ফেনী জেলা পরিষদ নির্বাচন || সদরের এমপির আশীর্বাদ আদায়ে ব্যস্ত প্রার্থীরা

বাংলার দর্পন ডেস্কঃ
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০১৬।
আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেনীতে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদেরই এ নিয়ে বেশি উৎসাহ। তাদের ধারণা, যে কোনো মূল্যে ফেনী-২ আসনের এমপির কাছ থেকে দলের টিকিট পেলেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হতে তাদের আর কোনো বাধা থাকবে না। তাই এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর আশীর্বাদ আদায়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। অন্যদিকে দলের সভানেত্রীর আশীর্বাদ আদায়ে শুক্রবার রাতে ’৯৬-র তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম আজারুল হক আরজু কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎ শেষে তাদের নির্দেশে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে আবেদন জমা দিয়েছেন। এদিকে অব্যাহত হুমকি, হামলা ও মামলার চাপে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিএনপি। একই ভূমিকায় রয়েছে জামায়াতও। সব কিছু ঠিক থাকলে ২৮ ডিসেম্বর ফেনীর উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ৬৫৪ জন জনপ্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মাধ্যমে ১ জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন মহিলা সদস্য আগামী ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। আগামী জেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান প্রশাসক আজিজ আহম্মদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামান, খায়রুল বাশার তপন চেয়ারম্যন পদে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। কয়েকদিন থেকে নতুন করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আক্রাম হোসেন হুমায়নের নামও আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে। এছাড়াও দল থেকে সমর্থন আদায় করতে সাধারণ সদস্য ও মহিলা সদস্য পদের জন্য অনেকেই গোপনে-প্রকাশ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর কাছ থেকে দলের টিকিট নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে সবক’টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হলেও জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না বলে জানা গেছে। ফেনীতে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪৩টি। প্রতিটি ইউপিতে গড়ে ১৩ জন করে ৫৫৯ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। অন্যদিকে ফেনীতে ৬ উপজেলায় ৩ জন করে ১৮ জন, ৫টি পৌরসভায় মেয়র, কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর রয়েছেন ৭৭ জন। এ তিন স্তরের ভোটারদের সবাই নিজাম উদ্দিন হাজারীর একান্ত অনুসারী বলে দলীয় প্রার্থী তার আশীর্বাদ পেলেই সুনিশ্চিত বিজয়। তাই সব সম্ভাব্য প্রার্থী তার দিকে তাকিয়ে আছেন। নিয়ম মোতাবেক কোনো জনপ্রতিনিধি জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে বর্তমান প্রতিনিধিত্ব থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে পারবেন। এর আগে ফেনীর প্রায় সবক’টি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতদের মধ্যে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিগত নির্বাচনগুলোয় বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, অস্ত্রধারী বহিরাগতদের দিয়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মামলা-হামলার ভয়ে বিএনপি প্রার্থী সংকটের মুখে পড়ে। ফলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া ব্যক্তি অভিষিক্ত হবেন এ পদে। নির্বাচনে প্রার্থিতার ব্যাপারে বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক আজিজ আহমদ চৌধুরী জানান, দল থেকে আমাকে নির্বাচন করতে বললে আবার প্রার্থী হব। তবে দলের মনোনয়ন আদায় করতে চেষ্টা চলছে। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান জানান, তিনিসহ ৬ জন সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রে তাদের জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়েছেন। সিনিয়র সহ-সভাপতি আইনজীবী আক্রামুজ্জামান বলেন, দীর্ঘসময় থেকে আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। কখনও কিছু চাইনি এবং পাইনি। এবার চাইতে এসেছি। আশা করি, দল আমার আবেদনটি বিবেচনায় রাখবে। ফেনী জেলা কমিটির আরেক সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার তপন বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে দল তাকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করলে একপর্যায়ে দল তার মনোনয়ন ফিরিয়ে নেয়। দলের প্রতি সম্মান রেখে তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়ে ওই আসনটি জাসদকে ছেড়ে দেন। এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তবে প্রত্যাশিত প্রার্থীদের অভিযোগ, গত সময় ফেনী জেলা পরিষদ জনগণের কল্যাণকর কোনো কর্মকাণ্ড দেখাতে পারেনি। প্রশাসকের বিরুদ্ধে পরিষদের কর্মকর্তা ও কার্মচারীরা চরম অসন্তোষ এবং তারা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন। এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহের জানান, এরই মধ্যে ফেনীতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাণ্ড মঞ্চস্থ হয়েছে। এতে এ সরকারের সময়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপদ কাঁধে নেবে না বলে আমার বিশ্বাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *