একটি ডাকাতি মামলার তদন্ত চলাকালে সোনাগাজীতে ডাকাতি বন্ধ : গ্রেপ্তার ১২

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী:
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা তিন দিকে নদী বেষ্টিত । শীতকালে এখানে নিয়মিত ডাকাতির ঘটনা ঘটতো । ২০১৯ সালে জানুয়ারী থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ৭মাসে ১৬টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই মধ্যরাতে তত্ববধায়ক সরকারের সাবেক কৃষি উপদেষ্টা ড. সি.এস করিম’র গ্রামের বাড়ীতে ডাকাতি হয় ।

ওই ঘটনায় বজলুর রহমান চৌধূরী বাড়ীর কয়েকটি ঘরে মূল্যবান মালামাল লুট হয় এবং গৃহকর্তা নুর মোহাম্মদ আজাদ ওরপে বিপু চৌধূরীসহ ৩জনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। একদিন পর সোনাগাজী থানায় ৩০জন অজ্ঞাত আসামীর বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা দায়ের করেন বিপু চৌধুরী। উক্ত মামলার তদন্তের দায়ীত্ব পায় সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খালেদ দাইয়ান।

খালেদ দাইয়ান বাংলারদর্পনকে বলেন, পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবি সহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগীতা এবং সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যাবহারের মাধ্যমে ডাকাত দলনেতা চিহ্নিত করি। গত ১৬ অক্টোবর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সহযোগীতায় সেই দলনেতা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার ইকবাল হোসেন(৩২) কে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই রাতে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। ইকবালের বিরুদ্ধে ফেনী, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন থানায় ২১টি মামলা রয়েছে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার হয় তার(ইকবাল) প্রধান সহযোগী নুর উদ্দিন শামীম(২৭) । তার বিরুদ্ধে ৭টি ডাকাতি মামলা রয়েছে।

১৬৪ধারায় আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে শামীম ৭টি ডাকাতির ঘটনায় তাদের সংঘবদ্ধ দল জড়িত থাকার লোকহর্ষক বর্ননা দেয় এবং ডাকাত দলের সদস্যদের অবস্থানের কথা জানায়। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে তাদের দলের সদস্য নুর নবী হান্নান(২৪), ইসমাইল হোসেন খোকন(৩২) ও মো.শরীফ (২৬)কে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে। তারা তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

ওই ৪ জনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মীর হোসেন রাকিব (২৪), জাহিদ হোসেন রিপন(২১), মোহাম্মদ মামুন ওরফে গাদা মামুন(৩৪), মো. আফসার (২২), সজীব ওরফে তোতা (২৩), নুর নবী মামুন (২৬) ও শাওন (৩১ কে আটক করা হয়। এদের সকলের বিরুদ্ধেও একাধিক ডাকাতি ও অস্ত্র মামলা আছে। তিনি আরও বলেন, ধৃতদের কাছ থেকে চোরাইকৃত মালামাল ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ও সরঞ্জামাধি উদ্ধার করা হয়।

ডাকাতি বন্ধে পুলিশি ভূমিকার প্রশংসা করে সোনাগাজী উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের আহবায়ক ডা. গোলাম মাওলা বাংলারদর্পনকে বলেন, উপকুলীয় এলাকা হওয়ায় নিয়মিত চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটতো । বর্তমানে পুলিশের পেশাদারীত্বের ভূমিকায় তা নিয়ন্ত্রনে এসেছে।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ বাংলারদর্পনকে বলেন, শীতের মৌসমে এখানে স্থানীয় ডাকাতদের সহযোগীতায় বহিরাগত ডাকাতরাও ডাকাতি করতো । শীতের মৌসমে ডাকাত নিয়ন্ত্রনে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনকে। এবার মৌসমের শুরুতে স্থানীয় ডাকাত দল নেতা ক্রসফায়ারে নিহত হয় এবং উপজেলার ছাড়াইতকান্দি গ্রামে সাবেক উপদেষ্টার বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ১২জন আটক হওয়ার পর সোনাগাজী থানা এলাকায় ডাকাতি বন্ধ হয়েছে।আশাকরি এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ডাকাতি একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। পুলিশ সব ধরনের ব্যাবস্থা নেবে।

#বাংলারদর্পন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *