ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনী সদর উপজেলাকে ভেঙ্গে আরেকটি উপজেলা গঠন করা যেতে পারে। একইভাবে দাগনভূঞা ও সোনাগাজীর সীমানা পুর্নবিন্যাস করেও হতে পারে আরেকটি উপজেলা। বড় উপজেলার সীমানা পুর্নবিন্যাস করে উপজেলার সংখ্যা বাড়লে প্রশাসনিক কাজে যেমন গতি বাড়বে তেমনি সরকারি সেবা জনগনের দোৗরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সহজতর হবে। এছাড়া ৬ থেকে ৭ উপজেলা হলে ফেনী জেলা সি ক্যাটাগরি (তৃতীয় শ্রেণি) থেকে বি ক্যাটাগরি (দ্বিতীয় শ্রেণি) তে উন্নীত হবে। এতে করে এই জেলার মর্যাদা যেমন বেড়ে যাবে তেমনি উন্নয়ন-অগ্রগতি আরো গতিশীল হবে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ফেনী মহকুমা ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়। এর আগে ফেনী ছিল নোয়াখালী জেলার অধীন। ৫ উপজেলা নিয়ে তৎকালীন এরশাদ সরকার ফেনী জেলা প্রতিষ্ঠা করে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী পূরণ করেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজ নির্বাচনী এলাকা পরশুরাম উপজেলাকে ভেঙ্গে ফুলগাজীতে আরেকটি উপজেলা প্রতিষ্ঠা করেন। যা তার সরকারের আমলেই বাস্তবায়ন হয়। এর আগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ফুলগাজীতে থানা প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে পরশুরাম উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। অন্যদিকে ফুলগাজীতে রয়েছে ৬টি ইউনিয়ন। এছাড়া ছাগলনাইয়া উপজেলায়ও ৬ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। সে বিবেচনায় সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলায় আয়তনের দিক থেকে অধিক বড়। কেবল সদর উপজেলাকে পুনর্গঠন করেই আরেকটি উপজেলা গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া সোনাগাজী-দাগনভূঞাকে পুনর্গঠন করেও হতে পারে আরেকটি উপজেলা। ৮টি উপজেলা হলে ফেনী হবে এ ক্যাটাগরি (প্রথম শ্রেনি) জেলা।
৯২৮ বর্গকিলোমিটার নিয়ে গঠিত ফেনী জেলার ফুলগাজীর আয়তন ৯৯ বর্গকিলোমিটার, পরশুরামের আয়তন ৯৮ বর্গকিলোমিটার, ছাগলনাইয়ার ১৩৩ বর্গকিলোমিটার, দাগনভূঞার ১৬৬ বর্গকিলোমিটার, সোনাগাজীর ২০৫ বর্গকিলোমিটার ও সদর উপজেলার আয়তন ১৯৭ বর্গকিলোমিটার। এছাড়া গ্রাম, মৌজা ও ইউনিয়নের দিক থেকেও ৬ উপজেলার বৈষম্য রয়েছে। ফুলগাজী উপজেলায় ৭৬ মৌজায় ৯০ গ্রাম, পরশুরাম উপজেলায় ৮১ মৌজায় ৭৯টি গ্রাম, সোনাগাজীতে ৯৪ মৌজায় ৯৫ গ্রাম, ছাগলনাইয়ায় ৫৪ মৌজায় ৬৬টি গ্রাম, দাগনভূঞায় ১০১ মৌজায় ১১৫ গ্রাম ও সদর উপজেলায় ১৩৪ মৌজায় ১২৫ গ্রাম। নতুন উপজেলা হলে এ বৈষম্য অনেক কমে যাবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর তায়বুল হক মনে করেন, ফেনী একটি ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ জেলা। প্রথম শ্রেনির মর্যাদা পেতে ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞাকে পুনর্গঠন করে আরো এক বা একাধিক উপজেলা গঠন করা যেতে পারে। যা এলাকার উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বি.কম তিনি বলেন, জেলার উন্নয়ন-অগ্রগতির স্বার্থে সদর উপজেলাকে ভেঙ্গে আরেকটি উপজেলা করা যেতে পারে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো: আমিন উল আহসান বলেন, উপজেলার সংখ্যা বাড়লে প্রশাসনিক কাজে যেমন গতি বাড়বে তেমনি সরকারি সেবা জনগনের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সহজতর হবে। বিষয়টি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের প্রস্তাব পাঠানো যেতে পারে বলে তার মত।
এ প্রসঙ্গে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, জেলার উন্নয়ন, অগ্রগতি ও জনগনের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ফেনীতে আরো এক বা একাধিক উপজেলা গঠন করা যেতে পারে। জনস্বার্থে বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনবেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে যে সকল মহকুমাকে মানোন্নীত করে জেলায় রূপান্তর করা হয়েছিল ফেনী জেলা তার একটি। জেলাটির আয়তন ৯২৮.৩৪ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮৪ সালের পূর্বে এটি নোয়াখালী জেলার একটি মহকুমা ছিল। এ মহকুমার গোড়াপত্তন হয় ১৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দে মিরসরাই, ছাগলনাইয়া ও আমীরগাঁও এর সমন্বয়ে। প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন কবি নবীন চন্দ্র সেন। ১৮৭৬ সালে মিরসরাইকে কর্তন করে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। প্রথম মহকুমা সদর দপ্তর ছিল আমীরগাঁওয়ে। ১৮৭২ থেকে ১৮৭৪ সালের মধ্যে মোঘল আমলের আমীরগাঁও থানা নদী ভাঙ্গনের ফলে ফেনী নদীর ঘাটের কাছাকাছি খাইয়ারাতে স্থানন্তরিত হয়। পরবর্তীতে এটি ফেনী থানা নামে পরিচিত হয়। অতঃপর ১৮৭৬ সালে নতুন মহকুমার পত্তন হলে খাইয়ারা থেকে থানা দপ্তরটি মহকুমা সদরে স্থানান্তরিত হয় ও নতুন মহকুমাটি ফেনী নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে ১৮৮১ সালে তা ফেনী শহরে স্থানান্তরিত হয়।