ফেনী কাস্টমসের নিলাম সিন্ডিকেটের দখলে: কমছে রাজস্ব আদায়

ফেনী :
ফেনী কাস্টমস’র নিলামে প্রতিবারই ঘুরেফিরে একটি সিন্ডিকেটের হাতেই পণ্য উঠে। অয়ন এন্টারপ্রাইজ নামের এই প্রতিষ্ঠানটির দখলে ফেনী কাস্টস’র নিলাম। এই প্রতিষ্ঠানের ছত্র-ছায়ায় কাগজে-কলমে তিনটি প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশগ্রহণ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা দেখিয়ে অয়ন এন্টারপ্রাইজকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। গত ১০ বছর প্রতিবারই এই প্রতিষ্ঠানটি দুই ধরনের টেন্ডারে বিজয়ী হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের সহযোগীতা করছে কাস্টমসের এক উপ-পরিদর্শক ও গুদাম কর্মকর্তাসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। নিলামে সিন্ডিকেট হওয়ার কারনে ন্যায্য মুল বা উপযুক্ত রাজস্ব পাচ্ছেনা সরকার।

জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী নিলামের আগে পণ্যের বাজারদর যাচাই-বাছাই করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরপর কাস্টমস ডিউটি ও চার্জ যুক্ত করে সংশ্লিষ্ট পণ্যের প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করার কথা বলা রয়েছে আইনে। কোনো পণ্যের প্রথম নিলামে প্রাক্কলিত দরের ৬০ শতাংশ দর পেলে তা বিবেচনায় আনা হয়। অন্যথায় দ্বিতীয় দফা নিলাম আহ্বান করতে বলা হয়েছে। প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় বেশি দর পেলে নিলামে ওঠা পণ্য বিক্রি করা যাবে। অন্যথায় আহ্বান করতে হবে তৃতীয় দফা টেন্ডার বা দরপত্র। সর্বশেষ এ দরপত্রে দাম যা উঠবে তাতেই পণ্য দিতে বাধ্য থাকবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আইনের এ ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে ইচ্ছামতো দামে পণ্য ভাগিয়ে নিচ্ছে নিলাম থেকে। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বার বার একই প্রতিষ্ঠান সুবিধা নিচ্ছে।

নিলামে অংশ নেওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক জনপ্রতিনিধি ও আ’লীগ নেতা হওয়ায় কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তার সাথে চুক্তি করে নিলামে অংশ নিচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে এ অনিয়ম চললেও নিলাম প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ঘুরেফিরে একই প্রতিষ্ঠান কেন নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হচ্ছে সেটিও খতিয়ে দেখা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি লাইসেন্স’র এক স্বত্বাধিকারি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমসের নিলাম ঘিরে সক্রিয় রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। দর নিয়ে এসব সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে যথাসময়ে অনেক নিলামই সম্পন্ন করা যায় না। ওই সিন্ডিকেটের ভয়ে কেউ দরপত্র দাখিল করতে সাহস পায়না। নিলাম প্রস্তুতের সাথে সাথেই ওই সিন্ডিকেট সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। দপ্তরে গেলেও তথ্য দিতে রাজি হয়না কাস্টস’র কর্মকর্তারা। সাম্প্রতিক সময়ে সিন্ডিকেটের এক কর্তা নিলামে অংশ নিতে আগ্রহী কয়েকজনকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি। এসব কারণে নিলামের সংখ্যা কমছে এবং কমছে রাজস্ব আদায়।

সম্প্রতি নিলামে বিজয়ী অয়ন এন্টারপ্রাইজ’র স্বত্বাধিকারি আমির হোসেন বাহার বলেন, কাস্টমস নিলামে নিয়মিত আমরা অংশগ্রহণ করার জন্য কোটেশন জমা দিয়ে থাকি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান বাজার যাচাই বাচাই ও বিশ্লেষণ করে থাকি। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে কত টাকার দরপত্র দিলে ব্যবসায় লাভবান হবো এবং নিলাম পাবো সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখে এই নিলামে অংশগ্রহণ করি। অভিজ্ঞতার কারনেই নিলাম প্রতিযোগিতায় আমরা বিজয়ী হই।

ফেনী কাস্টমসের গুদাম কর্মকর্তা মকবুল হোসেন বলেন, ফেনী কাস্টসে সিল নিলাম প্রায় ৫বছর আগে হয়েছে। ওপেন নিলাম হয়েছে অক্টোবরে বিজিবির জব্দকৃত ছয়টি গরু। সেই নিলাম সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে অয়ন এন্টারপ্রাইজ পেয়েছেন।
ফেনী কাস্টমস’র উপ-কমিশনার বাবুল ইকবাল বলেন, কাস্টমস নিলামে ই-টেন্ডার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঘরে বসেই অনলাইনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রেরণ করে নিলামে অংশগ্রহণ করা যাবে। অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা, নিলাম প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা, পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতেই অনলাইনে নিলাম করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোন সিন্ডিকেট বা চক্র আছে কী না আমাদের জানা নেই। যে প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হবে তাকে বিজয় ঘোষণা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *