আমার শ্রদ্ধেয় বাবা

১৭.০৬.১৯৫৬ -০৬.০২.২০১৯ পর্যন্ত এক কর্মময় জীবনের অধিকারী। দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন সোনাগাজী মোহাম্মদ সাবের পাইলট হাই স্কুলে। ১৯৭১ সালে সোনাগাজী মোহাম্মদ সাবের পাইলট হাই স্কুলের এস এস সি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের ডামাডোলে আর পরীক্ষা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বিশেষ পরীক্ষা হলেও তিনি আর পরীক্ষা দিতে পারেন নি নানা কারণে। অবশ্য পরবর্তীতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন।

পরিবারের বড় ছেলে। জীবিকার তাকিদে ঢাকা-চট্টগ্রাম ঘুরেছেন কয়েক বছর। এরপর নিজের প্রিয় স্কুলেই খুব স্বল্প আয়ের চাকুরিতে প্রবেশ করে অনাড়ম্বর ভাবে কাটিয়েছেন পেশাগত জীবন। ১৯৭৪ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করে অবসর নিয়েছেন। ৪২ বছর ১৬ দিন চাকুরি করেছেন। সোনাগাজী হাই স্কুলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে তাঁর হাজারো স্মৃতি।

ব্যক্তিগত জীবনে খুবই আশাবাদী একজন মানুষ ছিলেন। সহজ-সরল জীবন-যাপন করতে ভালোবাসতেন। প্রচন্ড আত্নসম্মানবোধ নিয়ে পথ চলতেন। মানুষের সাথে খুবই ভালো ব্যবহার করতেন। উপকারের চেষ্টা করতেন যথাসাধ্য।পারতপক্ষে কারো ক্ষতি করার মানসিকতা কখনোই দেখিনি। নিজ থেকে ডেকে নিয়ে তরুণদের পরামর্শ দিতেন। এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতেন। সদালাপী, আড্ডাপ্রিয় মানুষ ছিলেন।

কাজ করতেন নিজের মতো করে। পরিশ্রম প্রিয় মানুষ। ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ কথাটি আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দিতেন। অপচয়, অপব্যবহার খুবই অপছন্দনীয় ছিল। সত্য বলতেন অকপটে।

বই পড়তেন। পত্রিকা পড়তেন। সম-সাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে ভালো জানাশোনা ছিল। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের ইতিহাসকে নির্মহ দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করতে পারতেন। অন্যায়, অত্যাচার ও স্বৈরাচার ছিল খুবই অপছন্দনীয়। ধর্ম ছিল মজ্জাগত। বিশ্বাসী মুসলিম। কিন্তু এই উপমহাদেশে ব্রিটিশদের তৈরি সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থার শিকার হয়ে এদেশের গড়পড়তা সাধারণ শিক্ষিতদের মতোই আনুষ্টানিকভাবে ধর্মকর্ম করতেন। পরবর্তীতে ধর্মের পথেই পড়াশুনা করেন এবং জীবনে ধারণ করেন।

১৯৭৯ সালে সমমাননা যুবক শ্রেণীকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘গ্রাম উন্নয়ন সমিতি’। নিজে সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। পাঞ্চায়েত কমিটি, মসজিদ-মক্তব কমিটির বাইরে এটাই সম্ভবত আমাদের সমাজের প্রথম সামাজিক সংগঠন। আরো যারা এই সংগঠনে ছিলেন তাদের মধ্যে সর্বজনাব আবদুর রাজ্জাক (ধনমিয়া), জামাল উদ্দিন( নূর উদ্দিন জামাল), আব্দুল মালেক, জেবাল হক, ওলি আহমদ, আজিজুল হক (মেস্তুরি), ফয়েজ আহমদ প্রমুখ। এই সমিতিই সংঘবদ্ধভাবে গ্রাম উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছিল। দায়িত্ব পালন করেছেন পাঞ্চায়েত কমিটিতেও। এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিবাবক প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

আমাদের প্রিয় প্রগতি সমাজ কল্যাণ সোসাইটির শুরু থেকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। কিছুদিন সোসাইটির নৈশ বিদ্যালয়ও পরিচালনা করেছেন।

আব্বুকে যারা চিনেন বাবার সাথে কোন স্মৃতি থাকলে স্মরণ করতে পারেন। মাঝে মাঝে স্মরণ করতেও ভালো লাগে। পৃথিবীতে তো আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু কারো মুখে বাবার কথা শুনলেও ভালো লাগে…!

লেখক : শরীয়ত উল্লাহ শরীফ। ছবিতে -লেখকের সাথে তার বাবা মোঃ ইদ্রিছ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *