বড় ফেনী নদীর দুপাশ দখলের মহোৎসব

ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার বিশাল চর দখলের পর এবার বড় ফেনী নদী থেকে জেগে উঠা চর দখলে মেতে উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

ফেনীর সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার একটি অংশ দিয়ে বয়ে চলা এই নদীর তীর দখলে নেমেছে দুই উপজেলার প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রভাবশালী চক্র বিভিন্ন কৌশলে ক্রমাগত নদী দখল করছে। তারা এরই মধ্যে মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার উজানে বড় ফেনী নদীর বিশাল অংশে মাছের খামার দিয়ে দখল করেছে দুপাশের তীর।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরারগঞ্জ সড়কের মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার উজানের সংযোগস্থলের উভয়পাশে চক্রটি বড় ফেনী নদীর তীরে বাঁধ দিয়ে অন্তত ৫০০ একর নদী দখল করে পুকুর কেটে মৎস্য চাষ করছে। দখলের কারণে বড় ফেনী নদী সংকুচিত হয়ে উজান থেকে পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

 

এতে পানির চাপ বেড়ে মুহুরী বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। লিজ নেওয়া সরকারি ভূমিতে স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি ও খনন করে পুকুর বা দিঘি তৈরিতে বিধিনিষেধ থাকলেও সেখানে ইট দিয়ে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ এবং ভূমি খনন করে বড় বড় পুকুর করা হয়েছে। এমনকি ইটভাটাও তৈরি করা হয়।

 

জানা গেছে, সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে ১৯৮৬ সালে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধে মুহুরী সেচ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। পরে প্রকল্পের উজানে প্রায় ১২ কিলোমিটার চর জেগে ওঠে। ১৯৮৭ সালের পর ওই চরের কিছু অংশ ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে লিজ নিয়ে এবং সিংহভাগ দখল করে প্রভাবশালীরা মাছ চাষের প্রকল্প গড়ে তোলে। চর দখল নিয়ে সোনাগাজী ও মিরসরাই উপজেলার মানুষের মধ্যে বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মুহুরী বাঁধের উজানের পশ্চিম পাশের চর মাঈন উদ্দিন আহমেদ কামরান ১০ একর ভূমি দখল করে মাছের খামার গড়ে তোলেন, যা দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন আবদুল মোতালেব। তাদের দাবি, জমিটি তারা ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ১৫ বছর আগে লিজ নিয়েছেন।

 

এছাড়া নিজাম উদ্দিন, সেলিম চৌধুরী, হুমায়ুন কবির, আবু তৈয়ব আজাদসহ অন্তত ৫০ ব্যাক্তি কয়েকশ একর ভূমি দখল করেছেন। তাদেরও দাবি, তারা ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিজ নিয়েছেন। বাঁধের পূর্ব অংশের চর দখল করে মৎস্য খামার গড়ে তুলেছেন মাইনুল হোসেন, মোস্তফা সওদাগর, জাহাঙ্গীর সওদাগর, কামাল উদ্দিন, বদি সওদাগর, ফারুক সওদাগরসহ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি। একই, দাবি তাদেরও।

 

স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রভাবশালীরা নদীর দুই পাশ দখল করে মাছ চাষ করছে। এভাবে দখল হলে বড় ফেনী নদী এক সময় নালায় পরিণত হবে। মুহুরী বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী নুরুল আফছার বলেন, নদী দখল রোধ করতে কয়েক বছর আগে অভিযান চালালে হামলায় পুলিশসহ ১০ জন আহত হন। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিলেও প্রভাবশালী হওয়ায় নদী দখলের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নুর নবী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিছু ভূমি সরকারি নিয়মনীতি মেনে লিজ দেওয়া হলেও সিংহভাগ ভূমি প্রভাবশালী চক্র দখল করে মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। আমরা পুলিশ নিয়ে অনেকবার অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আমাদের অফিস থেকে মামলা দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, নদী দখলকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে নদী দখলমুক্ত করা হবে। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সোহেল পারভেজ জানান, নদী দখলের বিষয়টি তার জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে নদী উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

#বাংলারদর্পন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *