সিলেটে স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আশষ্কা : বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

আবুল কাশেম রুমন,সিলেট:
সিলেট জুড়ে বন্যা বিপর্যয়ের এবার স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক নানা ব্যাধী রোগের আশস্কা রয়েছে। পানিবাহিত বিভিন্ন সংক্রামক রোগসহ নানা কারণে বন্যাপীড়িত এলাকায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা রয়েছেন চরম ঝুঁকিতে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের তথ্যমতে, গেল ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৬ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬২ জন। বাকীরা চর্মরোগ সহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ জন, বাকীরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে সুনামগঞ্জে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৬ জন। এরমধ্যে ৯২ জন ডায়রিয়া বাকীরা অন্যান্য রোগে। হবিগঞ্জ জেলায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২০৩ জন। এর মধ্যে ৯৯ জন ডায়রিয়া ও বাকীরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৯ জন। এর মধ্যে ৭৪ জন ডায়রিয়া বাকীরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত।
এদিকে গত সপ্তাহ থেকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হয়। এই এক সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৮৫ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৪৬৫ জন, সুনামগঞ্জে ৫৪৫ জন, হবিগঞ্জে ৪৮৭ জন ও মৌলভীবাজারের ৩৮৮ জন রয়েছেন। এই সময়ে ডায়রিয়া ছাড়াও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সহ¯্রাধিক বন্যা কবলিত মানুষ। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবের বাইরে বিপুল সংখ্যা মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। নগর থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, বিভিন্ন বাজার, এমনকি পাড়া মহল্লার ঔষুধের দোকান গুলোতে ডায়রিয়া, চর্মরোগ সহ পানিবাহিত রোগের ঔষুধ বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। কয়েকটি ফার্মেসীর সাথে আলাপকালেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

সিলেটের বন্যাকবলিত প্রতিটি এলাকায় ভয়াবহ স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোগব্যাধি বাড়বে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুযোগ না থাকায় বাড়তে পারে করোনা। এ সময় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুন গুনিয়ার প্রকোপ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকার সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই সেখানে জলাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্যসমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যার কারণে বাথরুম ও সেনিটারী টয়লেট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকেই নদীর আশপাশে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করছে। মানুষের এ পয়োবর্জ্য এবং ওই এলাকার বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা মিলে জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। লোকজন তখন যদি এসব জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ না করে পান করে, খাবারের কাজে ব্যবহার কিংবা থালাবাসন ধোয়া, কাপড় কাচা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করে, তখন ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগবালাই হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট বিভাগে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৪১ জন। তারা ডায়রিয়া, চর্মরোগ সহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটের ২ হাজার ২৫৭ জন, সুনামগঞ্জের ৫৪৭ জন, হবিগঞ্জের ১ হাজার ৭ জন ও মৌলভীবাজারের ৭৩০ জন রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *