ভৈরবকে বাঁচাতে স্বাস্থ্য বন্ধু ডা. মিজানুর রহমান কবিরের আহবান | বাংলারদর্পণ

মুহাম্মদ কাইসার হামিদ, কিশোরগঞ্জ :
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের স্বাস্থ্য বন্ধু নামে পরিচিত ডা. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান কবির তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা সোনার এদেশে মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা ঐতিহ্যবাহী বন্দরনগরী ভৈরব বাজার একটি খ্যাতিমান বাণিজ্যিক নগরী।

কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া ও নরসিংদী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সাথে সংশ্লিষ্ট এ ব্যবসায়িক বন্দরে রয়েছে নানা রকমের পণ্য সামগ্রী আমদানি ও রপ্তানির প্রতিষ্ঠান ।

বন্দর নগরী ভৈরব একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকা। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এ জনপদে অনেক ধরনের মানুষের চলাচল ও বসবাস। আমাদের প্রাণের ভৈরবে অনেক উন্নত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিল্প-কারখানা, ব্যাংক-বীমা, মার্কেট, শপিং মল বিভিন্ন পণ্যের পাইকারী-খুচরা ব্যবসা কার্যক্রম দীর্ঘদিন যাবত যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে।

এছাড়াও ভৈরব ও তার পার্শ্ববর্তী উপজেলার জনসাধারণের জন্য মানব সেবার লক্ষ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য মহৎ উদ্দেশ্য ও ব্রত নিয়ে ভৈরবের ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার-এর মালিকপক্ষ ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের দোরগোড়ায় দিন দিন আরও আধুনিক চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে ভৈরবের ক্লিনিক মালিকপক্ষ স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, গত কয়েক বছর হলো বাণিজ্যিক নগরী এই ভৈরবের সাথে পার্শ্ববর্তী নরসিংদী জেলার রায়পুরা ও রায়পুরা চরাঞ্চল, বেলাব, মনোহরদী, শিবপুর এবং বি-বাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ-নবীনগর ও লালপুরের সাথে ভৈরবের যোগাযোগের অন্যতম বাহন সিএনজি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে ভৈরবের ব্যবসায়িক মহলে ব্যাপক ধ্বস নেমে আসে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একমাত্র বাহন সিএনজি বন্ধ থাকার কারণে ভৈরবের সাথে পার্শ্ববর্তী উপজেলার হাজার-হাজার কর্মজীবি, গরীব-দুঃখী, খেটে খাওয়া মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এতে অনেক গরীব-দুঃখী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা কার্যক্রম ও কেনা-কাটার প্রয়োজনে ভৈরবে যোগাযোগ করতে পার্শ্ববর্তী উপজেলার সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট ভোগ করার পাশাপাশি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সিএনজি বন্ধ থাকার কারণে অসুখ, বিসুখে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ভৈরবে আসতে পারছে না। ফলে ভৈরবের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে তারা দিন দিন বঞ্চিত হচ্ছেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুই হয় তাদের শেষ চিকিৎসা। এছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে কোন রোগীকে ভৈরবে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ভ্যান গাড়ি বাহনই হয় তাদের একমাত্র অবলম্বন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ভ্যান গাড়িতেই রোগীর মৃত্যু হয়। এমনকি সিএনজি না চলার কারণে অনেক প্রসূতি মায়েদের ডেলিভারী হয় পথিমধ্যে ভ্যান গাড়িতেই। এতে বাচ্চার অবস্থাও খুব খারাপ হয় এবং প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর ঝুঁকির আশংকাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সিএনজি বন্ধের কারণে পার্শ্ববর্তী উপজেলার জনসাধারণ ভৈরব থেকে উন্নত চিকিৎসা পেতে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি ভৈরবের সকল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকগুলোতেও দিন দিন রোগী শূন্য হয়ে পড়ছে। এতে ভৈরবের হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিকগুলোও ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এ সুযোগে রায়পুরা, বারৈচা, নারায়ণপুর মএবং আশুগঞ্জে নতুন নতুন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, আমাদের ভৈরব থেকে সার্জারী ডাক্তার ও এনেসথেসিয়া ডাক্তারগণ নিয়মিত ভৈরবের বাহিরের ওইসব হাসপাতালগুলোতে গিয়ে অপারেশন করতে হয়জ।

সিএনজি না চলার কারণে রায়পুরা, রায়পুরার চরাঞ্চল, বেলাব-এর জনসাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা সুবিধা, চিকিৎসা সুবিধা ও কেনা-কাটার সুবিধা নিতে এখন নরসিংদীমুখী হচ্ছেন এবং আশুগঞ্জ-নবীনগর-লালপুরের জনসাধারণও এসকল সুবিধা নিতে বি-বাড়িয়ামুখী হচ্ছেন। আমরা লক্ষ্য করছি যে, মহাসড়কে সিএনজি চলাচলের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও নীলকুঠি থেকে নারায়ণপুর-বারৈচা-মরজাল রোডে সিএনজি চলে আবার আশুগঞ্জ থেকে বি-বাড়িয়া পর্যন্ত সিএনজি চলে কিন্তু আমাদের ভৈরব থেকে কেন সিএনজি চলছেনা। এই প্রশ্ন আজ ভৈরবের জনসাধারণের মুখে মুখে।

ভৈরবের সাথে নরসিংদী, বি-বাড়িয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র বাহন সিএনজি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোর সাথে ভৈরবের সকল ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থবির হয়ে পড়েছে। এ কারণে ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র বন্দরনগরী ভৈরবের সকল প্রকার ব্যবসায় মন্দাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ভৈরবের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে পড়বে। “আইনের জন্য মানুষ না মানুষের জন্য আইন”-এই প্রশ্ন আমার আপনাদের নিকট। বিখ্যাত বন্দরনগরী ভৈরব-এর ঐতিহ্য বাণিজ্যিক নগরী ভৈরবকে বাঁচাতে ও ভৈরবের হাজার হাজার মানুষকে বাঁচাতে অবিলম্বে সিএনজি চালু করার বিকল্প আর কিছুই নেই।

ভৈরব চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর নির্বাচনের সময় চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর অন্যতম এজেন্ডা ছিলো সিএনজি চলাচলের পদক্ষেপ গ্রহণ। কিন্তু অদ্য পর্যন্ত চেম্বার্স অব কমার্সের সিএনজি চলাচলের জন্য কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়ে না। এদিকে রাত ৮টার পর ভৈরব থেকে আশুগঞ্জে যাওয়া-আসা করা প্রায় অসম্ভব পাশাপাশি রায়পুরা-বেলাব থেকেও ভৈরবে আসা-যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারণে বর্তমানে ভৈরব একটি বিচ্ছিন্ন নগরী হয়ে পড়েছে। যা আমাদের কাম্য ছিল না।

সুতরাং ভৈরবের সকল শ্রেণীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে অনতিবিলম্বে বিকল্প সড়ক হওয়ার আগ পর্যন্ত ভৈরবের সাথে পার্শ্ববর্তী উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র বাহন সিএনজি চলাচলের রোড পারমিট প্রদানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, ভৈরব চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতি সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *