হাফেজ অলি উল্লাহকে হত্যার ঘটনা আদালতে ১৬৪ ধারায় দু’আসামির জবানবন্দি

লামা (বান্দরবান) থেকে: ২২ এপ্রিল ২০২১ইং-
বান্দরবানের লামায় কিশোর হাফেজ অলি উল্লাহকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেপ্তার দুই আসামি মো. আরিফুল ইসলাম (১৭) ও মো. ফয়েজ আহমদ (৩৮)। ২১ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত লামার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের আদালতের খাসকামরায় জবানবন্দি দেয় এই দুই আসামি।

এ সময় তারা আদালতে জানায়, কিশোর হাফেজ অলি উল্লাহকে হত্যার আগেই পাহাড় চূঁড়ায় গর্তখুঁড়ে দুই অপহরণকারী। এরপর গাছের সাথে বেঁধে রাখা অলি উল্লাহকে অপহরণকারীদের একজনের কোমরের বেল্টখুলে তার দ্বারা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে খোঁড়া ওই গর্তেই লাশটি মাটি চাপা দেয়। শুধু তাই নয়, হত্যারপূর্বে ওই গাছের সাথে বেঁধে রাখা কিশোর হাফেজ অলি উল্লাহর ছবিতুলে স্বজনদের মোবাইল ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দাবীকৃত মুক্তিপনের এক লাখ টাকার জন্য চাপ দেয় তারা। তবে অলি উল্লাহর স্বজনরা মুক্তিপনের টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ মাটিচাপা দেয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আসামিদের আদালতে জবানবিন্দ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সন্ধ্য্রা পর থেকে একনাগারে রাত প্রায় এগারটা পর্যন্ত ১৬৪ ধারায় জবানবিন্দ দেয় গ্রেপ্তার এই দুই আসামি। এসময় তারা কিশোর হাফেজ মো. অলি উল্লাহকে জিম্মিকরে মুক্তিপন দাবী এবং হত্যারপর লাশগুমের অপরাধ স্বীকার করে আদালতের নিকট বিস্তারিত জবানবন্দি দিয়েছে। আদালত জবানন্দি শেষে আদালত এই দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এরআগে বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে কিশোর হাফেজ মৃত অলি উল্লাহর বড়ভাই রিয়াজ উদ্দিন সোহেল বাদী লামা থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় মৃতের মামাতো ভাই আরিফুল ইসলাম (১৭) ও মো. ফয়েজ আহমদ (৩৮) ছাড়াও অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। আসামীদের বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাদাবী, হত্যা এবং লাশগুমের পৃথক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

পুলিশ ও মৃতের স্বজনরা জানান, কিশোর হাফেজ অলি উল্লাহ নিখোঁজের দীর্ঘ ২৫দিন পর গত ২০ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দিনগত রাতে পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের শিংঝিরি নামক এলাকার পাহাড় চূঁড়া থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারআগে গ্রেপ্তার করা হয় স্বাধীনের দুই অপহরণকারী ও খুনি ফয়েজ এবং আরিফুলকে।

কিশোর হাফেজ মৃত মো. অলি উল্লাহ প্রকাশ স্বাধীন কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষুপুর গ্রামের মো. মোবারক হোসেনের ছেলে।

আর অপহরণ ও খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ফয়েজ আহমদ কুমিল্লার বুড়িচং থানার খারাতাইয়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। এবং মো. আরিফুল ইসলাম একই জেলার দেবিদ্বার থানার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষুপুর গ্রামের মৃত মো. আব্দুল গণি খাঁর ছেলে। নিহত অলি উল্লাহ স্বাধীন ও অপহরণকারী মো. আরিফুল ইসলাম সম্পর্কে ফুফাতো-মামাতো ভাই।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২২ মার্চ হাফেজ মো. অলি উল্লাহ স্বাধীনকে তার মামাতো ভাই মো, আরিফুল ইসলাম বেড়ানোর কথা বলে কৌশলে কুমিল্লা থেকে বান্দরবানের লামায় নিয়ে নিখোঁজ করে রাখে। এরমধ্যে অলি উল্লাহকে একটি পাহাড় চূঁড়ায় গাছের সাথে বেঁধে রাখা অবস্থায় ছবি তুলে এবং সেই ছবি স্বজনদের পাঠিয়ে ১ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবীকরে ফয়েজ ও আরিফুল। তবে স্বাধীনের মামাতো ভাই আরিফুল ও তার অপর সঙ্গি ফয়েজ নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বারবার চাঁদা চেয়েও না পেয়ে স্বাধীনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের শিংঝিরি নামক এলাকার পাহাড় চূঁড়ায় গর্তকরে লাশ মাটিতে পূতে ফেলে।

এদিকে স্বাধীনের কোনো খোঁজ না পাওয়া এবং অপহরণকারীদের মুক্তিপন দাবীর ঘটনায় গত ২৪ মার্চ কুমিল্লার বুড়িচং থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে নিখোঁজ অলি উল্লাহর পরিবার। সেই ডায়েরির সূত্রধরে মোবাইল ফোন ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে গত ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে লামায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের প্রথমেই রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বেত ঝিরির ইউনুচ মোল্লার বাড়ি গ্রেপ্তার করা হয় নিখোঁজ স্বাধীনের মামাতোভাই আরিফুল ইসলাম ও তার সহযোগি ফয়েজ আহমদকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *