প্রতিবেদক :
করোনাভাইরাস শুধু মানুষের শরীরেই সংক্রমণ ঘটাচ্ছে না; এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বৈশ্বিক অর্থনীতিও। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারগুলোতে। বৈশ্বিক জিডিপি চলতি বছর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
সবচেয়ে নেতিবাচক বিষয় হচ্ছে, করোনাভাইরাস মূলত অর্থনীতির উৎপাদনব্যবস্থার গোড়াতেই আঘাত হেনেছে। শ্রম, পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ, সেবা খাত ইত্যাদি সবকিছুই এর দ্বারা আক্রান্ত। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিল্প পর্যটন করোনাভাইরাসের প্রভাবে থমকে গেছে।
কক্সবাজার আমাদের পর্যটন নগরী। বহু দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদচারণা এখানে। এখন পর্যটন মৌসুম। রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থাও করা হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। তাই এ জেলায় অধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও নিতে হবে।
বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এখনই তার বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। জনসচেতনতা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। মিডিয়া এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। ইমাম-পুরোহিতরা এ ভাইরাস নিয়ে বক্তব্য দিতে পারেন।
শিক্ষকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। এসব বিষয়েই আলোচনা করতে হবে। এতে করে সাধারণ মানুষ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উৎসাহিত হবে।
প্রায় প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রোগের মহামারী রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি। জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের ফল এটি। আচমকা এসব রোগ এসে বিশ্বব্যাপী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উন্নত বিশ্বও এসব রোগের মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকা বা দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাকি বিশ্ব থেকে পিছিয়ে পড়ছে। বহু প্রাণহানিও ঘটছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বব্যাপী ১ লাখেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। এ কারণে পর্যটন শিল্পসংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যেসব ক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের দর্শনার্থীর অংশগ্রহণ দেখা যায়।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে সারা পৃথিবীতে পর্যটকদের ভ্রমণ বাতিল এবং বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ খাতে। জার্মানির বার্লিনে এ বছর বার্ষিক পর্যটন ইভেন্ট ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম এক্সচেঞ্জ’ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাইরাসের কারণে তা বাতিল হয়ে গেছে।
আমরা বাঙালি মুনাফাটাই বেশি বুঝি। সেক্ষেত্রে মানবতা বা সেবাকে গৌণ হিসবে বিচার করি। ইতিমধ্যে মাস্ক ও ক্লিনারসামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। অথচ ভুটান ওষুধ ফ্রিতে দেয়ার ঘোষণা করেছে। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী নিজেই তদারক করছেন বলে গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি। কিন্তু বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি কমাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
পর্যটন ক্ষেত্রে যেসব স্থানে লোকসমাগম বেশি হয়, সেসব স্থানে লোকসমাগম সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ‘প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’।
করোনা ঠেকাতে সৌদি সরকার ওমরা বন্ধ করে দিয়েছে, সংক্রমণের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধির কারণে ভুটান ও ভারতের সিকিমে পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সাময়িকভাবে। পর্যটন বাংলাদেশে বিকাশমান একটি শিল্প, যা থেকে সরকার ভালো অঙ্কের রাজস্ব আয় করে থাকে। কাজেই এখন বাংলাদেশ সরকারেরও এ ব্যাপারে ভাবার সময় এসেছে। লোকসমাগমের স্থানগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।