সোনাগাজী(ফেনী) প্রতিনিধি :
ফেনীর সোনাগাজীতে ইউপি নির্বাচনে ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে নৌকার প্রার্থীরা বিনা নির্বাচিত হলেও বাকি সাতটিতে জোট ও নিজ দলের শক্ত বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোটের মাঠে দুর্বল নৌকার প্রার্থীরা।
নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ বিদ্রোহীরা (স্বতন্ত্র), ইসলামী আন্দোলন এবং মহাজোটের অংশ জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রার্থী দেয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের অবস্থা যেন লেজে গোবরে। নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে ভোটের মাঠে স্ব-দলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৬ ডিসেম্বর সোনাগাজীর ৯টি ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে চলেছে। গ্রামের চা দোকান ও হাট-বাজারগুলোতে চায়ের কাপে কাপে চলছে নির্বাচনী আলোচনা।
কেউ বলছে, ফেনী স্টাইলের নির্বাচন আবার কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের। নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন ভোটারদের আশ্বস্ত করছেন নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের। বিকেল থেকে মধ্যেরাত পর্যন্ত নৌকা, নাঙ্গল , হাতপাখা , ঘোড়া , মোটরসাইকেল , টেলিফোন ও আনারস মার্কার প্রচার প্রচারণায় চলছে সমানতালে। দু’একটি বিচিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা এখনো ঘটেনি।
চেয়ারম্যান পদে ৭ নম্বর সোনাগাজী সদর ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক উম্মে রুমা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান শামছুল আরেফিন (ঘোড়া মার্কা)।
৮ নং আমিরাবাদ ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আজিজুল হক হিরন তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল ইসলাম সেলিম (আনারস মার্কা)।
৬ নম্বর চরছান্দিয়া ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হেসেন মিলন তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন উপজেলা আ’লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সৈয়দ দীন মোহাম্মদ (আনারস) ও জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু সুফিয়ান(লাঙ্গল)।
৫ নম্বর চরদরবেশ ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ভুট্টু, তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ’র সহ সভাপতি অধ্যাপক নফিজ উদ্দিন (আনারস মার্কা)।
৯ নম্বর নবাবপুর ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুছা খান(টেলিফান), জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী মাসুদ(লাঙ্গল) ও বিএনপি নেতা স্বতন্ত্রপ্রার্থী জহিরুল আলম জহির (আনারস মার্কা)।
১ নম্বর চরমজলিশপুর ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে এম এ হোসেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন উপজেলা আ’লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য জহিরুল হক রতন (আনারস) ও উপজেলা জাতীয় পার্টি নেতা এম এ তাহের (নাঙ্গল মার্কা)।
২ নম্বর বগাদানা ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে আলা উদ্দিন বাবুল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শিপন(মোটরসাইকেল ) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান(লাঙ্গল)।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়েজুল ইসলাম সেলিম বলেন, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ থাকে আশা করি, ২৬ ডিসেম্বর সুন্দর নির্বাচন হবে। এবং জনগনের মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করবেন। তিনি আরো বলেন হাইব্রিড লোকদের মনোনয়ন দেয়ায় নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হতে পারে। জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজী আবু সুফিয়ান জানান, জনগন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চায় । কিন্তু আ’লীগের প্রার্থীরা জনবিচ্ছিন্ন তাই তারা বিকল্প পন্থায় জয়লাভ করতে চায় ।
আ’লীগের প্রার্থী ও মজলিশপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এমএ হোসেন বলেন গত ১২বছর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে । মানুষ শান্তি ও সহাবস্থানে ছিল তাই জনগন প্রার্থী বিবেচনা না করে নৌকায় ভোট দিবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান শামছুল আরেফিন বলেন সোনাগাজীতে হাইব্রিড ও জনবিচ্ছিন্নরা মনোনয়ন পাওয়ায় এখানে নৌকার ভরাডুবি হতে পারে । তারা জেলার নেতাদের ম্যানেজ করে নৌকার টিকেট পেলেও জনগনের ম্যান্ডেট পাবেনা।
উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন ৭ নম্বর সদর ইউনিয়নের নৌকার পক্ষের পথ সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তার দলের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামছুল আরেফিনের মার্কা (ঘোড়া) সম্পর্কে হুংকার দিয়ে বলেন, মৃত ঘোড়া দিয়ে সদর ইউনিয়নবাসীকে বহন করা সম্ভব নয়।
বিএনপির ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা বিভিন্ন ইউনিয়নে আমাদের আঘাচার উপর ভর করে নৌকাকে হারানোর দুঃস্বপ্ন দেখবেন না। তাহলে আমাদের ২০০১ সালের কথা মানে পড়ে যাবে। পরে এর খেসারত আপনাকে এবং আপনাদের পরিবারকে দিতে হবে।
উপজেলা নির্বাচন ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা মো: মাইনুল হক বলেন, ব্যালটের মাধ্যেমে শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। আশাকরি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩০ জন, মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ শ’ ৩৩ জন এবং মহিলা সংরক্ষিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯৩ জন।