মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া- সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তকে দীর্ঘদিন যাবত চোরাচালানের নিরাপদ রোড
হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা। এই সীমান্তে আইন আছে কিন্তু তা
সঠিক ভাবে প্রয়োগ না করার কারণে অবৈধ ভাবে অবৈধ মালামাল পাচাঁর করতে
গিয়ে প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি ঘটনা।
গতকাল বুধবার (২০ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গাছড়া-
ভাংগারঘাট এলাকা দিয়ে কয়লা আনতে গিয়ে খাদে পড়ে জুনাইদ মিয়া (১৭)
নামের এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের
বুরুঙ্গাছড়া গ্রামের মজলিস মিয়ার ছেলে।
এর আগে ভারতে থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথরসহ বিভিন্ন মালামাল পাঁচার করতে
গিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে পাহাড়ী গুয়ায় পড়ে, চোরাই কয়লার গুহায় মাটি
চাপা পড়ে ও নদীতে ডুবে লাউড়গড় সীমান্তে এপর্যন্ত কমপক্ষে ১৮জন, চাঁনপুর
সীমান্তের ৩জন, টেকেরঘাট সীমান্তে ৫জন, বালিয়াঘাট সীমান্তে ১৪জন,
চারাগাঁও সীমান্তে ৪জন ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে ৩জনের মৃত্যু হয়ে বলে বিভিন্ন
সূত্রে জানা গেছে।
এব্যাপারে এলাকাবাসী জানায়- জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট সীমান্তের
লালঘাট ও লাকমা এলাকা চোরাকারবারী ইয়াবা কালাম, আব্দুল হাকিম ভান্ডারী,
চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি এলাকা
চোরাকারবারী রমজান মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, আনোয়ার মিয়া ও লেংড়া বাবুল,
টেকেরঘাট সীমান্তের বড়ছড়া, বরুঙ্গাছড়া, রজনীলাইন এলাকা চোরাকারবারী
কামাল মিয়া, চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারো ছড়া, কড়ইগড়া, রাজাই ও
বারেকটিলা এলাকা চোরাকারবারী আবু বক্কর, জম্মতআলী, রফিকুল ইসলাম ও লাউড়গড়
সীমান্তের যাদুকাটা নদী, শাহআরেফিন মোকাম, পুরান লাউড়, মুকশেদপুর এলাকা
চোরাকারবারী শহিদ মিয়া, নাজিম মিয়া, এরশাদ মিয়া, জসিম মিয়া, আমিনুল
মিয়া, জজ মিয়াগং নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা নিজেরকে বিজিবি সোর্স পরিচয়
দিয়ে সীমান্ত এলাকায় তৈরি করেছে সিন্ডিকেড।
তারা সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব
ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অবৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়লা, পাথর, কাঠ, বাঁশ, গাছ,
বিড়ি, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের পর
সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে করছে চাঁদা উত্তোলন। বিভিন্ন
সময় অভিযান চালিয়ে নামমাত্র অবৈধ মালামাল জব্দ করা হয়েও তাদেরকে গ্রেফতার
করা হয়না।
এব্যাপারে চারাগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী সুহেলে মিয়া বলেন, চোরাকারবারী
আনোয়ার মিয়া এলসি পয়েন্ট এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে বিজিবির
সামনে মদ, চাল ও চিনিসহ বিভিন্ন মালামাল বাংলাদেশে আনছে। আমি
বিজিবিকে বলার পর তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি বরং আনোয়ারকে দিয়ে আমাকে
অপমান করেছে।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে লালঘাট গ্রামের ২-৩জন বলেন- লালঘাট, বাঁশতলা ও লাকমা
এলাকা দিয়ে প্রতিদিন লক্ষলক্ষ টাকার কয়লা পাচাঁর করে ৩ থেকে ৫টি নৌকা
বোঝাই করে নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা উপজেলার মনতলা এলাকার আজিজ মিয়া ও
সাজু মিয়া ডিপুতে নিয়ে ওপেন বিক্রি করছে চিহ্নিত চোরাকারবারী খোকন
মিয়া, শহিদুল্লাহ, একদিল মিয়া, মানিক মিয়া, কুদ্দুস মিয়া, বাবুল মিয়া গং।
এজন্য পাচাঁরকৃত ১নৌকা চোরাই কয়লা (১২ মেঃটন) থেকে চারাগাঁও ক্যাম্পের
নামে ৫হাজার টাকা, সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে আব্দুর রাজ্জাক ১হাজার টাকা,
হাবিব সারোয়ার আজাদ মিয়া ১হাজার টাকাসহ বালিয়াঘাট ক্যাম্পের নামে
১বস্তা চোরাই কয়লা থেকে ১শ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে বিজিবির সোর্স
পচিয়ধারী চোরাকারবারী ইয়াবা কালাম, রমজান মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান
সাংবাদিকদের বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের ব্যাপারে সঠিক তথ্য পেলে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।