রিজেন্ট শাহেদ এখন কোথায় -বাংলারদর্পণ

প্রতিবেদক :
রিজেন্ট হাসপাতালে র‍্যাবের অভিযানের চারদিন পরেও মো. শাহেদ ওরফে শাহেদ করিমকে গ্রেফতার হননি। শুক্রবার (১০ জুলাই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‌‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে খুঁজে বের করবে। তবে তারও উচিত আত্মসমর্পণ করা। শাহেদকে ধরতে র‌্যাব-পুলিশ খুঁজছে। আশা করি, শিগগিরই তা জানাতে পারব।’

এর আগে বৃহস্পতিবার গুঞ্জন উঠে শাহেদ সাতক্ষীরার হঠাৎগঞ্জ দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই গুঞ্জন কতটুকু সত্য, তা জানা যায়নি।

তবে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ সাংবাদমাধ্যমকে বলেন, যেকোনো মুহূর্তে শাহেদ করিম ধরা পড়বেন। তিনি সীমান্ত পেরিয়ে গেছেন, এমন কোনো খবর এখনো তাদের কাছে নেই। তিনি যেন পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, শুক্রবার বাবা সিরাজুল করিম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও পরিবারের সঙ্গে সে কোনো যোগাযোগ করেনি।

গত ৪ জুলাই অসুস্থ বাবাকে ইউনিভার্সেল মেডিকেলে ভর্তি করেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ। ভর্তি করার সময় শাহেদ দাবি করেন, তার বাবা সিরাজুল ইসলামের কোভিড-১৯ সংক্রমণ নেই। তবে পরে পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হয়।

হাসপাতালে ভর্তির পর প্রথম দুইদিন শাহেদ বাবাকে দেখতে গেলেও রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর থেকে আর যাননি। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যান তার বাবা।

পরে শুক্রবার (১০ জুলাই) সকালে তার বাবাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে সেখানে ছিলেন না শাহেদ। ছিলেন না শাহেদের স্ত্রী কিংবা কাছের স্বজনরাও। শাহেদের স্ত্রী রিমি বলেন, যতটুকু করা আমার পক্ষে সম্ভব ততটুকুই করেছি। তাকে দাফন করা হয়েছে সকালে। শাহেদ শুধু প্রতারণা করেই ক্ষান্ত হননি। রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির নানা অভিযোগ।

শাহেদের সাবেক এক নারী সহকর্মী বলেন, অনেক রকমের মেয়েরা আসতো। স্যারের রুমে মেয়েদের নিয়ে মারতো। আমি তার খারাপ চরিত্র দেখার পরেই চলে আসি। শাহেদের অনেক সহকর্মী এই ঘটনায় গ্রেফতার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে এই প্রতারক। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। বলছেন তার সব কিছু সিল করে দেয়া হচ্ছে। আমি তাকে বলে দিয়েছি যে তিনি কোনো খারাপ কাজ করেছেন দেখেই এগুলো ধরছে। তিনি আবার আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, তিনি এখন কি করবেন। আমি বলেছি, কোর্টে গিয়ে যা বলার আছে বলুন।

করোনার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ায় গতকাল মঙ্গলবার (৭ জুলাই) রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পরপরই রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. শাহেদকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা (মামলা নম্বর- ৫) করে র‌্যাব। এর মধ্যে আটজন গ্রেফতার রয়েছেন। ওই মামলায় শাহেদসহ নয়জনকে পলাতক হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য, শাহেদের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় ২টি, বরিশালে ১টি, উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে প্রতারণার মামলায় তিনি একবার গ্রেফতারও করা হয়েছিলেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। মঙ্গলবার বিকেলেই উত্তরায় রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় সিলগালা করে দেয় র‌্যাব।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের ওই দুই শাখায় গত মার্চ থেকে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সোমবার র‌্যাবের অভিযানে উত্তরা শাখায় (মূল শাখা) বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। হাসপাতাল দুটি রোগীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করছে। অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া, লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ আরও অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ‘মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবটোরিস রেজুলেশন অরডিন্যান্স-১৯৮২’ অনুযায়ী এই হাসপাতালের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলো।

অনিয়মের অভিযোগে সোমবার দুপুর ২টা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল প্রথমে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। সেখান থেকে আটজনকে আটকের পর র‌্যাবের দলটি মিরপুরে রিজেন্টের অন্য শাখায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় হাসপাতালটির ব্যবস্থাপকসহ আটজনকে আটক করা হয়।

৮ জুলাই একই মামলায় গ্রেপ্তার আরও সাত আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। আসামিরা এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।

রিমান্ডে থাকা ওই সাত আসামি হলেন রিজেন্ট গ্রুপের বেতনভুক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁরা হলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব, হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব হাসান, হেলথ টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প প্রশাসক রাকিবুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বণিক, রিজেন্ট গ্রুপের গাড়িচালক আবদুস সালাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রশীদ খান। বাংলারদর্পণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *