ফটিকছড়ি প্রতিনিধি:-
ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের আশরাফাবাদ দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা শাহ আলম নঈমীকে (৬৭)
নামাজরত অবস্থায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। গুরুতর আহত পীর মাওলানা শাহ আলমকে প্রথমে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হয়, সেখান থেকে তাকে দ্রুত চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কারবালা টিলা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়,
সন্ধ্যায় মাওলানা শাহ আলম নঈমী প্রতিদিনের মতো কারবালাটিলাস্থ আশরাফাবাদ দরবার শরীফের মাদ্রাসায় ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করছিলেন। এ সময় ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত মসজিদে ঢুকে পিছন থেকে মাওলানা শাহ আলমকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এতে মাওলানা শাহ আলম মাটিতে লুঠে পড়েন। এতে আরো ৫-৭ জন আহত হন। মুসল্লিরা হামলাকারীদের ধাওয়া করে। পালানোর সময় এক শিবিরকর্মীকে আটক করে ভক্তরা। তার নাম মো. সালাউদ্দিন ওরফে সরোয়ার
(২৬)। সরোয়ার পাইন্দং ইউনিয়নের মিয়াজির বাড়ির নুর মোহাম্মদের পুত্র। খবর পেয়ে ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ মিয়া ও এস আই রিদুয়ান ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যান। তারা উত্তেজিত জনতা-ভক্ত-ছাত্র-শিক্ষকদের শান্ত করে আটক যুবককে ফটিকছড়ি থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ জানায় ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, হুজুরকে বেশ কিছুদিন যাবৎ জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-দমকি দিচ্ছিল। উল্লেখ্য,
আফরাফাবাদ দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা শাহ আলমের গ্রামের বাড়ি রাউজানের কচুখাইন গ্রামে। তিনি ২০০০ সাল থেকে শিক্ষকতা ছেড়ে পাইন্দং কারবালা টিলা এলাকায় জমি কিনে আলিয়া মাদ্রাসা, হেফজখানা ও এতিম খানা প্রতিষ্ঠা করেন। আনোয়ারা, পটিয়া,
বাঁশখালী ও কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকায় উনার প্রতিষ্টিত অনেক মাদ্রাসা রয়েছে।
এদিকে পীর হাফেজ মাওলানা মো. শাহ আলম নঈমীর ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার প্রতিবাদে মিছিলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এতে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে নুরুল্লাহ রায়হান খান (২৮) নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল রাত সাড়ে দশটার দিকে নগরীর চকবাজারস্থ মতি টাওয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে,
ছাত্রসেনার প্রতিবাদকে ছাত্র শিবিরের মিছিল ভেবে এ হামলা চালিয়েছে চকবাজার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আহত অন্যরা হলেন- নগর (উত্তর)
ছাত্রসেনার সহ-সাধারণ সম্পাদক মাসুমুর রশিদ, ছৈয়দ আবু আজিম, ফরিদুল ইসলাম,
মিজানুর রহমান, ওসমান গণি, ছৈয়দ মো.
খোবাইদ এবং রিদওয়ান পাপ্পু প্রমুখ।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)
মোহাম্মদ নুরুল হুদা আজাদীকে বলেন,
ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা ফটিকছড়ির পীর সাহেবের উপর হামলা প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে আসলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের শিবির ভেবে হামলা চালায়। পরে তারা ভুল বুঝতে পারে। তবে আহতদের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব গেইট থেকে ছাত্রসেনার শতাধিক নেতাকর্মী প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে চকবাজারে গিয়ে সমাবেশ করে। এ সময় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবুল আসওয়াদ জোবাইর মোনাজাত করেন। মোনাজাত শেষে কর্মীরা তাকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার পর নেতাকর্মীরা মতি টাওয়ারের সামনে আসলে অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ১৫-২০ জনের একটি দল। এ সময় তারা লাঠি ও ধারালো লোহার পাত দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এ ঘটনায় অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।
ফটিকছড়িতে মসজিদে ঢুকে পীরকে ছুরিকাঘাত ।। শিবিরকর্মী আটক, উত্তেজনা ।। নগরীতে প্রতিবাদ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৮
