ফেনী প্রতিনিধিঃ
নিখোঁজের দুই মাস পর শিশুপুত্র অন্তর(১০)কে বুকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা বাবা-মা। অন্তরের বাড়ি লক্ষিপুর জেলার কমল নগর থানার চর পাগলা গ্রামে। পিতা খুরশিদ আলম পেশায় একজন রিক্সা চালক। মাতা বিবি কুলছুম গৃহীনি। ছয় জনের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী খুরশিদ। অভাবের সংসার হওয়ায় ছেলে-মেয়েদের কে তেমন লেখা পড়া করাতে না পরেননি। তারপরও শিশু পুত্র অন্তরকে ভর্তি করান গ্রামের একটি কওমী মাদরাসায়। সেখানে লেখাপড়া করা অবস্থায় বাড়ি যাওয়ার নাম বলে গত দুই মাস আগে নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোক জন অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তার সন্ধান পাননি।
অবশেষে নিখোঁজ শিশুপুত্র অন্তরের সন্ধানের খবর পেয়ে পিতা খুরশিদ আলম ও মাতা বিবি কুলছুম কমল নগর থেকে ছুটে আসেন সোনাগাজী মডেল থানায়। থানায় এসে অন্তর কে দেখে আনন্দে উচ্চাসিত হয়ে তাকে বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে কেদে পেলল মা-বাবা। জানা যায়, গত দুই মাস আগের অন্তর ফেনীর জেল গেইট এলাকায় বেশ কয়েকদিন ঘুরাঘুরি করছে দেখে ইউরো ফ্লাওয়ার টাচ দোকানের মালিক জামশেদ আলম সহ কয়েকজন ব্যবসায়ী তাকে ডেকে নাম পরিচয় জিজ্ঞাসা করে। ছেলেটি বলে তার নাম অন্তর। বাড়ির ঠিকানা জানেনা। বাসে করে ফেনীতে এসেছে। তার বাবা অসুস্থ্য। মা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। নানার বাড়িতে থাকত। মামি সব সময় তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে মারধর করে। তাই সে চলে এসেছে। তার কোন থাকার জায়গা নেই। তখন তারা ছেলেটিকে দোকানে নিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে দিয়ে খাবার খেতে দেয়। খাবার শেষে বলা হয় তুমি এখন কোথায় যাইবা। সে যাবেনা এখানে থাকার কথা বলে। তখন উপস্থিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছেলেটিকে জামশেদ আলম রাখার কথা বলে। সবার সম্মতিতে ফুল ব্যবসায়ী জামশেদ আলম তাকে সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে ছেলেটি বড় হতে থাকে। গত সোমবার সকালে গ্রামের ছেলেদের সাথে অন্তর সাইকেল ভাড়া করে সোনাগাজী পৌর শহর হয়ে ডাকবাংলাতে চলে যায়। সেখানে তার সাইকেলটির চাকা ফেটে গেলে সে সাইকেল ধরে কাঁদতে থাকে। এসময় কয়েকজন লোক তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে কোন জবাব দিতে না পারায় তারা তাকে থানা পুলিশে দিয়ে দেয়। পুলিশ জিজ্ঞাসা করলে ছেলেটি তার বাড়ির ঠিকানা বলে। তখন পুলিশ তার এলাকার চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তার মাতা-পিতাকে খবর দেয়।খবর পেয়ে তারা মঙ্গলবার দুপুরে সোনাগাজী থানায় আসে।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: হুমায়ুন কবির বলেন, নিখোঁজ অন্তর আমাদেরকে তার মা-বাবা বেঁচে নেই বলে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। আমাদের সংবাদের পর তার মা-বাবা থানায় আসায় কারো কোন আপত্তি না থাকায় অন্তরকে সকলের উপস্থিতিতে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।