অাফজাল হোসেন :
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় অবকাঠামোহীন ভাবে চলছে ৮টি ক্লিনিক বানিজ্য। দেখার কেউ নেই। ডিগ্রীধারী ডাক্তার বা ডিপ্লোমাধারী নার্স ছাড়াই অবাধে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে ক্লিনিকগুলো। এদের মধ্যে আবার কোন কোন ক্লিনিকে নেই পর্যাপ্ত পরিমানে কক্ষের ব্যাবস্থা। একটি কক্ষের মধ্যেই রয়েছে আলাদা আলাদা রোগীর জন্য দুইটি বেড। কক্ষ গুলোর আকারও আয়তনে খুবই ছোট। এক বেডের রোগীর স্বজনেরা দেখা করতে এলেই ভরে যায় কক্ষ, বিপাকে পড়ে যায় অপর বেডের রোগী। এ ছাড়াও চিকিৎসা ব্যাবস্থা নিয়ে রয়েছে স্বজনদেও নানা রকম অভিযোগ। রোগী হাত ছাড়া হয়ে যাবার ভয়ে অনেক সময় ভুল ও প্রয়োজন না থাকা সত্বেও অপারেশন করতে গিয়ে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। অথচ দেখার ও বলার কেউ নেই।
সরেজমিনে বিরামপুরের ৮ টি ক্লিনিকে (ইমার উদ্দিন কমিউনিটি হাসপাতাল, রাইয়ান হসপিটাল এন্ড রিসোর্স সেন্টার, স্বাস্থ সেবা ক্লিনিক, মডার্ন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, এক্স-আর্মি নার্সিং হোম, নিউ মডার্ন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, আনাসা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, হাজী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার) অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, কোন কোন ক্লিনিকের নির্দিষ্ট কোন নিজস্ব ডাক্তার নেই। অপারেশনের প্রয়োজন হলে কেবলমাত্র ডাক্তারদের ফোন করে ডেকে আনা হয়। ইমারজেন্সী রোগী এলে তাৎক্ষণিক যে সব নামধারী ডাক্তার-নার্স উপস্থিত থাকেন, তাদের দ্বারাই নামমাত্র সেবা প্রদানের মাধ্যমে রোগীটিকে সেখানে আটকিয়ে দেওয়া হয়। আর ডেলিভারী রোগী এলে তো কোন কথায় নেই! নরমাল কন্ডিশন হলেও অধিক মুনাফার লোভে রোগীকে সিজার করানো হয়। এরপর রোগীর অবস্থা আশংকা জনক হলে স্বজনদের পকেট কেটে তাদের নিঃস্ব করে রোগীকে রংপুর বা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা অন্য কোথাও রেফার্ড করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য যে, বিরামপুর হাসপাতালে কর্মরত ফ্যামিলি প্লানিং-এর একজন ডাক্তারই ৮টি ক্লিনিকের ৬টি তে সিজার করেন। উনাকে যখনই ডাকা হয় তখনই পাওয়া যায় বলে ক্লিনিকে গিয়ে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চলতি বছরে জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত শুধু সরকারী হাসপাতালেই নরমাল ডেলিভারী হয়েছে ১৭৭ জন শিশুর। অপরদিকে প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে গত জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী ও মার্চ এই তিন মাসে ইমার উদ্দিনে নরমাল-৩১ ও সিজার-৮৪টি, রাইয়ানে নরমাল-২১ ও সিজার-১৩৭ টি, স্বাস্থ সেবা নরমাল-১১ ও সিজার-৬৩, মডার্ন নরমাল-৫৫ ও সিজার-১০০ টি, এক্স আমি নরমাল-৩২ ও সিজার-৭২ টি, নিউ মডার্ন নরমাল-২৭ ও সিজার-৬৪ টি ডেলিভারী হয়েছে। বাকি দুইটি (আনাসা ও হাজী) ক্লিনিক উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সাথে কোন প্রকার রিপোর্ট সরবরাহ করে না। হাজী ক্লিনিকের পরিচালক ডা. মশিউর রহমান ও তার স্ত্রী বিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ কর্মরত আছেন। উনারা হাসপাতালের চেয়ে তাদের ক্লিনিকেই বেশী সময় দেন।
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহাদত হোসেন জানান, “প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আমার কোন প্রকার সুযোগ নেই। তবে মাসিক প্রতিবেদন সরবরাহ করার নিয়ম থাকলেও আনাসা ও হাজী ক্লিনিকের কোন প্রকার রিপোর্ট আমার হাতে আসে না।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম মনিরুজ্জামান আল-মাসউদের সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “ক্লিনিক গুলোর সকল বৈধ কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এবং কোন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এ ব্যাপারে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সাদেক মিয়া সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “জেলা পর্যায়ের ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে। এখন স্বল্প সময়ের মধ্যেই উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করবো।”এ সব ক্লিনিকের কি অবস্থা তা না দেখা পর্যন্ত কিছুই বলা সম্ভব নয়। সরজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।