খুলনা খালিশপুরে জমজমাট মাদকের হাট!

 

ইশরাত ইভা >>

দুপুর গড়িয়ে বিকাল। ব্যস্ততম গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক যুবক। এগুতেই একটি পলিথিন উঁচু করে ধরে এক যুবক জানতে চায় ‘মামা লাগবে?’ পলিথিনে আনুমানিক শতাধিক মরণনেশা ইয়াবা। ছোট কত আর বড় কত? যুবক বলে, ‘ছোটটা শট পড়ছে। চাহিদা বেশি। কালকে নতুন চালান আসবে। আজ বড়টা নেন। দাম কমে রাখতাছি। মাত্র ২২০ টাকা।’ বড়টা কিনতে আগ্রহ না দেখিয়ে তার নাম জিজ্ঞাসা করতেই যুবক বলে, ‘নাম দিয়ে কি করবেন। এখানে আসলেই পাবেন।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই  যুবকের নাম সুমন।খুলনার খালিশপুরে এভাবেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক।

 

খালিশপুরে বঙ্গবাসী মোড়, পুরাতন নিউমার্কেট, হাউজিং বাজার, নয়াবাটি, কাশিপুর, চিত্রালী হল, পিপলস গেইট, প্লাটিনাম গেইট, নতুন রাস্তা সহ আশেপাশের এলাকায় প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মাদক।

 

খালিশপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে বিভিন্ন মোড়ে। অভিযানও হয় মাঝে-মধ্যে। গ্রেপ্তারও করা হয়। তারপরও থেমে নেই মাদকের হাট। দিনে-রাতে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন কৌশলে। এখানে রয়েছে মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পুলিশের পাশাপাশি  কখনও কখনও মাঠে নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। দরিদ্র মানুষকে ব্যবহার করে একটি প্রভাশালী চক্র খালিশপুর ও আশপাশের এলাকায় গড়ে তুলেছে মাদকের হাট।

 

খালিশপুরে এই এলাকায় মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছে  ২ শতাধিক নারী-পুরুষ। মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবা এমন কোনো মাদক নেই যা এখানে পাওয়া যায় না। রয়েছে ‘হোম ডেলিভারি’র ব্যবস্থা। এমনকি মাদক সেবন করার জন্য নিরাপদ স্থানও রয়েছে এই চক্রের। ৫০ টাকা দিলেই সেই নিরাপদ স্থানে মাদক সেবনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এরকম ‘নিরাপদ’ একটি স্থানের নাম পিপলস জুট মিলের পরিত্যক্ত ভবন, প্লাটিনাম জুট মিলের পরিত্যক্ত ভবন, খালিশপুর নিউ মার্কেটের পরিত্যক্ত ভবন। সরজমিনে সেখানে গিয়ে আশপাশেই পাওয়া গেছে ফেন্সিডিলের খালি বোতল, ইয়াবা সেবনের আলামত। যদিও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন লাখ লাখ টাকা মূল্যের মাদক বিক্রি হয় সেখানে। এসব এলাকা থেকে খালিশপুরের বিভিন্নস্থান ও খুলনার আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে মাদক।

 

পরিচয় গোপন করে খুচরা মাদক বিক্রেতা রিপন, স্বপন, কামরানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যকে ম্যানেজ করেই এখানে মাদক ব্যবসা পরিচালিত হয়। পরিচিত ক্রেতাদের হোম ডেলিভারি দেয়া হয়। ফোনে অর্ডার করলে পৌঁছে দেয়া হয় যথাস্থানে। এছাড়াও ক্রেতাদের দেখলেই চোখে-চোখে তাকান বিক্রেতারা। এ রকমই দুই তরুণকে দেখে চোখে চোখ রাখলেন মধ্য বয়সী এক  লোক। ওই ব্যক্তিসহ তিনজন বসে গল্প করছিলেন পিপলস জুট মিলের শ্রমিক মাঠে। চোখে চোখ রাখতেই দুই তরুণের একজন এগিয়ে যান। তারপর কাছাকাছি যেতেই জানতে চান, মাল লাগবে? তরুণ মাথা নাড়ান।

 

বিক্রেতা যুবক ইয়াবার নাম ধরে জানতে চান, কোনটা লাগবে আর সেভেন নাকি চম্পা? তরুণ আস্তে করে কিছু একটা বলেন। তারপর একটি পলিথিনের প্যাকেট এগিয়ে দেয়া হয়। তরুণ ক্রেতা মানিব্যাগ বের করে টাকা দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে দেখলেই খবর পৌঁছে যায় মাদক বিক্রেতাদের কাছে। পাল্টে যায় পরিবেশ।

 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় ওই এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালিত হয়। ওই চক্রটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেক খুচরা মাদক বিক্রেতা। বিভিন্ন সময়ে চক্রের খুচরা বিক্রেতা ও কয়েক পাইকারি বিক্রেতা গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতারা রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

 

এসব স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের অনেকেই সরকারি দলের পদ-পদবি ব্যবহার করছেন। তাদের কাছে প্রশাসনও অনেকটা জিম্মি। যে কারণে এসব মাদকের হাট বন্ধ হচ্ছে না কিছুতেই। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, খালিশপুরে বিভিন্নস্থানে অবাধে মাদক বিক্রি হচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণ করতে।

 

আমাদের জনবল কম। তারপরও প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। নানা প্রতিকূলতা থাকলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সক্রিয় বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *