দেশের বাজারে বাণিজ্যিক ভাবে আসছে উটপাখির মাংস

জাবি থেকে নুর হাছান :
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রাণিজ আমিষ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রাত্যহিক আমিষের ঘাটতি রয়েছে । এক্ষেত্রে চাহিদা মেটাতে শীর্ষে রয়েছে পোল্ট্রি শিল্প। তবে গরু, মহিষ,খাসি কিংবা ভেড়ার মাংসের দাম অনেক বেশি যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

এ অবস্থায় মাংস উৎপাদনে গরুর বিকল্প হতে পারে উটপাখি। এমনটাই জানাচ্ছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)।

এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে উটপাখি নিয়ে একটি গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাওয়া যাবে ফলাফল পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গবেষণার অংশ হিসেবে ২০২০ সালে আফ্রিকা থেকে ৭ টি উটপাখি নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে ২ টি পুরুষ ও ৫টি মাদি উটপাখি। পরে অধিকতর গবেষণার জন্য আরও ১৫ টি অপ্রাপ্তবয়স্ক উটপাখি আমদানি করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিএলআরআই খামারের তৃণভূমিতে চরে বেড়াচ্ছে ২২ টি উটপাখি । এদের খাদ্যতালিকার ৬০ শতাংশ তৃণ জাতীয় ঘাস, লতাপাতা। উটপাখির মাংস মুরগির মাংসের মতো। কিন্তু মুরগী দানাদার খাবারে অভ্যস্ত। অন্যদিকে উটপাখি লতাপাতা খেতে পছন্দ করে। লতাপাতা এ অঞ্চলে সহজলভ্য হওয়ায় উটপাখির মাংস উৎপাদনে ব্যয় কম হবে। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে আমিষের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সক্ষম হবে জানানো হয় ।

গবেষণার দলের পরিচালক মোহাম্মদ সাজেদুল করিম সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়াতে আফ্রিকা থেকে আমদানি করা এসব প্রাণী সহজেই পালন করা যাবে। এসব উটপাখি প্রাপ্তবয়স্ক সময়ে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। পাখিগুলো আড়াইবছর বয়সে ডিম দিতে সক্ষম। বছরে ২০ থেকে ২৫ টি ডিম দেয়। এ হিসেবে একটি উটপাখি তিনটি দেশীয় গরুর সমান মাংসের চাহিদা পূরণে সক্ষম। তিনি বলেন,আমাদের পাখিগুলো একবছর পার করে দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছে। আমাদের আর বছর দুয়েক লাগতে পারে। এ অবস্থায় আমরা পাখির দৈহিক বৃদ্ধির হার ও খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করছি। এছাড়া পাখিগুলোর তিন মাস, পাঁচ মাস, নয় মাস ও বারো মাস বয়সের মাংস কেমন হয়, তার গুণাগুণ দেখা হচ্ছে।,

বিশ্লেষণে দেখা যায়, উটপাখি এক প্রকারের বৃহৎ, উড্ডয়নে অক্ষম। এদের ডিম অনেক বড় আকারের হয়ে থাকে। প্রজাতিটি Struthionidae গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Struthio গণের অন্তর্গত। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের তৃণভূমি এদের বিচরণস্থল। এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৯৯ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।

অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ব্যক্তিগত উদ্যোগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে উটপাখির পালন শুরু করেছেন বেশ কিছু উদ্যোক্তা। যারা বি এল আর আই থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা পাচ্ছে। তাদেরই একজন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সাইফুল ইসলাম । তিনি বলেন, এতোদিন দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁস, মুরগি, কোয়েল, কবুতর ও বাহারী পাখি প্রতিপালন হয়েছে। এবার উটপাখি পালনের বিষয়টি সামনে এসেছে। অথচ উন্নত দেশসমূহে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উটপাখির খামার প্রতিষ্ঠিত হয়ছে। উটপাখির মাংস থেকে শুরু করে চামড়া এবং পালক আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিযোগ্য।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমরা এ প্রকল্পটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে শুরু করেছি। ২০২৩ এর জুলাই থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে খামার গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এছাড়া ২০২৫ সালের পর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে মাংস বাজারজাত করা যাবে। উটপাখির মাংস উৎপাদনে ব্যয় কম হওয়ায় এর দাম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামর্থ্যের মধ্যে থাকবে। এজন্য আমাদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে সেটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরণেও সক্ষম হবে।’

উট পাখির মাংস বাজারজাত এবং খাওয়া প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ঈমাম মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু উটপাখি “পাখি প্রজাতি” এবং তৃণভোজী তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর মাংস খাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ নেই। তবে কুরবানী করার বিষয়ে উটপাখি দিয়ে করা যাবে না ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *