কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানার এএসআই (নিঃ)পেয়ারুল ইসলাম গত ২৪/০৯/২১ ইং রাত ১১ঃ৩০ টায় হারাগাছ থানাধীন সিগারেট কোম্পানির বাজারে এক ব্যক্তি মাদকদ্রব্য ইয়াবা টাবলেট বিক্রি করছেন সংবাদের ভিত্তিতে সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযানে যান।
ঘটনাস্থল থেকে মাদক বিক্রেতা পারভেজ রহমান পলাশকে আটক করে। আটক অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ী পলাশ তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এএসআই পেয়ারুল ইসলামের বুকে এলোপাতাড়ি কোপ দিলে তিনি গুরুতর জখম হন। পরে হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী দ্রুত এএসআই পেয়ারুল ইসলাম কে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সাথে সাথে তার অপারেশন করা হয়।
অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউ তে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ২৫/০৯/২১ইং শনিবার সকাল ১১ঃ১৭ মিনিটে তিনি মারা যান। পেয়ারুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে। বাবা আব্দুর রহমান মিন্টু একজন স্কুল শিক্ষক মা গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে নিহত পেয়ারুল ইসলাম সবার বড়।
বৈবাহিক জীবনে দুই পুত্র সন্তানের জনক নিহত এএসআই পেয়ারুল ইসলাম। বড় ছেলে হাম্মামের বয়স ৬ ছোট ছেলে আব্রাহামের বয়স ২ বছর। রংপুর হাসপাতাল থেকে বিকেল ৪ঃ০০টায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে তার মরদেহ জানাযার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
জানাযা নামাজের পূর্বে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ তাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করেন।গার্ড অফ অনার শেষে তার কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ,রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য,পুলিশ ট্রেনিং কমান্ডেন্ট বাসুদেব বণিক,রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার, পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেন,সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আরএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন।জানাযায় অংশ নেন রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট শাফিয়ার রহমান শফি ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি সহ পুলিশ সদস্যবৃন্দ ও সর্ব স্তরের সাধারণ মানুষ।
পরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এএসআই পেয়ারুলের মরদেহবাহী এম্বুলেন্স টি তার গ্রামের বাড়িতে আসলে মুহুর্তেই শোকের মাতম পড়ে যায় মা-বাবা আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের মাঝে। তার অবুঝ শিশু বাবার নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে,অবুঝ শিশু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না তার বাবা তার সাথে কথা বলছেন না কেন। তার মা বারবার মূর্ছনায় যাচ্ছিল,সন্তানের অকাল মৃত্যু কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন না মা।
স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শুনেই স্ত্রী হাবিবা সুলতানা হয়েছেন শয্যাশায়ী। চারিদিকে শুধু শোকের মাতম। মরদেহবাহী গাড়িটি বাড়িতে পৌছালে তার বাড়ির পাশে চন্দ্রপাড়া স্কল মাঠে রাত ৯ঃ৩০টায় দ্বিতীয় জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ গ্রহণ করেন রাজারহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী,রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আলতাফ হোসেন,হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী ও রাজারহাট থানার ওসি রাজু সরকার সহ কয়েক হাজার মুসল্লি। জানাযা নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের উদ্দেশ্য হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী নিহত এএসআই পেয়ারুলের বীরত্বের কথা বণর্ণা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয় জানাযা নামাজ শেষে মসজিদের পাশেই তাকে সমাধিত করা হয়।বিদায়ী বেলায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে তার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন সহকারী কমিশনার আলতাফ হোসেন,হারাগাছ থানার পক্ষে ওসি শওকত আলী ও রাজারহাট থানার পক্ষে ওসি রাজু সরকার।
রতি কান্ত রায়