সোনাগাজীতে পানির অভাবে ক্ষতির মুখে তিন হাজার হেক্টর বোরো

*দ্রুত পানি সরবরাহ অথবা বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার দাবি কৃষকদের
*কোটি কোটি টাকার লোকসান গুণতে হবে কৃষকদের
*প্রনোদনা দিয়ে কৃষক বাঁচানোর দাবি

সৈয়দ মনির আহমদ:
ফেনীর সোনাগাজীতে বোরো চাষ করে পানির অভাবে ক্ষতির মুখে হাজারো কৃষক। বোরো মৌসুমে ধান চাষ করে পানির সংকটে পড়েছেন তারা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুহুরী সেচ প্রকল্প কৃষকদের চাষাবাদের কাজে আসছেনা। উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা জুড়ে ৫২টি খাল রয়েছে। মুহুরী নদীতে মিঠা পানি, বড় ও ছোট ফেনী নদীতে নোনা পানি থাকলেও বাধার কারনে খালগুলোতে পানি যাচ্ছেনা। গত কয়েক বছর যাবৎ শত কোটি টাকা ব্যায়ে খালগুলো সংস্কার করা হয়েছিল। তবুও খালে পানি আসছেনা। পানি পাওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন প্রতিকার পায়নি কৃষকরা। সকল দপ্তর থেকে খালে পানি সরবরাহ করার আশ্বাস দিলেও খালগুলোতে এখনো পানি সরবরাহ হয়নি। অনেক কৃষক গ্রামের পুকুর থেকে পানি কিনে জমিতে সেচ দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, সোনাগাজী উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৫শত হেক্টর। আবাদ হয়েছে এক হাজার ৮শত হেক্টর। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল (উফশী) এক হাজার ৫শত হেক্টর ও হাইব্রিড চাষ হয়েছে ৩শত হেক্টর। এছাড়া ব্যাক্তিগত পর্যায়ে আরো এক হাজার দুইশত হেক্টর চাষাবাদ হয়েছে। চাষকৃত ধাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিআর-১৬, ব্রি-২৮, ২৯, ৬৭, ৬৮,৭৪, ৮৮, ৮৯, ৯২, বিনা-১০, ২৪, হাইব্রিড ব্র্যাক-১১, রূপালী, দোয়েল, সম্পদ, হীরা-২, ময়না, টিয়া।
বোরো আবাদের বিষয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপকূলীয় এ উপজেলায় কৃষকদের নিরব কান্না যেন দেখার কেউ নাই। মৌসুমের শুরুতে কৃষি দপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পানি দেয়ার কথা বলেছিলেন। তাই কৃষকরা লক্ষমাত্রার চেয়ে অধিক আবাদ করেছেন। এখন কেউ দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। শুরুর দিকে পানি থাকলেও এখন খালে কোন পানি নেই। ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফাটল দেখা দিচ্ছে অনেক জমিতে। সব দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে তবুও সরজমিনে কেউ দেখতে আসেননি। তারা সব চেষ্টা করে যাচ্ছেন, জমি ও চারা রক্ষার জন্য। প্রনোদনা দিয়ে হলেও বোরো আবাদ রক্ষার দাবী কৃষকদের।
চর ছান্দিয়ার কৃষক আবদুস সালাম জানান, খালে পানি না থাকায় পুকুর থেকে পানি কিনে জমিতে দিয়েছেন। কিন্তু সেই পুকুরের পানিও শুকিয়ে গেছে। সদর ইউনিয়নের চরখোয়াজ গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বড় আশা করে দেড় একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। পানি সংকটে আমিসহ অনেক চাষীর মাথায় হাত পড়েছে। পানির সংকটের কারনে আমাদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। চরচান্দিয়া ইউনিয়নের লন্ডনী পাড়ার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি ও তার কয়েকজন সহযোগি কৃষক ব্যাংক, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৫০একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। পানি সরবরাহের জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। ধানক্ষেত পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সামনে বৃষ্টি না হলে বিকল্প ব্যবস্থা করে হলেও বোরোর জমি রক্ষা করতে হবে। চরগণেশ গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সেচ কার্ড দিয়েছেন। পানির জন্য টাকাও রিচার্জ করেছি। পানিও পাচ্ছিনা রিচার্জকৃত টাকাও ফেরৎ পাচ্ছিনা। চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের ওসমান গণি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দিয়েছেন এক ইঞ্চি কৃষি জমিও যাতে খালি না থাকে। অথচ আমরা চাষাবাদ আজকে নিঃশ্ব হয়ে গেছি। সবুজ ধান ক্ষেতে পানির অভাবে চারখার হয়ে যাচ্ছে। পানি না পেলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৫শত হেক্টর। আবাদ হয়েছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর। দ্রুত সময়ের মধ্যে খালে পানি সরবরাহ করতে না পারলে ধানের চরম ক্ষতি হবে। এতে কৃষকদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হবে। এর ফলে আমাদের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ভেস্তে যাবে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। পানি সংকটের কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগামীতে বোরো সহ অন্য ফসল চাষেও আগ্রহ হারাবেন।

সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, কৃষকদের পানি সমস্যার কথা আমরা জেনেছি। নিয়মিত পাউবো কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পাউবো কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান ভূঞা বলেন, বেশ কয়েকটি খালে মাটি ভরাট হয়ে গেছে। কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে পাউবোর প্রকল্প পরিচালক রাফিউজ সাজ্জাদ খালগুলো পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পেশ করেছি। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় নদীর পানির নাব্যতাও সংকট রয়েছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *