আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে জুটন >>>
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে লিচুর ভরা মৌসুম শুরু হয়। লিচু তুলতে বাগামে বাগানে শ্রমিক-ক্রেতারা ভীড় করেন। এতে এলাকায় পাইকারদের আনাগোনায় ঊৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভালো দাম ও নগদ টাকা পেয়ে লিচু চাষীর মুখে হাসি ফুটে। কিন্তু এ বছর তা হয়নি। বৈরী আবহাওয়া ও অনাবৃষ্টির কারণে সেই চাওড়া হাসি যেন এবার উদাও। হাসির বদলে কৃষকের মুখে দেখা যায় হতাশা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ২০টি গ্রামের ২৭৫ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। এবার ১১শ মেঃ টন লিচুর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্ত এ মৌসুমে খরার কারণে লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে।
উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চানপুর, আজমপুর, রামধননগর, রাজাপুর, আনোয়ারপুর, কল্যাণপুর ও মনিয়ন্ধ ইউনিয়নের মিনার কোট, শিকনগর ঘাগুটিয়াসহ আরো কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় লিচুর বাগানগুলোতে শ্রমিক, ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাইকারদের সেই কর্মচাঞ্চল্য আগের মতো নেই। সবার মুখ যেন কেমন মলিন।
লিচু চাষীরা জানায়, দীর্ঘ খরায় এবার লিচুসহ মৌসুমী ফলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একবার মুকুল অবস্থায় ক্ষতি হয়েছে। আবার বাড়ন্ত অবস্থায় গাছ থেকে লিচু ঝরে পড়েছে। ফলে এ অঞ্চলে এবার প্রায় ৩০ শতাংশ লিচু কম উৎপাদন হয়েছে।
চানপুর গ্রামের লিচু চাষী আব্দুল মান্নান জানান, আমার বাগানে মোট ৩৭ টি লিচু গাছ আছে। অন্যান্য বছর লিচুর খুবই ভালো ফলন হতো। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া অনুকুল না থাকার ফলন ভালো হয়নি। তারপরও অন্যন্য চাষীদের তুলনায় আমার বাগানে মোটামুটি ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে।
চানপুর গ্রামের আরেক লিচু চাষী একলাচ জানান, আমাদের এখানে লিচু আগাম আসে। মাটির গুনে সুমিষ্ট হয় এখানকার লিচু। আমার ফলের বাগানে চায়না টু , চায়না থ্রী, বোম্বাই ও দেশী জাতের লিচু গাছ আছে। এ বৎসর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে আমার বাগানের লিচু গাছগুলোতে ফুল ও মুকুল কম আসে। আর যাও কিছু গাছে এসে ছিল তা খরার কারণে ঝরে পড়ে । যার ফলে এ বৎসর ভালো একটা ফলন হয় নাই। তবে আমরা আশাবাদী আগামীতে ভালো ফলন হবে।
লিচু বেপারী মোঃ আজাদ জানান, প্রায় ১৮ বছর ধরে লিচু ব্যবসা কওে আসছি। প্রতিবছর এই এলাকায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বাগান রাখি। কুমিল্লা, নোয়াখালী, কোম্পানীগঞ্জ, কসবা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লিচু কিনতে পাইকাররা এখানে ছুটে আসেন। এসব পাইকাররা আমার কাছ থেকে হাজার হিসাবে লিচু কিনে নিয়ে নিয়ে যায়। ভালো মালের ভালো দাম পাওয়া যেত। তখন ২৪ থেকে ২৫ শ টাকা ধরে দরে তাদের কাছে মাল বিক্রি করতে পারতাম। এবার আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন তেমন একটা ভালো হয়নি। তাই দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, ভালো দাম না পাওয়ার কারণ হচ্ছে তীব্র খরার কারণে গাছেই অনেক লিচু ফেটে যাচ্ছে। আকারে ছোট হচ্ছে । অনেক লিচুতে কালো দাগ দেখা দিয়েছে।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ উপ-সহকারি কর্মকর্তা মোঃ বিল্লাল হোসেন খাঁন জানাান, এখানে বোম্বাই, পাটনা ও চায়না টু ও থ্রী জাতের লিচুর ভালো ফলন হয়। আমরা কৃষকদের সেচ ও পানি ছিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। যারা নিয়মিত লিচু গাছে সেচ ও পানি ছিটিয়ে দিয়েছে তাদের ফলন ভালো হয়েছে। যারা দেয়নি তাদের ফলন খারাপ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর লিচুর ফলন তেমন ভালো হয়নি। তাছাড়া লিচুর একটি বৈশিষ্ট হলো এক বছর ফলন ভালো হয়। আবার আরেক বছর কম হয়। তারপরও যা ফলন হয়েছে তা বিক্রি করে চাষীর খুশি হওয়ার কথা। তিনি আরো বলেন, এখানে দিন দিন লিচুর সৃজন হচ্ছে। কৃষক অনাবাদী উঁচু জমিতে কাঠ গাছের পরিবর্তে লিচুর চারা রোপন করছেন।