ফেনীর এনজিও সবুজ বাংলা’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক রাসেল
* “সমাজসেবা ও এমআরএ কর্মকর্তার যোগসাজসে অর্থ লোপাট”
*প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে সমাজসেবা দপ্তর;
সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী:
ফেনীর সমাজসেবা দপ্তর ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি-এমআরএ থেকে নিবন্ধিত বেসরকারি সংস্থা-এনজিও সবুজ বাংলা’র সাবেক নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে সংস্থার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নাম জয়নাল আবদীন রাসেল (৩৫)। সে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাজিরখিল গ্রামের মাহফুজুর রহমান’র ছেলে। আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দেয়ার শর্তে সংস্থার তৎকালীন চেয়ারম্যান মোস্তফা মজুমদার’র সাথে ২০১৮সালের ৮জুলাই একটি চুক্তি করেন রাসেল। চুক্তি অনুযায়ী টাকা ফেরত না দেয়ায় রাসেলকে স্বীয় পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে গত ২০১৯সালের ২৩জানুয়ারী ফেনী আদালতে একটি মামলা দেন সংস্থার চেয়ারম্যান । উক্ত মামলায় অর্থ আত্মসাত ও জালিয়াতির ঘটনায় রাসেলকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই ফেনীর পুলিশ পরিদর্শক মো. মোনায়েম মিয়া।
জানা যায়, ২০০৯সালে কয়েকজন উদ্যোক্তাকে সাথে নিয়ে সমাজসেবা দপ্তর থেকে নিবন্ধন করে সবুজ বাংলা নামে একটি বেসরকারি সংস্থার যাত্রা শুরু করেন ফুলগাজীর দক্ষিন ধর্মপুর গ্রামের মো. ইসমাইল মজুমদারের ছেলে মো. মোস্তফা মজুমদার। তিনি সদস্যের সমর্থনে তিনবার উক্ত সংস্থার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়ীত্ব পালন করেন। সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০১৭সালের ১জুলাই নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাজিরখিল গ্রামের মাহফুজুর রহমান’র ছেলে জয়নাল আবদীন রাসেলকে নির্বাহী পরিচালক পদে নিয়োগ দেন তিনি।
যোগদানের মাত্র ৪মাসের মধ্যে দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারি ও মাঠ কর্মীদের উপর প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম ও জালিয়াতি শুরু করে রাসেল। নানান কৌশলে সন্ত্রাসি কায়দায় সংস্থার চেয়ারম্যান ও অংশীদারদের বিনিয়োগকৃত প্রায় ৪৬লক্ষ ১৫হাজার টাকার হিসাব সংক্রান্ত সকল নথিপত্র সরিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত করেন। এবং সংস্থার কার্যালয় থেকে প্রায় ৪লক্ষ টাকার আসবাপত্র ও ইলেক্ট্রনিক পন্য সরিয়ে নেয় রাসেল এবং তার সহযোগীরা।
সবুজ বাংলা’র সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থায়ী সদস্য মো. মোস্তফা মজুমদার বলেন, জয়নাল আবদীনকে নির্বাহি পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়ার পর থেকে সংস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারি ও মাঠ কর্মীদের উপর প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম , জালিয়াতি এবং অর্থ আত্মসাত করতে থাকে জয়নাল আবদীন ।
এ ব্যাপারে তাকে উকিল নোটিশ দেয়ার পর সে টাকা ফেরত দেয়ার শর্তে অব্যহতি দেয়া হয়। টাকা ফেরত না দিয়ে এমআরএ ও সমাজসেবা ফেনীর দায়ীত্বপ্রাপ্ত লোকদের যোগসাজসে বহিরাগত লোকদের নাম ব্যবহার পুর্বক কমিটি করে এমআরএ ও সমাজসেবা দপ্তরে জমা দিয়েছে। অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ইতোমধ্যে রাসেলকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই।
তিনি আরো বলেন, আত্মরক্ষার্থে জয়নাল আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়েছে , পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে সে মামলা ইতিমধ্যে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। ভূয়া কমিটি গঠনের বিষয়ে ইতিমধ্যে এমআরএর উপপরিচালক নুরে আলম মেহেদিকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন সংস্থার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ.এস.এম. আনোয়ারুল করিম ফারুক।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বলেন, বেআইনীভাবে জয়নাল আবদীন তার আপন ভাই ইমরান হোসেনকে উক্ত সংস্থায় নিয়োগ দিয়েছেন। সকল জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত জয়নাল আবদীন, ফেনী শহর সমাজসেবা অফিসার মোশারফ হোসেন, এমআরএ উপপরিচালক কামাল হোসেন ও জয়নাল আবদীন’র ভাই ইমরানের বিরুদ্ধে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জাকির হোসেন’র আদালতে আরও একটি মামলা দেয়া হয়েছে। উক্ত মামলা ফেনী পিবিআইতে তদন্তাধিন আছে।
এ ব্যাপারে জয়নাল আবদীন রাসেল বলেন, মোস্তফা মজুমদার চেয়ারম্যান থাকাকালে সংস্থার অর্থ আত্মসাত করেছেন। হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়ে নিজেই অব্যহতি দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে সংস্থার কেউ নন। সবুজ বাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান সাজেদা পারভীন’র নেতৃত্বে ৭সদস্যের কমিটিতে আমি মহা সচিব কাম নির্বাহি পরিচালক পদে দায়ীত্ব পালন করছি। আমার বিরুদ্ধে তার দেয়া সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। মোস্তফা মজুমদারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে । উক্ত মামলা ফেনী আদালতে বিচারাধিন আছে।
সমাজসেবা ফেনীর উপ পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধূরী জানান, পূর্বের কমিটির বিরুদ্ধে অর্থআত্মসাত ও জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে প্রশাসক নিয়োগসহ আইনানূগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
#বাংলারদর্পণ