ফেনী’প্রতিনিধি
আদালতে এক আসামির জবানবন্দি, ট্রাকভর্তি গরু লুট করতে না পেরে আওয়ামী লীগ নেতা কালাম নিজেই গুলি করেন ব্যবসায়ীকে। গরু লুট করতে না পেরে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসা ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম সাড়ে তিন বছরে আগেও ছিলেন যুবদলের কর্মী।
ছাত্রলীগ নেতা রতন ও নজরুল হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন। বিএনপি নেতা ভিপি জয়নালের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন কালাম। যুবলীগে যোগ দিয়েই এক বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আবুল কালামের রাতারাতি এই উত্থানের পেছনে রয়েছেন ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। তাঁর হাত ধরেই কালাম আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলরও বানানো হয়েছে। অবশ্য ওই ওয়ার্ডের তিনি বাসিন্দাই নন। সেই ওয়ার্ডে তাঁকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও করা হয়েছে। ফেনীর গার্লস ক্যাডেট কলেজ রোডের সাহেব বাড়ি এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে গরু লুটে বাধা দেওয়ায় মো. শাহজালাল (৩৫) নামের এক গরু ব্যবসায়ী কে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম ও তাঁর তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। হত্যার ঘটনার পর কালাম পালিয়ে যান। তাঁর দুই সহযোগী নাইম হাসান ও মো. সাগরকে এই ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে নাইম গতকাল শনিবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, কাউন্সিলর কালাম নিজেই গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করেন। তারপর তিনজনে (গ্রেপ্তার দুজনসহ) মিলে লাশটি পুকুরে ফেলে দেন।
ফেনী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, পৌর কাউন্সিলর কালামকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
কালামের ‘রাজনীতি ভাগ্য’
আবুল কালাম ৬ নম্বর সুলতানপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেও তিনি ৫ নম্বর বিরিঞ্চি ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। সুলতানপুরে তাঁর কোনো বাড়ি, জমি, কোনো ধরনের স্থাপনা বা ব্যবসা নেই। তারপরও কায়দা করে ওই ওয়ার্ডের ভোটার হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌরসভার কাউন্সিলর হন। তাঁকে ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও বানানো হয়।
ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনুল কবিরের দাবি,দলের প্রয়োজনেই কালামকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দলের স্বার্থেই ওই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গরু ব্যবসায়ী খুনের ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয় অপরাধ। গতকাল পৌর আওয়ামী লীগ জরুরি সভা করে কালামকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে।
২০১৮ সালের আগে আবুল কালাম ফেনী যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন ফেনী-২ আসনের বিএনপির সাবেক সাংসদ জয়নাল আবদীন ভিপি জয়নাল।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানান, যুবলীগে যোগ দেওয়ার পর কালামের এত দ্রুত উত্থানের পেছনে রয়েছে সাংসদ নিজাম হাজারী।