পটুয়াখালীতে বীর মু্ক্তিযোদ্ধার উপর যুবলীগ নেতার হামলা : হতে পারেন বহিস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বীর মু্ক্তিযোদ্ধার উপর হামলা ও কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় স্ত্রীসহ জেল হাজতে রয়েছেন উপজেলার বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শিমুসহ ৫ জন। সারা জেলায় নিন্দা ও তিরস্কৃত করে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছে বীর মু্ক্তিযোদ্ধা পরিবার, রাজনৈতিক, সাংবাদিক ও স্থানীয় সচেতন মানুষজন।

তাদের দাবী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর অন্যতম শক্তিশালী অঙ্গসংগঠন ‘যুবলীগ ‘ এ এমন বিতর্কিত ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত সময়ে আজীবন মেয়াদে বহিষ্কার ও বিজ্ঞ আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেয়া হোক।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের একটি বড় অংশ চায় দেশের সূর্য সন্তানের উপর অস্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করার মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর যেন না ঘটতে পারে।এমন দুঃসাহসিক ন্যক্কারজনক অঘটন ঘটানোর আগে যেন এক লক্ষবার চিন্তা করে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী। সেজন্য এই ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই দিতে হবে।
তাদের ভাষ্যমতে , সারাদেশে যুবলীগ সহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে, তখন বিএনপি নেত্রীর স্বামীকে এই চাঁদাবাজির কারনে কেন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তে তিনদিনের বেশি লাগতে পারে? এ বিষয়েও কি স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে?
নির্ভরশীল একটি সূত্র থেকে দ্রুত শিমুকে বহিষ্কার করে দলকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য , পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সদস্যরা। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন পটুয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবদুল হালিম, কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা রাকিবুল আহসান, উপজেলা কমান্ডার বদিউর রহমান বন্টিন, চাকামাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির কেরামত ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক নাসির বিপ্লব।

মানববন্ধন শেষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বক্তারা চাঁদা না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের ওপর হামলাকারী ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শিমু ও তার স্ত্রীসহ ৫ আসামিকে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া বাকি আসামিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার এবং মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলাকারী স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
এর আগে , রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে শাহ আলম হাওলাদার তাঁর মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ ইটভাটার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। এ সময় সন্ত্রাসীরা রামদা দিয়ে তাঁকে কোপায়। সন্ত্রাসীদের রামদার কোপে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। সন্ত্রাসীরা লাঠি দিয়েও তাঁকে বেধড়ক পেটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান।

সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ও মারধর করে ফেলে রেখে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন আহত শাহ আলম হাওলাদারকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পাশের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে তাঁকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। শাহ আলম হাওলাদার এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন।
এরপর, গ্রেপ্তার পাঁচ আসামিকে উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শোভন শাহরিয়ারের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আকলিমা বেগম বাদী হয়ে গতকাল রাতেই কলাপাড়া থানায় একটি মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলা দায়েরের পর রাতেই পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়। গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রাম থেকে প্রধান আসামি টিয়াখালী ইউপির চেয়ারম্যান সৈয়দ মশিউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সাবেক ইউপি সদস্য খাদিজা আক্তার এলিজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অপর তিন আসামি নেছার হাওলাদার, নাঈম ও ইমরান গাজীকে রাতের বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আহত শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে ও আমতলী উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবু সালেহ বলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর ইটভাটার ব্যবসা রয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আমার বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। চাঁদা না দিলে ব্যবসা করতে পারবে না বলে হুমকি দেয় ওই সন্ত্রাসীরা। এর পেছনে রয়েছেন টিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান শিমু মিরা ও তাঁর স্ত্রী এলিজা।’ তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি রেহাই পেলেন না। এ দুঃখ কার কাছে বলব?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *