নোয়াখালী প্রতিনিধি :
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার উত্তরাংশের বৃহৎ বাণিজ্য কেন্দ্র আফাজিয়া বাজার নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা কল্পে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে নিজস্ব অর্থায়নে জিও ব্যাগ ফেলার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে উপজেলার বর্তমান নলচিরা স্টীমার ঘাট থেকে পশ্চিম দিকে ২০০ মিটার ও পূর্ব দিকে ৫০০ মিটার সর্বোমোট ৭০০ মিটার মেঘনা নদীর তীর এলাকায় এই জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল এক পরিপত্রে মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড ছাড়া সকল ধরনের উন্নয়ন কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় সরকার। এতে হাতিয়ার নদী ভাঙ্গন এলাকার মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়লে গত ৩০ এপ্রিল মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এক জরুরি সভা ডাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নিজেদের বাস্তভিটা, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান, কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় ব্যক্তি উদ্যোগে নিজেদের অর্থায়নে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমদকে সভাপতি, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মুহিউদ্দিন মুহিনকে সাধারণ সম্পাদক ও আজহার উদ্দিনকে কোষাধ্যক্ষ করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ সেচ্ছাসেবী সংগঠন নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
রোববার (০৯ মে) ওই কমিটির ব্যাংক একাউন্টে প্রায় ৩১ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার সেচ্ছা অনুদান জমা হয়েছে। প্রতিদিনই বিশাল অংকের টাকা জমা হচ্ছে ওই ব্যাংক একাউন্টে। দল মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীপেশার মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বলে জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহিউদ্দিন মুহিন।
সংগঠনের সভাপতি মহি উদ্দিন আহমদ জানান, হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ও তাঁর সহধর্মিনী বতর্মান এমপি আয়েশা ফেরদাউসের প্রচেষ্টায় হাতিয়ার নদী ভাঙন রোধে ২২ শত কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
করোনার মহামারিতে সরকার স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ ও কৃষি খাত ছাড়া সকল উন্নয়ন বরাদ্ধ স্থগিত রাখায় প্রকল্পটি কবে-কখন অনুমোদন হয় তা বলা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে হাতিয়ার বৃহৎ বাণিজ্য কেন্দ্র আফাজিয়া বাজার নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। তাই আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে আফাজিয়া বাজার ও মানুষের বাড়ি-ঘর রক্ষার্থে এ উদ্যোগ নিয়েছি।
সর্বমহলের বেশ সাড়াও পেয়েছি। হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সাহেব ৪ লক্ষ ফুট বালু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সংগঠনের পুঁজির সংকুলান না হলে অবশিষ্ট টাকাও তিনি বহন করবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শক্রমে জিও ব্যাগে বালু ভর্তির কাজ শুরু করেছি। ইতোপূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে নলচিরা ঘাট রক্ষায় মাত্র ৩০০ মিটার কাজ করেছে।
এতে ঘাট এলাকার নদীর তীর সংরক্ষণে সুফল পাওয়া গেছে। এ সুফলকে অনুসরণ করে আফাজিয়া বাজার ও হাতিয়ার মানুষের বাড়ি-ঘর রক্ষার্থে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।
হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহিউদ্দিন মুহিন বলেন, দলমত নির্বিশেষে আমরা হাতিয়ার সন্তান। হাতিয়া আমাদের জন্মভূমি, আমাদের ভিটে-মাটি রক্ষার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের নিতে হবে।
আমাদের এই চেষ্টার সুফল সারা হাতিয়ার জনগণ পাবে। দেশে এবং দেশের বাইরের সকল মানবিক বিত্তবানদের প্রতি আকুল আবেদন, হাতিয়া নদী ভাঙ্গন রোধের এই কাজে আপনারাও এগিয়ে আসুন।
কেউ যদি স্বেচ্চায় অনুদান প্রদান করতে চান, নিচের এই ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে পারেন। “হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন”, হিসাব নং-১৪৭৫৯০১০২৪৯৬৩, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড হাতিয়া শাখা। আমরা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সাথে আমাদের এই কার্যক্রম পরিচালনা করবো।
বাংলারদর্পন, নোয়াখালী।