জনশক্তি রপ্তানি অফিস দুর্ণীতির আখড়া

ফেনী প্রতিনিধি : ৫টি টেবিলে বিদেশ গমনেচ্ছুদের ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রম। নির্বিঘ্নে চলছে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা আদায়। বাইরে সুনসান নিরবতা, কোন পুলিশ-আনসার সদস্যের দেখা না মিললেও দালাল চক্রের আনাগোনা রয়েছে চোখে পড়ার মত। বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায় এটি কোন সরকারি অফিস। ফেনী শহরের শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়কের তিন তলা ভবনের নিচ তলায় একটি ভাড়া ভবনে চলছে ফেনী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কার্যক্রম। বুধবার সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টা। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে আসেন সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের জনৈক আবুল হোসেন। ভিতরে প্রবেশ করলেই তাকে ডেকে নেন হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ খান। তার কাছ থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে অফিস পিয়ন আমিনের মাধ্যমে ৫শ টাকা আদায় করেন। শুধু আবুল হোসেনই নয়, এভাবে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অহরহ টাকা আদায় করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এদের আরেকজন সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আবুল কালাম জাবেদ। সম্প্রতি জনশক্তি অফিসে গেলে সিরিয়ালের অজুহাত দিয়ে কয়েকদিনের সময় দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিছুক্ষন পরই ভিন্ন চিত্র। তিনি জরুরী ভিত্তিতে ৫শ টাকা দিয়ে স্বল্পসময়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে দেন। ভুক্তভোগী ও আশপাশের লোকজন জানালেন, এ চিত্র নিত্যদিনের।
বুধবার প্রায় শতাধিক ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়। এর আগের দিন মঙ্গলবার ১শ ৩৭ ও সোমবার ১শ ৮০জন ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েছেন। প্রতিদিন শতাধিক ব্যক্তি এখানে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে থাকেন। উপরি ছাড়া ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে নানা জটিলতায় পড়তে হয়।
জানা গেছে, বিদেশ গমনেচ্ছুদের নানা সুবিধা প্রাপ্তির পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা পেতে গত দু’মাস আগে ফেনীতে জনগুরুত্বপূর্ণ এ কার্যালয়ে ৫টি কম্পিউটার ও ২টি ফিঙ্গার প্রিন্ট স্থাপন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে দূর্ভোগ কমিয়ে সহজভাবে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতেই ফেনী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়কে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে নোয়াখালী জেলা সদরে যেতে হত। প্রতিদিন বিদেশ যেতে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এখানে গড়ে উঠেছে দালাল সিন্ডিকেট। অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে দালাল চক্র ফরমের নামে গ্রাহকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করছে। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম গ্রাহকদের সহযোগিতা করতে কয়েকজন যুবককে দায়িত্ব দেন। এদের মধ্যে বাবু, বাপ্পী, জাহিদ, রুবেল সহ একটি চক্র নিজেদের তৈরি ফরম পূরন করিয়ে হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে। সংঘবদ্ধ এ চক্রকে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে স্বয়ং সহকারি পরিচালক নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তিনি ফেনী ও চাঁদপুর জেলার সহকারি পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। সপ্তাহে একদিন চাঁদপুরে অফিস করেন। প্রতিষ্ঠানটির ভেতর-বাইরে দালালদের বেপরোয়া দাপটে চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এছাড়া হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ খান ছাড়াও রেজিষ্ট্রার্ড হামিদুল ইসলাম ও অফিস পিয়ন আমিনও তাদের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানে কোনো টাকা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও টাকা নেয়াই যেন নিয়ম। ফিঙ্গার প্রিন্টে ফরম পূরনের নামে বিনারশিদে টাকা দিতে হয় জনপ্রতি ৫শ থেকে ১ হাজার। অবশ্য কেউ কেউ নানা তদবীর করে আরো কমও দিয়ে থাকেন বলে দালাল চক্রের এক সদস্য অকপটে এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, প্রতিদিন শতাধিক গ্রাহক সিরিয়ালের মাধ্যমে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেন। কিন্তু টাকা আদায় করে কতিপয় দালালরা নির্ধারিত সিরিয়াল না মেনে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেন। তবে অনেকেই হয়রানির ভয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তারা জানান, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই ফিঙ্গার প্রিন্ট আটকে দেয়া হতে পারে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফেনী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারি পরিচালক নিজাম উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *