‘ভাষা আন্দোলনের ইতিবৃত্ত’

হাসিব চৌধুরী :
ফেব্রুয়ারী, এমন একটি মাস যা বাঙ্গালী জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় ,তার গৈরব-উজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাসের কথা। বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে ২১শে ফেব্রুয়ারী শুধুই একটি তারিখ নয়, এটি এখন ইতিহাস, ঐতিহ্যের ,আবেগময় সংস্কৃতির প্রতীক। এই দিবসটি বাঙালির গন্ডি পেরিয়ে আজ বিশ্বের প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা হিসাবে পালিত হয়।

১৯৪৭ সালে, ভারত বিভাজনের সময়,পাকিস্তান নামে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে এক নূতন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় , এই পাকিস্তান রাষ্ট্রটি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল পশ্চিমাংশটি পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব অংশটি পর্ব পাকিস্তান ,যা পূর্ব বাংলা নামে পরিচিত ছিল। শুরুতেই ১২০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভাষা ,সংস্কৃতি ,অর্থনৈতিক ,সামাজিক, কৃষ্টি, পরিবেশ,সর্ব ক্ষেত্রেই বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় , এক মাত্র ধর্মীয় সাদৃশ্যই পাকিস্তান গঠনে মূল ভুমিকা পালন করে ।

শুধু মাত্র ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে যে , বাস্তব সম্মত হয়না , তাই প্রমাণিত হতে থাকে পাকিস্তান গঠনের শুরু থেকেই । ধর্ম প্রতিটা মানুষের ব্যাক্তিগত আধ্যাতিক আত্ম তুষ্টির জন্য গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করলেও ,সংস্কৃতি ,কৃষ্টি ,আচার-আচরণ আঞ্চলিক রীতি-নীতি একটি রাষ্ট্রের জন সাধারণকে একতাবদ্ধ রাখতে নিয়ামক হিসাবে কাজ করে।
অবাস্তব রাষ্ট্র ধারণার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা কি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সকল নাগরিকের। নব্য গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে শুরু থেকেই রাষ্ট্রীয় কার্যের সর্ব ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের আধিপত্য লক্ষ করা যায়। যদিও-বা , পাকিস্তান গঠনে পূর্ব পাকিস্তানি তথা বাঙালিদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি ।

শুরুতেই পশ্চিমারা আঘাত হানে বাংলা ভাষার উপর ,সর্ব প্রথম ১৯৪৭ সালের ১৮ ই মে, মজলিশে ইত্তেহাদুল মুসলেমীনের উদ্যোগে হায়দ্রাবাদে এক উর্দু সম্মেলন অনূষ্ঠিত হয় ,সেখানেই উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব করা হয়, এই প্রস্তাবে সমর্থন করে পাকিস্তান মুসলিমলীগ, অন্যদিকে আলীগড় ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ডঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও উক্ত প্রস্তাবের সঙ্গে একত্মতা পোষণ করেন ।
শুরু হতে থাকে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। অফিস ,আদালত, সরকারী সকল নথি পত্রে ,পোস্ট খাম ,পোস্ট কার্ড সর্বত্র উর্দু ভাষার প্রচলন শুরু করা হয় । উর্দু কে রাষ্ট্র ভাষা করার এই পরিকল্পিত পায়তারা করার সময় ১৯৪৭ সালের ১ লা সেপ্টেম্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তম্মুদনে মজলিশ গঠন করা হয় । এই তম্মুদনে মজলিশই ভাষা আন্দোলনের মূল সূত্রপাত ঘটায় । এ সংঘঠনটি অত্যন্ত অল্প সময়ে ছাত্র জনতার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে । ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ , কাজী মোতাহার হোসেন তিনটি প্রবন্ধ রচনা করেন , এই প্রবন্ধ সমূহ নিয়ে একটি পুস্তিকা বের করা হয় যার নাম ছিল ”পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা উর্দু না বাংলা ” ,পুস্তিকাটি জনতা ও ছাত্রদের মাঝে প্রচার করে তমুদ্দনে মজলিশ ।

ডঃ এনামুল হক ১৯৪৭ সালের নভেম্বর, মাসে বলেন যে ,”উর্দু বহিয়া আনিবে পাকিস্তানের মনে রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ,সংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মৃত্যু ”। একই সময় ডঃ মহম্মদ শহিদুল্লা ,বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য জোরালো প্রবন্ধ রচনা করেন। কে শুনে কার কথা ,পাকিস্তানী শাসকেরা কারো কোন কথার তোয়াক্কা না করে একতরফা ভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে ।
১৯৪৮ সালের জানুয়ারী মাসে, সকল রাজনৈতিক দলের সম্মন্নয়ে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে গঠন করা হয় ” রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ”।
১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারী, পাকিস্তানে প্রথম গণপরিষদ অধিবেশন বসে । এখানে প্রশ্ন আসে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা কি হবে ? ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ এসেমব্লি কর্তৃক ১৯৩৫ অনুযায়ী , ইংলিশ অর্থাৎ ইংরেজি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের অফিসিয়াল ভাষা ।

এই এক্ট সংশোধনের জন্য ,একটি সংশোধনী প্রস্তাব গণপরিষদে আনা হয় , এখানেই উর্দু কে ইংরেজির পাশাপাশি রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব করা হয় । কিন্তু গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্রনাথ দত্ত বাংলাকে ও এই সংশোধনীর আওতাভুক্ত করতে জোরালো প্রস্তাব করেন। প্রস্তাব গ্রহণ ও করা হয় বটে ,কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিমলীগ সদস্যগণ ”রাষ্ট্র ভাষা বাংলার” বিপক্ষে ভোট দেয়ার কারণে বাংলা বাতিল বলে গণ্য হয়। উর্দু ও ইংরেজি এই দুইটি ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে আইনে গ্রহণ করা হয় । মূলত , এখান থেকেই শুরু হয় প্রকৃত রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন । সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালি কোনো ভাবেই এই আইন মেনে নিতে পারেনি । ১১ ই মার্চ ১৯৪৮, গণপরিষদে গৃহীত আইনের প্রতিবাদে সারা দেশে পালিত হয় সর্ব প্রথম মাতৃ ভাষা দিবস । শুরু হয়ে গেল বিক্ষোব্দ মিছিল ,সমাবেশ সমগ্র বাংলা যেন প্রকম্পিত হয়ে উঠলো রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই স্লোগানে । এই দিন আন্দোলন রত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয় তখনকার ছাত্রনেতা সামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান ,আলী আহাদ সহ অনেক সাধারণ ছাত্রদের ।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্না ২১ শে মার্চ ১৯৪৮, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জনসভা করবেন বলে, তারিখ নিধারণ হয় । একই সময় ভাষার দাবিতে ছাত্র জনতার দুর্বার আন্দোলন শুরু হয়ে যায় । এমতবস্থায় ,পূর্ব বাংলার মুখ্য মন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন উপায়ন্ত না দেখে , পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে ছাত্রদের সাথে বৈঠকে বসেন, এবং ছাত্রদের ৮ দফা দাবির প্রতিটি দাবি মেনে নেন । ৮ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ছিল, গ্রেফতারকৃত সকল ছাত্রদের মুক্তি ও বাংলাকে রাষ্টভাষা হিসাবে মেনে নেয়া।খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের প্রতিটি দাবি মেনে নেন। দাবি পত্র মেনে নেয়ার পর ছাত্ররা সাময়িক ভাবে আন্দোলন স্থগিত করে , সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে থাকে ।

কিন্তু, প্রকৃত ঘটনা ঘটে ২১ শে মার্চ ১৯৪৮, মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্জন হলে ঘোষণা দিলেন উর্দু , উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা । যা ছিল, খাজা নাজিমুদ্দিন ও ছাত্রদের মধ্যে চুক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত । ছাত্ররা খাজা নাজিমুদ্দিনের চুক্তি ভঙ্গের বিষয়টি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। সাথে সাথে উপস্থিত ছাত্ররা বিক্ষপ্ত স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে বলতে থাকে, মানি-না ,মানবো-না , রাষ্ট্র- ভাষা, রাষ্ট্র-ভাষা, বাংলা চাই, বাংলা-চাই । রেসকোর্স ময়দানের পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে, জিন্নার সেই ঐতিহাসিক সভা পন্ড হয়ে যায় , এবং তিনি বক্তব্য সমাপ্ত না করে সভা মঞ্চ ত্যাগ করতে বাধ্য হন । এর পর অদম্য বাঙালি ছাত্র, জনতা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে ।

১৯৪৮ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর, মোহাম্মদ আলী জিন্নার মৃত্যু হয়। খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের গভর্নর নিযোক্ত হন । ২৩ শে জুন ১৯৪৯, ঐতিহাসিক আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ।
৬ ই ডিসেম্বর ১৯৫০, সালে ইস্ট বেঙ্গল ভাষা কমিটি বাংলা বর্ণমালা পরিত্যাগ করে আরবি হরফে বাংলা লিখার এক অভিনব হাস্যকর প্রস্তাব করে , এবং সেই সাথে উর্দু কে পূর্ব বাংলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২য়, ভাষা হিসাবে পাঠদানের পরামর্শ প্রদান করে। যা ছিল বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের প্রতি হাস্যকর অবজ্ঞা সূচক উপহাস।
ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ১৯৫২ সালের ২৬ শে জানুয়ারী, খাজা নাজিমুদ্দিন আবারো পল্টন ময়দানের এক জনসভায় উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে ঘোষণা করেন।

এরই প্রেক্ষিতে ৩১ শে জানুয়ারী ১৯৫২, সালে মৌলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্ব দলীয় ৪০ সদস্য বিশিষ্ট ”রাষ্ট্র ভাষা কর্মী পরিষদ” উক্ত, পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ”২১ ফেব্রুয়ারী ” কে ভাষা দিবস ঘোষণা করা হয় এবং এই দিবসকে চূড়ান্ত ভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষে ৪, ১১, ১৩ ই ফেব্রুয়ারী হরতাল কর্মসূচি প্রদান করা হয়। হরতাল কর্মসূচি সফল ভাবে সারা বাংলায় সর্বস্তরের জনতা কর্তৃক সর্ব সম্মত পালিত হয় ।

এই হরতালে অসংখ ছাত্র জনতা নির্বিচারে গ্রেফতার হয় ।
১৬ ই ফেব্রুয়ারী ১৯৫২, ভাষা আন্দোলনের সমস্ত বন্দিদের মুক্তি ও রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে তখনকার আওয়ামী মুসলিমলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ ও শেখ মুজিবুর রহমান, আমরণ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন । আন্দোলন স্তিমিত করে দেয়ার জন্য পাকিস্তান সরকার আবার ও অগণিত ছাত্র জনতাকে গ্রেফতার করে ।

২১ শে ফেব্রুয়ারীর, কর্মসূচি রুখে দেয়ার লক্ষে পাকিস্তান সরকার ২১ শে ফেব্রুয়ারী, থেকে পরবর্তী ৩০ দিন সর্ব প্রকার সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা, জারী করে । ছাত্র জনতা ১৪৪ ধারা, উপেক্ষা করে ২১ শে ফেব্রুয়ারী, সকাল থেকে ঢাকা ও ঢাকার আসে পাশের স্কুল কলেজ থেকে খন্ড খন্ড শোভাযাত্রা সহ ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের পুরানো কলা ভবনে প্রাঙ্গনে মিলিত হতে থাকে। ছাত্র নেতা গাজীউল হকের সভাপত্বিতে সভার কার্য শুরু হয় , একই সভায় আব্দুল মতিনের প্রস্তাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীনামা যে কোনো মূল্যে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রাদেশিক ভবনে পেশ করার কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

ভোর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেটের বাহিরে অসংখ পুলিশ ,ই পি আর, সশস্র অবস্থায় ছাত্রদের প্রতিহত করার জন্য মারমূখী অবস্থান গ্রহণ করে । ছাত্র ছাত্রীরা খন্ড খন্ড দলভুক্ত হয়ে শান্তি পূর্ণ মিছিল সহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এগুতে থাকে , সকলের মুখে একটি স্লোগান ,রাষ্ট্র-ভাষা ,রাষ্ট্র-ভাষা ,বাংলা-চাই ,বাংলা-চাই , রাষ্ট্র-ভাষা, রাষ্ট্র-ভাষা ,বাংলা-চাই , বাংলা-চাই এ সময় পুলিশ অতর্কিত ভাবে অনেক ছাত্রদের গ্রেফতার করতে থাকে ।

গ্রেফতারের খবর শুনে বিক্ষুপ্ত ছাত্ররা মিছিল সহকারে মেডিকেল কলেজের সামনে আসলে পুলিশ ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি চার্জ করতে থাকে , এক পর্যায়ে বিনা উস্কানিতে আকস্মিক গুলি চালাতে থাকে। সঙ্গে, সঙ্গে গুলিতে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় লুটিয়ে পরে নিহত হন মাস্টার্স এর ছাত্র বরকত , রফিক , সালাম ,জব্বার আহত হন ১৭ জন ,রক্তে লাল হয়ে যায় ঢাকার রাজপথ । এই বর্বরোচিত ঘটনার জন্য সারাদেশে পাকিস্তান সরকাররের প্রতি নিন্দার ঝড় বয়ে যায় । এরই প্রতিবাদে ২২/২৩ শে ফেব্রুয়ারী , সারাদেশে হরতাল পালিত হয় এবং এই হরতালের সময় পিকেটিং এ নিহত হন আরো অনেকে ,কিন্তু লাশ পাওয়া যায় মাত্র ৮ জনের ,অনেকের লাস গুম করে ফেলা হয়। আহত হন আরো অনেকে ।

এই হত্যা কান্ড ছাত্রদের আন্দোলন স্তব্ধ করতে পারেনি , লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি চলতে থাকে ,এই রক্ত মাখা বিরামহীন আন্দোলনের মুখে ১৯৫৬ সালের ২৩ শে মার্চ , অবিভক্ত পাকিস্তানের সংবিধান প্রণীত হয় , এই সংবিধানেই বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কে বাধ্য করা হয়। সফল হয় মাতৃ ভাষা, প্রতিষ্ঠা পায় বাংলা , কিন্তু এর জন্য ঢেলে দিতে হয়েছে অনেক তাজা প্রাণের রক্ত ।

এ আন্দোলন ছিল গণ মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন । এই ভাষা আন্দোলনই, মুক্তির বীজ বপন করে, দেখিয়ে দিয়েছিলো বাঙ্গালী একতাবদ্ধ , বাঙ্গালী অধিকার আদায়ে একনিষ্ঠ ,বাঙালি যে কোনো নেয্য অধিকার আদায়ে পিছ পা হতে জানে না । তারই ধারাবাহিকতায় শত আন্দোলন সংগ্রামের শেষে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি মুক্ত স্বাধীন সোনার বাংলা ,পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা।

হে অমর মহা প্রান , সালাম ,বরকত ,রফিক , জব্বার তোমাদেরই রক্তের বিনিময়ে বিশ্বময় ৬৫০০ মাতৃভাষা আজ সম্মানিত। তোমরা বেঁচে থাকবে হাজার বছর ধরে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে , তোমাদের এই মহান আত্ম ত্যাগ আজ ”আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস” হিসাবে সমগ্র বিশ্বে স্বীকৃত । বিশ্ব ব্যাপী দেশ, জাতি নির্বিশেষে ২১ শে ফেব্রুয়ারী ভাষা দিবস হিসাবে সম্মানের সাথে পালিত হয় । তোমাদের জন্য নির্মিত হাজার হাজার শহীদ মিনারে পুষ্প নিবেদন করে ,তোমাদেরই স্মরণে সমবেত কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ” আমার ভাইয়ের রক্তের রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি ‘
‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক ‘

লেখক, সাধারণ সম্পাদক , সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী সোসাইটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *