অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধের দাবি সংসদে

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

অপ্রয়োজনীয় সিজার অপারেশন বন্ধের দাবি জানিয়েছের সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগম মুক্তা। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৭১ বিধিতে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নোটিশ উত্থাপন করে তিনি এ দাবি জানান।

সংরক্ষিত আসনের এই সাংসদ বলেন, ইদানীং উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ প্রসূতিদের সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পরিসংখ্যান অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আশঙ্কাজনক। অস্ত্রোপচারের মধ্যেমে সন্তান প্রসব করা যাবে তখনই- যখন প্রসবকালীন জটিলতার কারণে শুধু প্রসুতি মায়েদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে শিক্ষিত ও ধনী মানুষের মধ্যে অস্ত্রোপচারের প্রবণতা বেশি। কিন্তু অস্ত্রোপচার আসলেই প্রয়োজন হলে সেটা ধনী-দরিদ্র শ্রেণি বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। সবার জন্য তা সমান দরকার।

তিনি বলেন, বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে ৮০ শতাংশ সন্তান প্রসব হচ্ছে সিজারিয়ান এর মধ্যেমে, যাকে আমি ‘এলার্মিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। বিশেষ করে পরিবারগুলো যত ধনী হচ্ছে তত বাড়ছে সিজারিয়ানের হার, মেডিকের ইন্ডিকেশন মেনে চললে ধনী-দরিদ্র সবক্ষেত্রে এর হার এক হতো।

নূরজাহার বেগম বলেন, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০১৪ থেকে জানা যায়, দেশের হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে ১০ জন শিশুর মধ্যে ৬ জন শিশুর জন্ম হয় সিজারিয়ানের মাধ্যমে। বিডিএইচএস জরিপে আরো জানা যায়, ২০০৭ সালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে ৯ শতাংশ, ২০১১ সালে ১৭ শতাংশ, ২০১৪ সালে ২৩ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রচলিত স্বাস্থ্য বুলেটিন ২০১৫ তে দেখা যায়, দেশের উপজেলাতে সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশুর জন্মর সংখ্যা প্রায় ৮ গুন বেড়েছে। ২০১৩ সালে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে সন্তান প্রসবের জন্য ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২১ জন প্রসূতি মা ভর্তি হন। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ৮৬৮ জন স্বাভাবিক প্রসব, আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩ জনের শিশুর। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০০ প্রসূতির মধ্যে সতকরা ৮০ জনেরই স্বাভাবিক প্রসব করানো যেত।

এই নারী সাংসদ বলেন, উদ্ভৃত পরিস্থিতিতে মা ও শিশুকে রক্ষা করার জন্য অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বন্ধ করা প্রযোজন। সে জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন, সুনির্দিষ্ঠ মানদণ্ড মেনে চলার ভিত্তিতে হাসপাতাল ক্লিনিক ইত্যাদির প্রদান ও নবায়ন করার বিধান চালু করা, প্রসূতিবিদদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, নিরীক্ষণ, জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা, অত্যাবশ্যকীয় সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজনীয়তা এবং অনাবশ্যক সিজারিয়ানের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালানো, মান নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিকতা নিশ্চিত করণের ক্ষেত্রে অবসটেট্রিক ও গাইনিগুলো জিকেল সোসাইটি অব বাংলাদেশকে (ওজিএসবি) পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *