিটরিং ও সুপারভিশনকে আরো জোরদার করা হয়েছে। তা ছাড়া র্যাবের নিজস্ব কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স রয়েছে। তাদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়টি লক্ষ রাখা হয়। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিরাপস মনোভাব নিয়ে শাস্তি বিধান করা হয়।

কালের কণ্ঠ : মানবাধিকার সংগঠনগুলো বরাবরই র্যাবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ তোলে। ক্রসফায়ার তার মধ্যে অন্যতম। বড় বড় অপরাধীর ক্রসফায়ারে মৃত্যু শুরুতে অনেক মানুষকে হয়তো নির্ভার করেছিল। কিন্তু পরে অনেক নিরপরাধ মানুষও ক্রসফায়ারে মারা গেছে বলে অভিযোগ আছে।

বেনজীর আহমেদ : মানবাধিকারসহ এ ধরনের স্বেচ্ছাসেবী প্রায় সব বেসরকারি সংস্থা পশ্চিমা অর্থপুষ্ট। তারা প্রাপ্ত তহবিলের বৃহদংশ ব্যয়ের মাধ্যমে বিলাসীজীবন নির্বাহ করে। ঝকঝকে অফিসে বসে, দামি গাড়ি হাঁকায়। অর্থের প্রবাহ ঠিক রাখার জন্যই তাদের কণ্ঠে দেশের চেয়ে বিদেশিদের স্বার্থ বা ইশারাই উচ্চারিত হতে দেখা যায়। পৃথিবীর সব দেশেই ল এনফোর্সমেন্ট কিলিংয়ের ঘটনা রয়েছে। দুর্ধর্ষ অপরাধী থাকলে, ভয়াবহ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী থাকলে এ ধরনের ঘটনা থাকবেই।

জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা অস্ত্র, গুলি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইনি কাঠামোর আওতায় প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ব্যবহার করার জন্য, শুধু পোশাকের অংশ হিসেবে প্রদর্শন কিংবা বহন করার জন্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর গড়ে এক হাজার ১০০ ব্যক্তি ল এনফোর্সমেন্ট কিলিংয়ের শিকার হয়ে থাকে। প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক দেশ ভারতেও এ ধরনের ঘটনা রয়েছে। উদাহরণের উপযুক্ত বলে মনে করি না বিধায় পাকিস্তানের কথা না হয় না-ই বললাম।

আমাদের দেশে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার নির্বাচিত হয়, উচ্চ আদালত ও গণমাধ্যম কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। বাংলাদেশের উচ্চকিত শিক্ষিত সিভিল সোসাইটি সদা সর্বদা দেশি-বিদেশি সবাইকে চমত্কৃত করে।

বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জবাবদিহি সুনিয়ন্ত্রিত। র্যাব কর্তৃক গোলাগুলির সময় নিহত প্রত্যেকের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক তদন্ত হয়ে থাকে। তা ছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের পৃথক ‘ইনকোয়ারি সেল’ কর্তৃক অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সরকার চাইলে যেকোনো সময় প্রশাসনিক তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। অভ্যন্তরীণ, নির্বাহী, বিচারিক ও সরকারি জবাবদিহির সঙ্গে মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি, সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও আমাদের এক ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি রয়েছে। তাই এসব ধুয়া তুলে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজকে অস্থিতিশীল করার কোনো চেষ্টাকেই আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ পছন্দ করে না। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এসব সংস্থার দুরভিসন্ধিমূলক প্রপাগান্ডাকে পাত্তা দেওয়ার সময় বেশ আগেই অতিক্রম করে এসেছে।

কালের কণ্ঠ : অভিজাত বলা হলেও আধুনিকতা বা সক্ষমতার বিচারে র্যাব অনেক পিছিয়ে আছে বলে কেউ কেউ বলছেন!

বেনজীর আহমেদ : র্যাব বরাবরই নিজেকে আধুনিক ও পারঙ্গম রাখতে পছন্দ করে। তার অফিসার লেভেল থেকে শুরু করে সর্বস্তরে নানা ধরনের দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ ও সরকারের সামর্থ্য অনুযায়ী অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে সে যুগোপযোগী থাকতে চায়। র্যাব সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য গাজীপুরের পোড়াবাড়ীতে একটি Well equipped ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক মানের জঙ্গিবিরোধী প্রশিক্ষণকেন্দ্রে উন্নীত করতে চাই।

কালের কণ্ঠ : কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এসেছে র্যাব ও এ ইউনিট থেকে। এর কারণ কী?

বেনজীর আহমেদ : CTTC ঢাকা মহানগর পুলিশের ৬০০ সদস্যের কমবেশি এক বছর বয়সের একটি সংগঠন। অধিক্ষেত্র মূলত ঢাকা মহানগর। RAB ফোর্সেস সন্ত্রাস দমনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এবং বাংলাদেশের সব শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে ১১ হাজার সদস্যের ১৩ বছরের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ একটি সংগঠন। আইনগতভাবে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের লিড ফোর্স। তাদের রয়েছে দীর্ঘ এক যুগের বেশি কাল ধরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী অপারেশন পরিচালনার অভিজ্ঞতা। অধিক্ষেত্র সমগ্র বাংলাদেশ।

তাই এখানে তুল্য-মূল্য বিচারের কোনো অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। আমরা মনে করি, এ ইউনিটটি সৃষ্টি করার ফলে জঙ্গি দমন প্রক্রিয়া আরো বেগবান হবে। সাম্প্রতিক সাফল্য তারই ইঙ্গিতবাহক (We can always Complement each other)| দেশের স্বার্থে এ ধরনের কার্যকর ইউনিট সৃষ্টিকে আমরা স্বাগত জানাই। র্যাবের পক্ষ থেকে CTTC-র কার্যকলাপ সম্পর্কে কোনো পাল্টা বক্তব্য দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

কালের কণ্ঠ : পুলিশ ও র্যাবের মধ্যে বোঝাপড়ার কি ঘাটতি আছে?

বেনজীর আহমেদ : র্যাব ও পুলিশের মধ্যে বোঝাপড়ার কোনো ঘাটতির বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে অবগত নই। আমাদের মধ্যে ভালো কাজের নিশ্চিত প্রতিযোগিতা রয়েছে। কোনো দ্বন্দ্ব থাকার সুযোগ নেই বলেও আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আমরা পুলিশের আমব্রেলার মধ্যেই কাজ করি। আমাদের এখানে অবশ্যই কনটেস্ট থাকবে, তবে কোনো কনফ্লিক্ট নয়। এতে শেষমেশ দেশ ও আমাদের জাতিই উপকৃত হবে।

কালের কণ্ঠ : প্রচলিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবের মতো অভিজাত বাহিনী কেন একটি রাষ্ট্রকে রাখতে হবে?

বেনজীর আহমেদ : উন্নততর পৃথিবীতেও অপরাধ নিরিখে এ ধরনের বাহিনী রয়েছে। প্রচলিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধারণত তাদের নিয়মিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। পক্ষান্তরে বিশেষ বাহিনী বিশেষ ধরনের অপরাধ, যেমন র্যাব আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অবৈধ অস্ত্র, মাদক নির্মূলে কাজ করে থাকে। সব দেশেই রাষ্ট্রীয় বিশেষ প্রয়োজনে যেমন বিশেষ বাহিনী থাকে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।

কালের কণ্ঠ : জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় র্যাবের ভূমিকা সম্পর্কে বলুন।

বেনজীর আহমেদ : সৃষ্টিলগ্ন থেকেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় র্যাবের ভূমিকা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। জেএমবি থেকে শুরু করে এ দেশে জঙ্গিবাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে র্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। আপনারা জানেন, র্যাব কর্তৃক একের পর এক সাফল্যজনক অভিযানের ফলে জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন নেটওয়ার্ক বিপর্যস্ত হয়ে যায়, ভেঙে পড়ে। পরে মাওলানা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে তারা আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৯ সালে আমি দেশে ফিরে পুলিশ সদর দপ্তরে ডিআইজি প্রশাসন ও অপারেশন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। এ সময়ে তদানীন্তন আইজিপি মহোদয়ের সম্মতিতে পুলিশ সদর দপ্তরের কতিপয় ছোটখাটো সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে সেখানকার Lawful Interception Cell-এর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি।

তাত্ক্ষণিক ফলাফল হিসেবে এ ইউনিট মাওলানা সাইদুর রহমানকে জেএমবির নতুন আমির হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। কিছুদিনের মধ্যে আমরা তার অবস্থান জেনে যাই। ২০১০ সালে মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হয়। এ জন্য আমি আমার প্রথম BMP পদক লাভ করি।

২০১০ সালে মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেএমবি আবার নেতৃত্বসংকটে নিপতিত হয়। একপর্যায়ে বিপর্যস্ত ও ফেরারি কয়েকজন জঙ্গি জেলে আটক থাকা মাওলানা সাইদুর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেদের মধ্য থেকে একজন আমির নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ পর্যায়ে প্রায় ছিন্নভিন্ন জেএমবিতে ভাঙন ধরে।

জয়পুরহাটের মাদরাসা গ্র্যাজুয়েট ১৯৯৬ সাল থেকে এলাকা থেকে পলাতক জেএমবির জঙ্গি সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক মাওলানা সাইদুর রহমানের বিরোধী গ্রুপের আমির হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।

২০১৩ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ও কানাডার নাগরিক জঙ্গি তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

তার এ দেশে প্রবেশের ৮-৯ মাস পরে বিষয়টি আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গোচরীভূত হয়। এর পর থেকে মূলত আমাদের দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে প্রবেশ করে ‘জুনুদ-আত-তাওহীদ’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের গোড়াপত্তন করে।

অন্যদিকে তামিম সম্পর্কে বিলম্বে তথ্য পাওয়া গেলেও তাকে চিহ্নিত করার মতো ন্যূনতম সূত্র, যেমন তার বাংলাদেশে প্রবেশের সুনির্দিষ্ট তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, নিদেনপক্ষে একটি হলেও ছবি, কানাডার ঠিকানা, বাংলাদেশে ছেড়ে যাওয়া পিতৃকুলের ঠিকানা ইত্যাদি খুঁজতে আমাদের গলদঘর্ম হতে হয়। যৌক্তিক কারণেই আগে থেকে এগুলো আমাদের কাছে ছিল না।

২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল জেএমবির সারোয়ার গ্রুপ ও তামিমের সংগঠন একীভূত হয়ে বাংলাদেশে ইসলামী শাসন বা ‘দাওলাতুল ইসলাম’ কায়েমের জন্য যৌথ স্বাক্ষরে আরেকটি সংগঠনের জন্ম দেয়। সারোয়ার জাহান একীভূত গ্রুপের আমির নির্বাচিত হয়। এ সময় গোপন সংগঠনের ধারা অনুযায়ী ‘সারোয়ার ইব্রাহীম আবু আল হানিফ’ ও তামিম চৌধুরী ‘আবু দোজানা’ নাম গ্রহণ করে। তারা পরে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়, কাদিয়ানি মসজিদ, অন্যান্য ধর্মের পুরোহিত এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশি-বিদেশি নাগরিক হত্যাচেষ্টাসহ সর্বশেষ ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলা পরিচালনা করে।

বিধ্বংসী গ্রুপের নেতা সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে ইব্রাহীম আবু আল হানিফ র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার প্রচেষ্টাকালে পাঁচ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।

তবে তার আস্তানা থেকে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের জঙ্গি সংগঠন ও কার্যক্রম সম্পর্কে বিশাল তথ্যভাণ্ডার আবিষ্কৃত হয়। তামিম চৌধুরী ওরফে আবু দোজানাও পরে একই পরিণতি লাভ করে।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে র্যাব এ পর্যন্ত এক হাজার ৩০৪ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে।

১ জুলাই-পরবর্তীকালে র্যাব ১২৩ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে, সাতজন জঙ্গি র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। এ সময় আমরা নারী জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করি। তা ছাড়া জেএমবির (সা-তা গ্রুপের) প্রপাগান্ডা ওয়েবসাইট আৎ-তামকীনের অ্যাডমিনসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ দর্শন ও তার বাস্তবায়ন কৌশলের অংশ হিসেবে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে আমরা জঙ্গি দমনে জনসম্পৃক্ততার দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করি।

এ লক্ষ্যে দেশে হাজার হাজার জঙ্গিবিরোধী পোস্টার/লিফলেট বিতরণ করা হয়। ১ জুলাই ঘটনার ১০ দিনের মধ্যে আমরা Report 2 RAB নামে একটি App প্রচলন করি, যাতে সাধারণ মানুষ জঙ্গিসংক্রান্ত তথ্য সহজেই আমাদের জানাতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জঙ্গিদের ফিরে আসার আহ্বানে সাড়া দিয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করি এবং ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাই।

এতে এ পর্যন্ত মোট সাতজন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। এটি একটি অনন্য নজির বটে।

এ কথা অনস্বীকার্য যে Robust Law Enforcement ও জনসম্পৃক্ততার পাশাপাশি জঙ্গি দমনের জন্য Counter Narrative, Deradicalization, Counter Radicalization, Rehabilitation, Psychological Counselling, Vocational Training ও Cultural Reorientation কর্মসূচি অত্যন্ত জরুরি।

এসব দায়িত্ব এককভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয়। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি অপেক্ষার নীতিতে বিশ্বাসী নই। এর মধ্যেই আমরা ‘কতিপয় বিষয়ে জঙ্গিবাদীদের অপব্যাখ্যা ও পবিত্র কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা’ নামে একটি Counter Narrative তৈরি ও উন্মুক্ত করেছি। এটি বই হিসেবে পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে বাংলা ও ইংরেজিতে আমাদের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে।

কালের কণ্ঠ : র্যাব কি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে?

বেনজীর আহমেদ : র্যাব বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটি সংগঠন। আমরা নৈতিক ও পেশাগতভাবে রাষ্ট্র ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। অন্যদিকে একটি গণতান্ত্রিক ও সভ্য দেশ হিসেবে আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে আইনের আওতায়, আইনসম্মতভাবে যেকোনো পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমরা সর্বাংশে সক্ষম।

কালের কণ্ঠ : জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ও গ্রেপ্তার সম্পর্কে কিছু বলুন।

বেনজীর আহমেদ : প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বিশ্বের সর্ববৃহৎ গড়ান বনাঞ্চল সুন্দরবন। প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে ১৯৯৭ সালে ইউনেসকো ৫২২তম বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণার পর পর্যটনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সমগ্র পৃথিবীতে এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। কিন্তু তিন দশক ধরে জলদস্যু ও বনদস্যুরা সুন্দরবন ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় চালিয়ে আসছে সংঘবদ্ধ দস্যুতা। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বৈধ মত্স্য আহরণ, কাঁচামাল আহরণ, পর্যটনশিল্প, জেলে, মৌয়াল, বাওয়ালি তথা উপকূলবর্তী মানুষের জীবন-জীবিকা, সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল জাতীয় অর্থনীতি। উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব কয়েক বছর ধরে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জলদস্যু ও বনদস্যুদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। নিষ্ঠা, পেশাদারি ও বিচক্ষণতার সন্নিবেশনে উপর্যুপরি সফলতাও পেয়েছে র্যাব। অদ্যাবধি ১২টি সক্রিয় বাহিনীর মোট ১৩২ জন জলদস্যু ও বনদস্যু র্যাবের সহায়তায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগ্রহে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করেছে। এ ছাড়া ২১৯ জন সক্রিয় সদস্য এর আগেই র্যাব কর্তৃক আটক হয়েছে। উল্লেখ্য, ওই এলাকায় আরো তিনটি সক্রিয় ও ছয়টি নিষ্ক্রিয় গ্রুপের অস্তিত্ব রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য র্যাবের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেসব জলদস্যু ও বনদস্যু এর মধ্যেই আত্মসমর্পণ করেছে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে র্যাব, স্থানীয় পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সার্বক্ষণিক মনিটরিং থাকতে হবে, যাতে বর্তমান দস্যুদের অনুপস্থিতিতে সৃষ্ট শূন্যতা অন্য কেউ পূরণ করার দুঃসাহস না দেখাতে পারে। এভাবেই আমরা এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করতে পারি। এতে সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকার জলদস্যু ও বনদস্যুদের উৎপাত এখন নেই বললেই চলে। মত্স্যজীবী, বনজীবীরা এখন নির্বিঘ্নে জীবিকা অর্জন করতে পারছে।

কালের কণ্ঠ : জঙ্গিবাদ নির্মূল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাব একটি গবেষণাকাজ করছে। এ গবেষণা কী ফল বয়ে আনবে?

বেনজীর আহমেদ : ঠিকই শুনেছেন। আমরা রিসার্চ করছি উত্তরাঞ্চলে কেন তুলনামূলকভাবে জঙ্গি বেশি সৃষ্টি হয়? জঙ্গিদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। এর কারণগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে খোঁজার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, একমাত্র ‘রোবাস্ট পুলিশিং’-এর মাধ্যমে জঙ্গি দমন সম্ভব নয়। জঙ্গি ধরে নিয়ে এলাম, জেলে পাঠালাম, অভিযানে দু-একজন মারা গেল, শুধু এটা নয়। এর পাশাপাশি আমাদের অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। গোড়ায় যেতে হবে, শিকড়ে যেতে হবে। রিসার্চ থেকে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনাগুলোকে বই আকারে আমরা প্রকাশ করব।

কালের কণ্ঠ : সম্প্রতি সুইডিশ রেডিওতে র্যাবের একজন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে এবং তিনি সেখানে র্যাব কর্তৃক মানুষ খুন করার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

বেনজীর আহমেদ : বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। প্রায় দুই ঘণ্টার রিপোর্টটিতে উপস্থাপকের বর্ণনাই বেশি। তথাকথিত র্যাব কর্মকর্তার নামে যে কণ্ঠ চালিয়ে দেওয়া হয়েছে তা অস্পষ্ট।

বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের একটি রেডিও আকস্মিকভাবে বাংলাদেশের একটি বাহিনী সম্পর্কে আগ্রহী হয়েছে। অত্যন্ত যত্ন, তরক্কির সঙ্গে তাদের দাবি মতে র্যাবের একজন কর্মকর্তার গোপন সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে, দৌড়ে সুইডিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের সাক্ষাৎকার ও মতামত নিয়েছে এবং দৌড় না থামিয়ে লন্ডন পৌঁছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরিপূরক কমেন্ট নিয়েছে, তারপর বাংলাদেশে আত্মীয়তার সূত্রে মাঝেমধ্যে বসবাসকারী ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারী জনৈক বিদেশি ব্যক্তি সুইডিশ রেডিওর ফেসবুক লিংক তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন এবং সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে বাংলাদেশে এটি ছড়ানোর ব্যবস্থা নিলেন। যাচাই-বাছাই না করে এখানকার দু-একটি পত্রিকা আগ বাড়িয়ে এ নিউজ ছেপেও দিল। পুরো ঘটনাক্রমের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, কোনো প্যাটার্ন ইঙ্গিত করে কি না আমরা সে বিবেচনায় যাচ্ছি না।

র্যাব ফোর্সেস বাংলাদেশের প্রচলিত আইনি কাঠামোর আওতায় কর্তব্যরত ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পেশাদার বাহিনী। এখানে প্রত্যেকেই আইন মেনে তার দায়িত্ব পালনে বাধ্য। যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করে বেআইনি কোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, তাহলে তার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সেই সদস্যের ওপর বর্তায়। আমরা বলতে পারি, র্যাব ফোর্সেসের কেউ অপকর্ম করে রেহাই পাবে না।

কালের কণ্ঠ : আগামী দিনে এ বাহিনীকে কী অবস্থায় দেখতে চান আপনি?

বেনজীর আহমেদ : ভবিষ্যতে এ বাহিনীকে একটি চৌকস, পেশাগত ও দ্রুত সাড়াদানকারী বাহিনী হিসেবে দেখতে চাই। একটি অত্যাধুনিক অতিক্ষিপ্র বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই; যে বাহিনী হবে রোবাস্ট, টেকনোলজিক্যালি এনরিচড ও আরো ইকুইপড। আপনারা এর মধ্যেই জানেন যে সরকার র্যাবকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।

কালের কণ্ঠ : সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

বেনজীর আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *