ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর ঝুঁকিপূর্ণ বাজার বসায় এক বছরে ১৮ জনের প্রাণহানি

 

এম এ মতিন,  গাজীপুর : শ্রীপুর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একাধিক স্থানে স্থায়ী ও ভাসমান বাজারের ফলে সারাক্ষণই যানজট লেগেই থাকে। যত্রতত্র ও অব্যবস্থাপনা পূর্ণ বাজার বসায় প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা, এমসি বাজার, নয়নপুর বাজার ও জৈনা বাজার হতে মহাসড়কের নিরাপত্তাদানকারী হাইওয়ে পুলিশের বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে রাজধানী ঢাকার সাথে ময়মনসিংহ বিভাগের লোকজনের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর হতে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করলেও চার লেনের সুফল পাচ্ছে না চলাচলকারী যাত্রীসাধারণ।

এ ছাড়াও মাওনা থেকে জৈনা বাজার পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধ ভাবে ট্রাক, লেগুনা, অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড বসিয়ে হাইওয়ে পুলিশের নামে চাঁদাবাজি করছে একটিচক্র। মহাসড়কের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ মাওনা চৌরাস্তায় অধিকাংশ জায়গা দখল করে ভাসমান বাজার বসানোর ফলে সারাদিনই লেগে আছে যানজট। মাওনা চৌরাস্তার ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে কয়েকশত দোকান, যেখান থেকে প্রতিদিনই চাঁদা তোলা হয়। ভ্রাম্যমান হকার ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল লোড-আনলোডের গাড়ী অপরিকল্পিতভাবে দাঁড়িয়ে থাকে সারাক্ষণ। পুলিশের নির্বিকার ভুমিকায় সারাদিন যানজটের কবলে পড়ে থাকতে হয় যাত্রী সাধারণের। ভবন মালিকরা ফুটপাতে দোকান ও ভবন নির্মাণ সামগ্রী মহাসড়কে দিনের পর দিন ফেলে রাখায়, মহাসড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এমসি বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী নুরু মিয়া জানান, রাস্তার মধ্যে ইজারাদার আমাদের বসিয়েছে। এজন্য অফেরতযোগ্য জামানত ২০ হাজার, দৈনিক ২শত টাকা ছাড়াও মাসে ১শত পঞ্চাশ টাকা করে পুলিশের নামে দিতে হয়। নয়নপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবু বকর জানান, প্রতি মাসে ১৫০টাকা করে ইজারাদার পুলিশের কথা বলে টাকা উত্তোলন করেন।

এ ছাড়াও প্রতিদিনের জমা ১শত পঞ্চাশ টাকা তো দিতেই হয়। জৈনা বাজারে মহাসড়কের দোকানদার আমিনুল হক জানান, জীবিকার তাগিদে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েও আমরা রাস্তার মধ্যেই দোকান চালাই। যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনার অজুহাতে পুলিশ আমাদের উঠিয়ে দিলেও ইজারাদারের সাথে মিটমাট করে আবার বসার অনুমতি দেয়া হয়। নয়নপুর বাজারের ইজারাদার গিয়াস উদ্দিন জানান, ২৮ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য এ বাজারে ইজারা পেয়েছি। অন্যত্র সরকারি জায়গা না থাকায় পুলিশকে ম্যানেজ করেই মহাসড়কের উপরই বাজার বসাতে হয়। এদিকে মহাসড়ক দখল করে ট্রাক, লেগুনা ও সিএনজি স্ট্যান্ড, ভাসমান বাজার বসানোয় ক্রমেই বাড়ছে মহাসড়কের মৃত্যু মিছিল। গত এক বছরে ওই সাত কিলোমিটার এলাকায় ১৮জনের মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও ঝুঁকিপুর্ণ ভাবে চাঁদা আদায়কালে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মহাসড়ক পুলিশের কন্সটেবল রুহুল আমীনের মৃত্যু হয়েছে।

এ ব্যাপারে মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, প্রায় ১ কোটি টাকার মাধ্যমে ইজারা নিয়ে মহাসড়কের উপর চারটি বাজার বসিয়েছে একটি চক্র। আমরা বাজারের ছবিসহ ইজারা বাতিলের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তাদের নির্দেশ পেলেই বাজার উচ্ছেদ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *